শতকের লগ্নে শত শতকের ভবিষ্যদ্বাণী
Ravi Shastri

Ravi Shastri: ইতিবাচক মানসিকতার জন্য বিরাটের পক্ষেই সচিনের রেকর্ড ভাঙা সম্ভব, বলছেন শাস্ত্রী

শততম টেস্টে কোহলির জন্য শাস্ত্রীয় বার্তা? ‘‘বলব, এই বিশেষ মুহূর্তটা উপভোগ করো। দারুণ ব্যাপার যে, বোর্ড পঞ্চাশ শতাংশ দর্শক আসার অনুমতি দিয়েছে মোহালিতে। না হলে একটা লজ্জা হয়ে থাকত।’’ তাঁর সেই বিখ্যাত ‘ওয়েন্ট লাইক আ ট্রেসার বুলেট’ ভঙ্গিতেই বলে গেলেন শাস্ত্রী।       

Advertisement

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২২ ০৮:১২
Share:

ফাইল চিত্র।

বিরাট কোহলির শততম টেস্টের লগ্নে দাঁড়িয়ে রবি শাস্ত্রীর মনে হচ্ছে, ব্যাটিংয়ের মহার্ঘ ‘সেঞ্চুরি’ রেকর্ডও ভেঙে দেবেন আধুনিক যুগের রানমেশিন। সেই রেকর্ড হচ্ছে, সচিন তেন্ডুলকরের
‘সেঞ্চুরি অব সেঞ্চুরিজ়’।

Advertisement

এই মুহূর্তে সব ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে কোহলির সেঞ্চুরির সংখ্যা ৭০। সচিনের রেকর্ড স্পর্শ করতে গেলে চাই আরও ৩০। শাস্ত্রী মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘গত দু’আড়াই বছর ধরে বিরাট আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরি পায়নি। না হলে সংখ্যাটা আরও বেশি থাকত। তাতেও সব ধরনের ক্রিকেটে গড় এখনও পঞ্চাশের উপরে। এটাই প্রমাণ করে, ও কত বড় ব্যাটসম্যান। যখন বড় রান করেছে, কী অসাধারণ ধারাবাহিকতায় করেছে! যে মুহূর্তে পুরনো ফর্মে ফিরবে, আবার টগবগে ঘোড়ার মতো ছুটবে।’’

শাস্ত্রী এখন রয়েছেন হায়দরাবাদে। আজ, বৃহস্পতিবার সেখানে নতুন ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন। ভারতীয় দলে সাত বছর একসঙ্গে কোচিং টিমের দায়িত্ব সামলানো শাস্ত্রী, বোলিং কোচ বি অরুণ এবং ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধর মিলে এই কোচিং সেন্টার খুলছেন। এর পরে যা খোলা হবে চেন্নাইয়েও। বুধবার চারমিনারের শহর থেকেই কোহলিকে নিয়ে আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় শাস্ত্রী যোগ করলেন, ‘‘বিরাট যে রকম ফিট, যে রকম পরিশ্রম করে, যে রকম আবেগ আর হৃদয় দিয়ে ক্রিকেট খেলে, তাতে আরও অন্তত পাঁচ বছর হেসেখেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবেই। পাঁচ বছর খেললে অনেক রেকর্ডই ও ভেঙে দেবে।’’

Advertisement

অনেক রেকর্ড বলতে কি সচিনের একশো সেঞ্চুরির নজিরও ভাঙতে পারেন বিরাট? সরাসরি জানতে চাওয়া হল তাঁর কাছে। একটুও না ভেবে শাস্ত্রীর জবাব, ‘‘অবশ্যই। আমি মনে করি, বিরাটের পক্ষেই সচিনের রেকর্ড ভাঙা সম্ভব। আমি আরও একটা কারণে বিরাটের উপরে বাজি ধরছি। ওর ইতিবাচক মানসিকতা। অসম্ভব বলে কোনও শব্দ নেই ওর অভিধানে।’’

কোহলি শেষ আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ২০১৯-এর নভেম্বরে ইডেনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্টে। দু’বছর তিন মাস অতিক্রান্ত। সেই ম্যাচে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে কোচ হিসেবে থাকা শাস্ত্রী যদিও অন্য ইডেন ইনিংসের কথা টানছেন, ‘‘ইডেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টিতে ওর ব্যাটিং আমার মনে হয়েছে, পুরনো ফর্মের কাছাকাছি চলে এসেছে। সেই পরিচিত বিরাটকেই যেন দেখতে পাচ্ছিলাম। আমার মনে হয়, মোহালিতে ভাল কিছুর প্রত্যাশা করতেই পারেন ক্রিকেট ভক্তরা।’’

সচিন-উত্তর যুগে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান কে, সেই দৌড়ে চার জনের নাম ওঠে। কেন উইলিয়ামসন, জো রুট, স্টিভ স্মিথ এবং বিরাট কোহলি। চার জনের মধ্যে কোথায় রাখবেন কোহলিকে? শাস্ত্রীর উত্তর, ‘‘প্রত্যেকেই খুব ভাল ব্যাটসম্যান। এক সঙ্গে চার জন চ্যাম্পিয়নকে দেখতে পাওয়া সত্যিই সেরা প্রাপ্তি, সেরা বিনোদন। কিন্তু অন্যদের চেয়ে কোহলি বেশি শাসন করে ব্যাট করতে পারে। যখন ও ছন্দে থাকে, ব্যাটই বলকে আঘাত করে, বল এসে ব্যাটে আঘাত করে না। এটাই হল কোহলির সঙ্গে অন্যদের তফাত।’’

ভারতীয় দলে তিনি কোচ থাকাকালীনই বিশ্ব স্তরে উল্কার গতিতে উত্তরণ ব্যাটসম্যান কোহলির। ইংল্যান্ডে জিমি অ্যান্ডারসনের সুইংয়ের সামনে সেই সময়ে ব্যর্থ হয়ে মূহ্যমান কোহলি। এর পরে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে চার টেস্টে চারটি সেঞ্চুরি করেন সদ্য অ্যাশেজে আগুন ঝরিয়ে আসা মিচেল জনসনের বিরুদ্ধে। সেই বীরোচিত ব্যাটিংই তাঁর কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। শাস্ত্রীর পরামর্শেই জনসনের গতির তোয়াক্কা না করে বাঁ হাতি ফাস্ট বোলারকে খেলার সময় ক্রিজ়ের বাইরে দাঁড়ান কোহলি। মাস্টারস্ট্রোক হয়ে থাকে সেই সিদ্ধান্ত। কোচ যদিও নিজেকে নয়, কৃতিত্ব দিচ্ছেন ছাত্রকেই। ‘‘জনসনকে তখন কেউ খেলতেই পারছিল না। বিরাটের ইনিংসগুলো ছিল সারা বিশ্বের কাছে বার্তা যে, আমি এসে গিয়েছি। সেলাম ওকেই, আমি শুধু বলেছিলাম, পজ়িটিভ থাকো। আর অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছে নেটেই ও যে ভাবে ব্যাট করছিল, আমার মনে কোনও সংশয়ই ছিল না, প্রচুর রান করবে
সেই সফরে।’’

কোহলির কোন গুণটা তাঁকে সবচেয়ে আকৃষ্ট করেছে? শাস্ত্রী বললেন, ‘‘ওর কর্মপদ্ধতি। বড় শিল্পী যেমন সাধকের মতো রেওয়াজ করে, বিরাটের কাছে ম্যাচের প্রস্তুতিটাও সে রকম। একটা জিম সেশনেও অনুপস্থিত থাকবে না, অনুশীলনেও ক্ষুধার্ত। যেমন তীব্রতা নিয়ে নেটে ব্যাট করে, তেমনই শূন্যে শরীর ছুড়ে ক্যাচ নেয়, তেমনই সর্বস্ব উজাড় করে ফিল্ডিং প্র্যাক্টিস করে। এই দায়বদ্ধতা, অধ্যবসায় সকলের জন্য উদাহরণ।’’

শততম টেস্টে কোহলির জন্য শাস্ত্রীয় বার্তা? ‘‘বলব, এই বিশেষ মুহূর্তটা উপভোগ করো। দারুণ ব্যাপার যে, বোর্ড পঞ্চাশ শতাংশ দর্শক আসার অনুমতি দিয়েছে মোহালিতে। না হলে একটা লজ্জা হয়ে থাকত।’’ তাঁর সেই বিখ্যাত ‘ওয়েন্ট লাইক আ ট্রেসার বুলেট’ ভঙ্গিতেই বলে গেলেন শাস্ত্রী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement