শান মাসুদ। —ফাইল চিত্র।
পাকিস্তান-বাংলাদেশ টেস্টের চতুর্থ দিন পর্যন্ত মনে হচ্ছিল, খেলা ড্র হবে। কিন্তু শেষ দিনে সব বদলে গিয়েছে। প্রথম ইনিংসে ডিক্লেয়ার করে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানকে হারতে হয়েছে টেস্ট। বাংলাদেশের কাছে হারের পরে ভারতের ৪৮ বছরের পুরনো লজ্জার নজির ছুঁয়েছে পাকিস্তান।
প্রথম ইনিংসে ডিক্লেয়ার করার পরে ১০ উইকেটে হারার নজির এর আগে একমাত্র ভারতের ছিল। ১৯৭৬ সালে কিংসটনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের কাছে হেরেছিল তারা। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩০৬ রানে ডিক্লেয়ার করেছিল ভারত। ওয়েস্ট ইন্ডিজ় প্রথম ইনিংসে করেছিল ৩৯১ রান। ৮৫ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে ৯১ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল ভারত। চতুর্থ ইনিংসে মাত্র ১৩ রান দরকার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের। ১০ উইকেট জিতে যায় তারা। দ্বিতীয় দল হিসাবে সেই তালিকায় ঢুকল পাকিস্তান। বাংলাদেশের কাছে ১০ উইকেটে হেরেছে তারা।
টেস্টের ইতিহাসে মোট ২৬ বার এই ঘটনা ঘটেছে যে, কোনও দল ডিক্লেয়ার দেওয়ার পরেও হেরেছে। তার মধ্যে চার বার এই ঘটনা ঘটেছে পাকিস্তানের সঙ্গে। শুরুটা হয়েছিল ১৯৬১ সালে। লাহোরে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেটে ৩৮৭ রানে ডিক্লেয়ার করেছিল পাকিস্তান। ৫ উইকেটে সেই ম্যাচ হেরেছিল তারা। দ্বিতীয় বার এই ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭২ সালে। মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৮ উইকেটে ৫৭৪ রানে ডিক্লেয়ার দিয়েছিল তারা। তার পরেও হারতে হয়েছিল। তৃতীয় বার ২০১৬ সালে আবার সেই মেলবোর্নেই একই ভাবে হারে পাকিস্তান। সে বার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৯ উইকেটে ৪৪৩ রানে ডিক্লেয়ার দেওয়ার পরে ইনিংস ও ১৮ রানে হারতে হয়েছিল তাদের। চতুর্থ ঘটনা ঘটল রাওয়ালপিন্ডিতে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। টেস্টের ইতিহাসে মোট ১২ বার এই ঘটনা ঘটেছে যে, কোনও দল ডিক্লেয়ার দেওয়ার পরেও হেরেছে। তার মধ্যে চার বারই এই ঘটনা ঘটেছে পাকিস্তানের সঙ্গে।
রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান করে ডিক্লেয়ার দেয় পাকিস্তান। শতরান করেন শাকিল ও রিজ়ওয়ান। জবাবে প্রথম ইনিংসে ৫৬৫ রান করে বাংলাদেশ। তাদের হয়ে ১৯১ রান করেন মুশফিকুর রহিম। ৯৩ রান করেন শাদমান ইসলাম। পাকিস্তানের থেকে ১১৭ রান এগিয়ে শেষ করে বাংলাদেশ। পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৬ রানে অল আউট হয়ে যায়। প্রথম ইনিংসে ১১৩ ওভার ব্যাট করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৫৫.৫ ওভার ব্যাট করতে পারে তারা। ব্যাটিং ব্যর্থতার খেসারত দিতে হয় বাবরদের।
ম্যাচ শেষে পাকিস্তানের অধিনায়ক মাসুদও হারের সম্ভাব্য কারণ হিসাবে তাড়াতাড়ি ডিক্লেয়ার দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। পাক অধিনায়ক বলেন, “অজুহাত দেওয়ার কোনও জায়গা নেই। তবে দুটো কথা মাথায় আসছে। এই পিচে চার জন পেসার নিয়ে নামা উচিত হয়নি। আমরা পিচ বুঝতে পারিনি। টেস্টের আগে ৮-৯ দিন বৃষ্টি হয়েছিল। ভেবেছিলাম পিচ থেকে পেসারেরা সাহায্য পাবে। কিন্তু উল্টো হয়েছে। পিচ থেকে পেসারেরা কোনও সাহায্য পায়নি। এক জন বেশি স্পিনার খেলালে হয়তো ভাল হত। প্রথন ইনিংসে ডিক্লেয়ার দেওয়াও উচিত হয়নি। ভেবেছিলাম, তাড়াতাড়ি ইনিংস শেষ করলে হয়তো ম্যাচের ফয়সালা হবে। কিন্তু পঞ্চম দিন পিচ এই রকম হয়ে যাবে ধরতে পারিনি।”