T20 World Cup 2022

কাপ জিততে চাই দু’টো সূর্যোদয়

প্রতিপক্ষ জ়িম্বাবোয়ে হলেও যে সব শট সূর্যের ব্যাটে দেখলাম, তাতে নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ও-ই এখন এক নম্বর ব্যাটসম্যান। এবং, যথার্থই ৩৬০ ডিগ্রি ক্রিকেটার।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২২ ০৯:২২
Share:

সূর্য কুমার যাদব।

রবিবার ছুটির দিন বলে অনেকেই হয়তো ভোরে উঠে টিভি চালাননি। ঘুম থেকে উঠে তাঁরা জানতে পারেন, বিশ্বকাপের সমীকরণই বদলে গিয়েছে!

Advertisement

এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটনের ম্যাচে নেদারল্যান্ডস হারিয়ে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে! যার ফলে ঘরে ফেরার টিকিট প্রায় কাটা হয়ে যাওয়া পাকিস্তানের পুনর্জন্ম ঘটে যায়। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে হারিয়ে শেষ চারে উঠে যায় বাবর আজ়মরা। দক্ষিণ আফ্রিকা হারায় আরও একটা ঘটনা ঘটে। জ়িম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে মেলবোর্নে খেলতে নামার আগে সেমিফাইনালের ছাড়পত্র পেয়ে যায় ভারত।

সেমিফাইনালে উঠে গেলেও জ়িম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে যে সেরাটা দেবে, ভারতীয় দল, এই নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না। আর ঠিক সেটাই দিল। পার্‌থে হয়তো নিজের সেরা টি-টোয়েন্টি ইনিংস খেলে এসেছিল সূর্যকুমার যাদব। কিন্তু এ দিন যেটা খেলল, সেটাও খুব পিছনে থাকবে না। প্রতিপক্ষ জ়িম্বাবোয়ে হলেও যে সব শট সূর্যের ব্যাটে দেখলাম, তাতে নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ও-ই এখন এক নম্বর ব্যাটসম্যান। এবং, যথার্থই ৩৬০ ডিগ্রি ক্রিকেটার।

Advertisement

এক সাক্ষাৎকারে সূর্যই এক বার বলেছিল, ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম আর পার্সি জিমখানা ক্লাবে প্র্যাক্টিস করার সময় ও এই ধরনের শট নিয়মিত অভ্যাস করত। ওখানকার বাউন্সের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে অভাবনীয় সব শটের মহড়া চলত। যে সব শটের নমুনাই এ দিন দেখা গেল।

সূর্য একটা অদ্ভুত রকমের শট মারে। ডান পা-টা প্রায় ষষ্ঠ-সপ্তম স্টাম্পে নিয়ে হাঁটু ভেঙে বসে পড়ে। বাঁ-পা থাকে একস্ট্রা কভারের দিকে। তার পরে বলের গতি কাজে লাগিয়ে স্কুপ করে তুলে দেয় ডিপ ফাইন লেগ বা ডিপ স্কোয়ার লেগের ওপর দিয়ে। কখনও ওয়ান ড্রপ চার হয়, কখনও বা সোজা ছয়। এই শটটা কিন্তু বেশ বিপজ্জনক। ফস্কালে বা ব্যাটের ঠিক জায়গায় না লাগলে বল বুকে-মুখে এসে লাগতে পারে। কিন্তু এই রকমই একটা অতি কঠিন শট হাসতে হাসতে খেলে ও। এ দিন ২৫ বলে অপরাজিত ৬১ রানে ইনিংসে ছ’টা চার আর চারটে ছয় মেরেছে সূর্য। যার মধ্যে বেশ কয়েক বার এই রকম শট দেখতে পেলাম। এর ফলে বোলাররাও বুঝতে পারে না, কোন লাইনে সূর্যকে বল করবে। সূর্যের দাপটে প্রথমে ব্যাট করে ভারত তোলে পাঁচ উইকেটে ১৮৬। জবাবে জ়িম্বাবোয়ের ইনিংস থেমে যায় ১১৫ রানে।

সূর্যের ব্যাটিংয়ে আরও একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম। ও যেন সেকেন্ডের ভগ্নাংশ আগে বুঝে নিতে পারে, বলটা কী ধরনের হতে চলেছে। কোন বলটা অফস্টাম্পের বাইরে ওয়াইড ইয়র্কার হবে, কোন বলটা শর্ট অব লেংথ হবে। টি-টোয়েন্টি খেলায় স্মার্ট ক্রিকেট খেলতে হয়। মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কোন শট খেলবে। এই ব্যাপারে কিন্তু সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়েছে সূর্য। এখন একটাই প্রার্থনা। আর দু’টো ম্যাচে এই ছন্দটা ধরে রাখুক সূর্য। আর দু’টো ম্যাচে এ রকম সূর্যোদয় ঘটুক। তা হলেই কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আরও এক বার ঘরে তুলতে পারব।

বৃহস্পতিবার অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল। যে মাঠকে বিরাট কোহলির পাড়া বলা যেতে পারে। এই মাঠে অনবদ্য কিছু ইনিংস আছে বিরাটের। সেমিফাইনালে নামার আগে ওর ছন্দে থাকা বড় ভরসা ভারতের। তবে কোচ রাহুল দ্রাবিড় সবচেয়ে স্বস্তি পাবে ওপেনার কে এল রাহুল ফর্মে ফেরায়।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম কয়েকটি ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পরে আবার ফর্মে ফিরেছে রাহুল। ওর কয়েকটা শট সত্যিই অনবদ্য ছিল। বিশেষ করে, পয়েন্টের ওপর দিয়ে একটা শট মারে, সেটা দেখার মতো। ওই সময় হকি স্টিক ধরার মতো গ্রিপ থাকে রাহুলের। ডান হাতটা ব্যাটের হ্যান্ডলের নীচে চলে যায়। পুরো বটমহ্যান্ডের সাহায্যে ওই শটটা খেলে রাহুল।

সেমিফাইনাল দ্বৈরথে দু’টো সেরা দলের টক্কর হতে চলেছে। এই লড়াইয়ে ভারত-ইংল্যান্ড একই জায়গায় থাকবে। কিন্তু এটুকু বলতে পারি, আত্মবিশ্বাসে টগবগ করতে করতেই মাঠে নামবে রোহিত শর্মারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement