বিরাট কোহলির কুর্নিস। ছবি: রয়টার্স।
৪১তম ওভারের চতুর্থ বলটি লং লেগ আর ডিপ মিডউইকেটের মাঝে খেলেই দৌড় শুরু করলেন বিরাট কোহলি। এই দৌড়টি এই ম্যাচের বাকি সিঙ্গলসগুলির থেকে একটু আলাদা। সচিন তেন্ডুলকরের সামনে তাঁকে টপকে যাওয়ার দৌড় ছিল ওটা। এক দিনের ক্রিকেটে ৫০তম শতরানের দৌড় ছিল ওটা। ওয়াংখেড়ের মাঠে তখন শব্দব্রহ্ম। “কোহলিইইইই, কোহলিইইইই” চিৎকার। এক সময় এই মাঠেই উঠত “সচিন, সচিন” ধ্বনি। বুধবার তিনি মাঠে বসেই শুনলেন চিৎকার পাল্টেছে। আর যাঁর জন্য চিৎকার, সেই বিরাট শতরান করার পর উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিলেন সচিন। মাস্টার ব্লাস্টার আপ্লুত তাঁর ছাত্রের কীর্তিতে।
বিরাট এক দিনের ক্রিকেটে ৫০তম শতরানটি করে প্রথমেই হেলমেট, গ্লাভস খুলে দু’হাত তুলে সচিনকে প্রণাম জানালেন। বিরাট এর আগেও সচিনকে প্রণাম করেছিলেন। সে কথা সচিন নিজেই জানিয়েছেন। সমাজমাধ্যমে সচিন লেখেন, “ভারতের সাজঘরে তোমার সঙ্গে যখন প্রথম দেখা হয়েছিল, সতীর্থেরা তোমাকে বলেছিল আমাকে প্রণাম করতে। এটাই নাকি ভারতীয় দলের সজঘরের নিয়ম। তুমি সেই ইয়ার্কি না বুঝে আমাকে প্রণাম করতে গিয়েছিলে। আমি হাসি থামাতে পারিনি। আজ তুমি আমার মন ছুঁয়ে নিলে। তোমার প্রতিভা এবং খেলার প্রতি আবেগ আমার মন ছুঁয়ে গিয়েছে। সেই বাচ্চা ছেলেটা আজ বিরাট হয়ে গিয়েছে। আমি প্রচণ্ড খুশি। আমি সব থেকে খুশি এক জন ভারতীয় আমার এই রেকর্ড ভেঙেছে। আর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের মতো বড় মঞ্চে করার কৃতিত্বটাই আলাদা। আর আমার ঘরের মাঠে করাটা সত্যিই কেকের উপর রাখা চেরির মতো।”
বিরাট রেকর্ড গড়েন, নজির গড়েন আর টপকে যান সচিনকে। বুধবার ৫০তম শতরান করার আগেই সচিনের দু’টি রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিলেন বিরাট। একটি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি অর্ধশতরান করলেন তিনি। তার পরেই এক বিশ্বকাপে সচিনের সর্বোচ্চ রানের নজিরও পেরিয়ে যান। ইডেনে ৪৯তম শতরান করেছিলেন বিরাট। সচিনকে ছুঁয়েছিলেন সেই মাঠে। এ বার টপকে গেলেন। এক দিনের ক্রিকেটে শতরানের চূড়ায় উঠে পড়লেন।
বিরাটের কাছে সচিন তাঁর বিগ্রহ। ৫০তম শতরান করে সে কথা বললেনও বিরাট। তিনি এখনও ‘পুজো’ করেন সচিন। রানের ‘অঞ্জলি’ দেন। আর গ্যালারিতে বসে সেই পুজো গ্রহণ করেন ‘ক্রিকেট দেবতা’। টানা দেড় মিনিট হাততালি দেন বিরাট শতরান করার পর।
পরিসংখ্যানবিদেরা আরও একটি কথা মনে করিয়ে দেবেন। সচিন তাঁর জীবনের শেষ টেস্ট খেলেছিলেন ওয়াংখেড়েতে। ১৪ নভেম্বর শুরু হয়েছিল সেই টেস্ট। ম্যাচ শেষ হয়েছিল ১৬ নভেম্বর। ১০ বছর আগে ১৫ নভেম্বর সচিন শেষ বার ব্যাট করেছিলেন। আর সেই দিনেই সচিনের রেকর্ড ভেঙে দিলেন বিরাট।
বুধবার ওয়াংখেড়ে আরও একটি মুহূর্তের সাক্ষী থাকল। মাঠে বিরাট যখন তাঁর রেকর্ড ভাঙা ইনিংস খেলছেন, তখন সচিন যেমন গ্যালারিতে ছিলেন, তেমনই ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন ভিভ রিচার্ডস। বিরাটের কাছে সচিন যেমন বিগ্রহ, তেমনই সচিনের কাছে ভিভ। একেক যুগের ক্রিকেট নায়কেরা উপস্থিত ছিলেন ওয়াংখেড়েতে। ইতিহাসের সাক্ষী হচ্ছিল মুম্বইয়ের মাঠ। যে মাঠে ১২ বছর আগে বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত।
শতরানের পর শুধু সচিনকে প্রণাম নয়, অনুষ্কাকে উড়ন্ত চুম্বনও ছুড়ে দেন বিরাট। পাল্টা চুম্বন আসে অনুষ্কার তরফ থেকেও। প্রণাম থেকে প্রেম সব মিলল শতরানে। আগামী দিনে বিরাটের থেকে এমন আরও অনেক ইনিংস দেখতে চাইবেন সমর্থকেরা। অপেক্ষা করে থাকবেন বিরাটের বিগ্রহও।