(বাঁদিক থেকে) রোহিত শর্মা, রবীন্দ্র জাডেজা এবং ঈশান কিশন। ছবি: পিটিআই।
বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়া একটি দলের বিরুদ্ধে যে দাপটের সঙ্গে জেতার কথা ছিল, ভারত প্রায় সেই ভাবেই জিতল। প্রথমে বল করে ওয়েস্ট ইন্দিজ়কে ১১৪ রানে অলআউট করে দেন ভারতীয় বোলারেরা। ৫০ ওভারের ম্যাচে ১১৫ রান ছিল যথেষ্ট সহজ লক্ষ্য। তাই রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের শুরুতে নামাতে চায়নি ভারত। তরুণদের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ১১৫ রান তুলতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত নামতে হল রোহিতকে। পাঁচ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ জিতল ভারত।
বৃহস্পতিবার টস জিতে রোহিত প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ় দলকে নিয়ে চিন্তা করার মতো কারণ ছিল না, রোহিত করেনওনি। তিনি টস জিতে বলেন, “প্রথমে বল করব। কোনও বিশেষ কারণ নেই আগে বল করার। নিজেদের বিভিন্ন ভাবে পরোখ করে নিতে চাই। দল হিসাবে আমরা কেমন সেটা দেখে নিতে চাই। বিশ্বকাপের আগে নিজেদের চিন্তাভাবনাগুলো পরিষ্কার রাখতে চাই আমরা। ফলাফলটাও গুরুত্বপূর্ণ। একাধিক ক্রিকেটারকে এই সময়ে দেখে নেওয়া হবে। তাই বলে জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছি না।” দলকে দেখে নেওয়ার সব থেকে ভাল সুযোগ এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ় সফর। প্রতিপক্ষে এমন কোনও ক্রিকেটার নেই, যিনি ভারতকে চিন্তায় ফেলতে পারেন। তাঁদের বিরুদ্ধেই তো দলকে দেখে নেওয়া যায়। সুযোগ ছিল, সুযোগ দেওয়াও হল। কিন্তু তরুণ ব্যাটারেরা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেন কই?
শুরুটা দাপটের সঙ্গেই করেছিল ভারত। হার্দিক পাণ্ড্য এবং অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা মুকেশ কুমার নতুন বলে উইকেট এনে দেন। শার্দূল ঠাকুর একটি উইকেট নেন। ৪৫ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। বোঝা গিয়েছিল খুব বেশি রান তাদের পক্ষে তোলা সম্ভব হবে না। তবুও ক্যারিবিয়ান দলের আশা ছিল অধিনায়ক সাই হোপ এবং এক বছর পর দলে ফেরা শিমরন হেটমেয়ারের উপর। কিন্তু তাঁদের জুটি ছিল মাত্র ৪৩ রানের। রবীন্দ্র জাডেজার বলে ১১ রান করে আউট হন আইপিএলে নজর কাড়া হেটমেয়ার। তার পরেই ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংয়ে ধ্বস নামে। হোপ ৪৩ রান করলেও তা লজ্জা ঢাকার মতো ছিল না।
কুলদীপ তিন ওভার বল করে চারটি উইকেট নেন। বিশ্বকাপের আগে এই পারফরম্যান্স ভারতের বাঁহাতি স্পিনারকে দলে নিজের জায়গা পাকা করতে সাহায্য করবে। অন্য দিকে জাডেজা নেন তিনটি উইকেট। এক সময় কুলদীপ এবং যুজবেন্দ্র চহালের জুটিকে ‘কুল-চা’ বলা হত। এখন জাডেজার সঙ্গে জুটি বেঁধে যে স্পিন আক্রমণ তৈরি করেছেন কুলদীপ, তাতে ‘কুল-জা’ জুটি ভারতীয় দলের শক্তি হয়ে উঠতেই পারে।
যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামি এবং মহম্মদ সিরাজকে বাদ দিয়েও ভারতীয় দলের বোলিং আক্রমণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে যে দাপট দেখাল তা নিশ্চিন্ত করবে রোহিতকে। কিন্তু ব্যাটিং! যে ভাবে সুইপ মারতে গিয়ে সূর্যকুমার যাদব আউট হলেন, সেটা যথেষ্ট চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে। গুডাকেশ মতির বলে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন সূর্য। বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পর পর তিনটি ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়ার পর এই প্রথম ভারতের হয়ে এক দিনের ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন তিনি। লোকেশ রাহুল এবং শ্রেয়স আয়ার চোটের কারণে নেই। সেই জায়গায় সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারলেন না সূর্য। একটি বলে সুইপ মারতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হচ্ছিলেন। আম্পায়ার আউট দেননি। ঠিক তার পরের বলেই একই রকম ভাবে সুইপ মারতে গেলেন তিনি। এমন সিদ্ধান্ত অবাক করার মতোই।
মাত্র ১১৫ রানের লক্ষ্য থাকায় রোহিত ওপেন করতে নামেননি। শুভমন গিল এবং ঈশান কিশনকে পাঠিয়েছিলেন। ঈশান ৫২ রান করলেও শুভমন মাত্র সাত রানে আউট হন। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিলেন তিনি। তিন নম্বরে বিরাটও নামেননি। তাঁর জায়গায় নেমেছিলেন সূর্যকুমার। হতাশ করলেন তিনি। চার নম্বরে নামা হার্দিক পাণ্ড্য দুর্ভাগ্যের শিকার। ঈশানের মারা বল ক্যাচ ধরতে গিয়েছিলেন বোলার ইয়ানিক কারিয়া। ধরতে পারেননি। কিন্তু তাঁর হাতে লেগে বল নন স্ট্রাইকারের দিকের উইকেট ভেঙে দেয়। হার্দিক ফেরার চেষ্টা করলেও ব্যাট মাটিতে ঠেকাতে পারেননি। আউট হয়ে যান মাত্র পাঁচ রান করে। সুযোগ চলে আসে শার্দূল ঠাকুরের কাছে। কিন্তু পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে মাত্র এক রান করে আউট হন তিনি।
শেষ পর্যন্ত ব্যাট করতে নামতেই হয় রোহিতকে। তিনি এবং জাডেজা ম্যাচ শেষ করেন। কিন্তু ১১৫ রান তুলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও যে ভারতকে পাঁচ উইকেট হারাতে হবে সেটা আশা করা যায়নি। ১১৫ রান তুলতে ভারত নিল ২২.৫ ওভার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ঝড় তোলা শুভমন, ঈশান, সূর্যকুমাররা দলে থাকতেও যে এতগুলি ওভার ভারতকে খেলতে হবে সেটা সত্যিই আশা করা যায়নি। আগামী ম্যাচে এই চিন্তা দূর করার পরীক্ষা থাকবে ভারতের। বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে না পারা ওয়েস্ট ইন্ডিজ় এই সিরিজ়ে আদৌ কোনও পরীক্ষা নিতে পারবে কি না সেই প্রশ্ন থাকবে।