পন্থের সঙ্গে কোচ দ্রাবিড়। ছবি: পিটিআই
বিদেশের মাটিতে তৃতীয় ইনিংস। ভারতীয় ক্রিকেট দলের কাছে এখন সব থেকে বড় জুজু হয়ে দাঁড়িয়েছে এটাই। এজবাস্টন টেস্টে হারের পর রাহুল দ্রাবিড় এই রোগকে তুলে ধরেছেন। কিন্তু তিনি ভারতীয় দলের কোচের দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই ভারত ভুগছে এই রোগে।
এজবাস্টনে প্রথম ইনিংসে ১৩২ রানে লিড নিয়েও হারতে হয় ভারতকে। এর আগে একশো রানের বেশি লিড নিয়েও বিরাট কোহলীদের টেস্ট হারতে মাত্র এক বার। রবি শাস্ত্রী ভারতীয় কোচ হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তাদের মাঠে প্রথম ইনিংসে ১৯২ রানের লিড নিয়েও হেরে গিয়েছিল ভারত। সেই ম্যাচে দীনেশ চান্ডিমল একাই শেষ করে দিয়েছিলেন প্রতিপক্ষকে। তাঁর ১৬২ রানের ইনিংসের দাপটে ভারতের রান টপকে ১৭৬ রানের লক্ষ্য দেয় ভারতকে। ৬৩ রানে হেরে যান বিরাটরা।
২০২০ সালের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত ন’টি টেস্ট হেরেছে ভারত। এর মধ্যে আটটি টেস্ট হেরেছে বিদেশের মাটিতে। এই আটটি ম্যাচেই প্রথমে ব্যাট করেছে ভারত। সেটা করতেই ভালবাসেন বিরাটরা। এর মধ্যে ২০২০ সালের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট এবং ২০২১ সালে লিডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ছাড়া বাকি ছ’টি ম্যাচেই তৃতীয় ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতা বড় প্রভাব ফেলেছে।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ (২০২০), অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড (২০২১), ইংল্যান্ডের সাদাম্পটন (২০২১), দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ (২০২২) এবং কেপ টাউনের (২০২২) পর এ বার ইংল্যান্ডের এজবাস্টন টেস্ট, ভারতীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ককে নাড়িয়ে দেওয়ার জন্য এই ছ’টি টেস্ট যথেষ্ট। এর মধ্যে চারটি টেস্টে প্রথম ইনিংসে লিড নিয়েও হেরে যায় ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামলেই কেঁপে যাচ্ছে ভারতীয় দল।
এজবাস্টনে যদিও ভারত ৩৭৮ রানের বিশাল লক্ষ্য রেখেছিল ইংল্যান্ডের সামনে। চতুর্থ ইনিংসে বোলারদের দোষও তাই ছোট করা যাবে না। বিরাট রান হাতে নিয়ে নেমেও বিপক্ষের ১০টি উইকেট তুলে নিতে না পারা যশপ্রীত বুমরাদের ব্যর্থতার খারাপ বিজ্ঞাপনই দেখাচ্ছে। তাতে যদিও তৃতীয় ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতা ঢাকা যাচ্ছে না।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সদ্য সমাপ্ত টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৪১৬ রান তোলে ভারত। ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ হয়ে যায় ২৮৪ রানে। হাতে ১৩২ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামেন বিরাটরা। এর পরেও বিশাল রান তুলে ইংল্যান্ডের জেতার আশা শেষ করে দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করল ভারত। কিন্তু বিরাটরা ব্যর্থ হওয়ায় ২৪৫ রানে শেষ হয়ে গেল ইংল্যান্ড। জো রুট, জনি বেয়ারস্টোরা ৩৭৮ রান তুললেন সহজে। তাঁদের আক্রমণের সামনে ছন্নছাড়া হল বুমরাদের বোলিং বিভাগ।
হারের পর কোহলীরা। —ফাইল চিত্র
দ্রাবিড় দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদেশের মাটিতে টানা তিনটি টেস্ট হারল ভারত। এর আগের দু’টি দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানেও তৃতীয় ইনিংসে ব্যাটিংটাই ছিল সমস্যার কারণ। সেটা নিয়ে ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন দ্রাবিড়। তিনি বলেন, “তৃতীয় ইনিংসে আমরা ভাল ব্যাট করতে পারিনি। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও সেটা দেখা গিয়েছিল। ভাল শুরু করেও ছন্দ হারিয়ে ফেলেছি আমরা। আমাদের এই জায়গায় উন্নতি প্রয়োজন।”
বিদেশের মাটিতে প্রথম ইনিংসে লিড নিয়েও হারা টেস্টগুলির মধ্যে রয়েছে অ্যাডিলেডে তৃতীয় ইনিংসে ৩৬ রানে গুটিয়ে যাওয়া। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ক্রাইস্টচার্চে ৭১/২ থেকে ১৭০ রানে শেষ হয়ে যায় ভারত। চতুর্থ ইনিংসে বোলারদের ব্যর্থতাকে অনেক সময় তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ ভাবে সত্যি নয়। তৃতীয় ইনিংসে ব্যাটারদের ব্যর্থতাকে মাথায় রাখতেই হবে। এই হারা ম্যাচগুলির মধ্যে কেপটাউনে ঋষভ পন্থ শতরান করেন। পুজারা তিনটি অর্ধশতরান করেন। তা ছাড়া সে ভাবে কোনও ব্যাটার ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেননি।
এই হারের তালিকায় যোগ হতে পারত গত বছরের লর্ডস টেস্ট। ইংল্যান্ড সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে যশপ্রীত বুমরা এবং মহম্মদ শামির নবম উইকেটের জুটি লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনে ভারতকে। ৮৯ রানের জুটি গড়েন তাঁরা। ইংল্যান্ডের সামনে ২৭২ রানের লক্ষ্য রাখে ভারত। শেষ ইনিংসে মহম্মদ সিরাজের দাপটে ১২০ রানে শেষ হয়ে যায় ইংল্যান্ড। সিরিজেও ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ভারত। শামি-বুমরা ব্যাট হাতে না খেললে সেই ম্যাচেও কী হত বলা মুশকিল।
ভারত টেস্টে আগে ব্যাট করতেই পছন্দ করে। সাফল্যও এসেছে প্রথমে ব্যাট করে। কিন্তু বিদেশের মাটিতে শেষ কিছু ম্যাচে ভারতের যা ফলাফল তাতে অন্য রকম কিছু ভাবতে হতেই পারে দ্রাবিড়দের। স্পিন যেখানে চতুর্থ ইনিংসে ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে, সেই পিচে ছাড়া চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করাই কি উচিত হবে ভারতের?