Wasim Akram

বিদেশে খুনের হুমকি পেয়েছিলেন ২০ বছরের আক্রম, আততায়ীর সামনে ঠেলে দিয়েছিলেন ইমরান!

বিদেশে খেলতে গিয়ে খুনের হুমকি পেয়েছিলেন ২০ বছরের আক্রম। অধিনায়ক ইমরান প্রথমে আস্বস্ত করলেও পরে তাঁকে আততায়ীর মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:০১
Share:

ওয়াসিম আক্রম। —ফাইল চিত্র।

প্রথম আলাপের সময় ওয়াসিম আক্রমকে চিনতেনই না তাঁর অস্ট্রেলীয় স্ত্রী শানিরা। আক্রম যে জনপ্রিয় খেলোয়াড়, তাও বিশ্বাস করতে চাননি। যদিও শানিরাকে হয়তো বিয়ে করা হত না আক্রমের। আগেই তিনি খুন হয়ে যেতে পারতেন। আক্রমকে খুনের হুমকি দিয়েছিলেন আর এক ক্রিকেটার। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নানা অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক।

Advertisement

ওয়েস্ট ইন্ডিজ় সফরে গিয়ে খুনের হুমকি পেয়েছিলেন আক্রম। প্রাক্তন অলরাউন্ডার বলেছেন, ‘‘এক জন তরুণ জোরে বোলার সব সময় চায় পূর্ণ গতিতে বল করতে। ১৯৯৮ সালের বার্বাডোজ টেস্টেও জোরে বল করছিলাম। ব্যাটার ছিল ভিভ রিচার্ডস। দিনের শেষ ওভারে রিচার্ডসকে একটা বাউন্সার দিয়েছিলাম। বল ওর টুপিতে লেগেছিল। টুপি খুলে যায়। প্রচন্ড রেগে গিয়ে রিচার্ডস আমাকে বলেছিল, ‘আমাকে বাধ্য কর না। তোমাকে খুন করে ফেলব আমি।’ কথাটা শুনে মিড অনে ছুটে গিয়েছিলাম অধিনায়ক ইমরান খানের কাছে। বলেছিলাম, রিচার্ডস আমাকে হুমকি দিচ্ছে। ইমরান বলেছিল, ‘কিচ্ছু হবে না। আমি তো আছি। যাও তুমি রিচার্ডসকে আরও একটা বাউন্সার কর।’ সেই মতো আমি আবার একটা বাউন্সার দিয়েছিলাম। ওভারের শেষ বলটা রিচার্ডসের ব্যাটের কানায় লেগে উইকেট ভেঙে দিয়েছিল। খুব আনন্দ হয়েছিল আমার। তখন মাত্র দুটো খারাপ শব্দ জানতাম। রিচার্ডসের সামনে গিয়ে নাচতে নাচতে ওই দুটো শব্দই ওকে বলেছিলাম।’’

কী হয়েছিল তার পর? রিচার্ডস কিছু বলেননি? আক্রম বলেছেন, ‘‘তখন আমি বেশ ছোট। কত আর বয়স হবে। ২০ মতো। খেলা শেষ হওয়ার পর সাজঘরে গিয়ে জুতো খুলছিলাম। তখন এক জন সহায়ক এসে আমাকে ডাকেন। বলেন, সাজঘরের বাইরে আমাকে কেউ ডাকছেন। দরজার কাছে গিয়ে দেখি, বাইরে রিচার্ডস দাঁড়িয়ে রয়েছে খালি গায়ে। হাতে একটা ব্যাট। তখনও প্যাড খোলেনি। ওই অবস্থায় ওকে দেখে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, আমাকে সত্যিই মেরে ফেলবে। ভয়ে দৌড়ে চলে যাই ইমরান ভাইয়ের কাছে। অধিনায়ককে বলেছিলাম, বাইরে রিচার্ডস দাঁড়িয়ে আছে। লড়াই করতে এসেছে। ইমরান ভাই আমাকে বলে, ‘যাও লড়াই কর। এটা তোমার লড়াই।’ তার পর রিচার্ডস অবশ্য আর কিছু করেননি। বরং তাঁর সাহসী বোলিংয়ের প্রশংসা করেছিলেন। তাতে ভয় কেটে গিয়েছিল আক্রমেরও।

Advertisement

ওয়েস্ট ইন্ডিজ় সফরের মজার ঘটনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনের একটি মজার কথাও বলেছেন তিনি। স্ত্রী শানিরার প্রথম সাক্ষাতের দিনের কথা বলেছেন আক্রম। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রথম আলাপের সময় ওর বয়স ছিল ২৬-২৭ মতো। এক বন্ধুর বার্বিকিউতে প্রথম দেখা হয়েছিল। আমার সম্পর্কে কিছুই জানত না। ওকে বলেছিলাম, ‘দেশে কিন্তু আমার বেশ পরিচিতি রয়েছে।’’ শুনে শানিরা বলেছিল, ‘তাই নাকি।’’’

তা হলে আপনার সম্পর্কে প্রথম ধারণা তৈরি হল কী করে? আক্রম বলেছেন, ‘‘ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে ওর ধারণা কিছুটা বদলায়। বাড়ি ফেরার সময় শানিরাকে ট্যাক্সিতে তুলতে গিয়েছিলাম। ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের অধিকাংশ চালক পাকিস্তানি বা ভারতীয় ছিল। তাঁরা আমাকে চিনতে পেরে কাছে চলে এসেছিলেন। আমাকে ঘিরে ট্যাক্সি চালকদের উৎসাহ দেখে ও বোধহয় বুঝতে পেরেছিল, আমার কিছুট জনপ্রিয়তা রয়েছে। তার পর হেসেও ফেলেছিল।’’

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলার একটি মজার অভিজ্ঞতাও ভাগ করে নিয়েছেন আক্রম। ব্রিসবেনে একটি টেস্টের কথা বলেছেন প্রাক্তন অলরাউন্ডার। তিনি বলেছেন, ‘‘তখন আমি এখানকার তিন-চারটে খারাপ শব্দ জানতাম। গাব্বায় খেলা হচ্ছিল। ওখানকার কুখ্যাত স্ট্যান্ড বে ১৩-র দর্শকেরা প্রায় ৩০ মিনিট ধরে আমার নাম ধরে চিৎকার করছিলেন। মনে হয়েছিল আমার প্রশংসাই করছেন তাঁরা। পরে আমাদের অধিনায়ক বুঝিয়ে দেন তাঁরা আসলে আমাকে কী বলতে চাইছিলেন। অবশ্যই তাঁরা আমার সম্পর্কে ভাল কিছু বলছিলেন না।’’

ক্রিকেট এবং ব্যক্তিগত জীবনের নানা ঘটনার স্মৃতিচারণা করেছেন প্রাক্তন অলরাউন্ডার। বলেছেন, সব ক্ষেত্রেই সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা দরকার। ভয় পেলে সামনের পথ কঠিন হয়ে যায়। তা মাঠের মধ্যে এবং বাইরেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement