যুযবেন্দ্র চহাল। ফাইল চিত্র।
আইসিসি ট্রফি এখনও অধরাই থেকে গেল বিরাট কোহালির। রবিবার নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে আফগানিস্তান হারার পরেই নিশ্চিত হয়ে যায়, ব্যাগ গুছিয়ে দেশে ফিরে আসার প্রস্তুতি শুরু করতে হবে বিরাট-বাহিনীকে। ম্যাচ জিতে শেষ চারে চলে গেল নিউজ়িল্যান্ড। শূন্য হাতে ফিরে আসতে হচ্ছে ভারতকে। কিন্তু এই ভারতীয় দলকেই সবাই ‘ফেভারিট’ হিসেবে ধরেছিল। কী এমন ঘটল, যাতে সেমিফাইনালের আগেই ছিটকে যেতে হল আমাদের?
ব্যক্তিগত ভাবে বেশ কিছু কারণ খুঁজে পেলাম। তার মধ্যে পাঁচটি মূল কারণ বেছে নেওয়া হল।
নির্বাচনেই গলদ: নির্বাচক প্রধান চেতন শর্মা দল ঘোষণা করার দিনই বলে দিয়েছিলেন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে যুজ়বেন্দ্র চহালের চেয়ে রাহুল চাহার বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। কারণ, গতির উপরে চাহার বল ঘোরাতে পারে। অথচ আইপিএল যতই এগোলো, দেখা গেল মরুশহরে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরকে একের পর এক ম্যাচ জেতাচ্ছে চহাল। পিচ থেকে ওর মতো সাহায্য কেউই পাচ্ছে না। অন্য দিকে বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ার পর থেকেই ছন্দপতন ঘটে চাহারের। প্রথম একাদশে নেওয়া না হলে, ওকে নিয়ে যাওয়া হল কেন? আর অশ্বিনের নির্বাচনও অবাক করেছে। আইপিএলেও ও সেরা ছন্দে ছিল না। কোন যুক্তিতে হঠাৎ বিশ্বকাপ দলে প্রবেশ করল, বুঝলাম না।
ধওয়ন কেন বাদ: আইপিএলে ১৬ ম্যাচে ৫৮৭ রান করেছে শিখর ধওয়ন। আইসিসি প্রতিযোগিতায় অন্যতম সফল ওপেনার। দল নির্বাচনের পরেও আইপিএলে একের পর এক ম্যাচে রান করে গিয়েছে। নির্বাচকেরা বললেন, ধওয়নকে বিশ্বকাপে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। এই কথার কোনও অর্থ খুঁজে পাইনি। বিশ্বকাপের জন্যই ক্রিকেটারেরা তৈরি হয়। সেখানেই বিশ্রাম? কে এল রাহুলের টেকনিক এতটাই মজবুত যে, মাঝের দিকে ওকে নামালেও রান করে দিতে পারত। রোহিত-ধওয়ন জুটির উপরে আরও এক বার ভরসা কি রাখা যেত না?
অলরাউন্ডারের অভাব: টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচ জেতার নেপথ্যে সবচেয়ে বেশি অবদান থাকে অলরাউন্ডারদের। নিউজ়িল্যান্ড যেমন পেয়েছে জিমি নিশামকে। তেমনই ইংল্যান্ড দলে রয়েছে লিয়াম লিভিংস্টোন। পাকিস্তানে মহম্মদ হাফিজ়। অথচ আমাদের দলে রবীন্দ্র জাডেজা থাকা সত্ত্বেও ওকে এতটা পিছনের দিকে কেন নামানো হয়? জাডেজা কিন্তু ইনিংস সাজাতে পারে। কেন চার নম্বরে নামিয়ে ওকে দেখা হবে না? আইপিএলেই দেখা গিয়েছে হার্দিক পাণ্ড্য ছন্দে নেই। বলও করতে পারছে না। তবুও ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ওর কোনও পরিবর্ত খোঁজা হল না! হার্দিক নিজেও জানাতে পারত আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য ও তৈরি নয়। শট মারার সময় কোমর ঘুরছে না। শটে জোর নেই। আইপিএলেও দুবাই, আবু ধাবির মাঠের সীমানা পার করতে পারছে না। আইপিএলকেই যখন বিশ্বকাপের প্রস্তুতি মঞ্চ হিসেবে দেখা হচ্ছে, তখন সেই প্রতিযোগিতায় ছন্দে থাকা ক্রিকেটারদের উপরে আরও বেশি ভরসা রাখা উচিত। যেমন বেঙ্কটেশ আয়ার, শিবম দুবে, ব্যাট ও বল হাতে হার্দিকের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরী হতে পারত।
পাক-হারের ধাক্কা: প্রথম ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হারের ধাক্কা ছিল সাঙ্ঘাতিক। এই ম্যাচকে ঘিরে সমর্থকদের মধ্যে বাঁধভাঙা উত্তেজনা তৈরি হয়। যার প্রভাব ড্রেসিংরুমে পৌঁছে যেতে বাধ্য। ২০১৯ বিশ্বকাপে দেখা গিয়েছে ভারতের বিরুদ্ধে হেরে প্রতিযোগিতায় ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পাকিস্তান। এ বার বিরাট-বাহিনীর সঙ্গে সেই অঘটন ঘটল। তবুও ভারতীয় অধিনায়কের জন্যই শুরুর দিকের বিপর্যয় কাটিয়ে দেড়শো রানের গণ্ডি পেরিয়েছিলাম। কিন্তু দুবাইয়ের পিচে কোথায় বল ফেলে পাক ব্যাটারদের বিভ্রান্ত করা যায়, তার উত্তর ছিল না আমাদের বোলারদের কাছে। এ ধরনের ম্যাচেই প্রয়োজন একজন রিস্টস্পিনারের। যে উইকেট তুলে ম্যাচের রং পাল্টে দিতে পারবে। চহাল না থাকায় সেই স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায়। পাক ম্যাচের রেশ কাটার আগেই ভারতের সামনে পড়ে নিউজ়িল্যান্ড। ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণই ছিল না আমাদের।
বিশ্রামের অভাব: বিরাট কোহালি, রোহিত শর্মা, যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামি, ঋষভ পন্থ, রবীন্দ্র জাডেজা, আর অশ্বিনেরা জুন থেকে দেশের বাইরে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের পরেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ় ছিল। জৈব সুরক্ষা বলয় থেকে বেরোনোর সুযোগ পায়নি। জো রুটদের বিরুদ্ধে সিরিজ় শেষে আইপিএলের জৈব বলয়ে প্রবেশ করল। তার পরেই বিশ্বকাপ। বলয়ের মধ্যে টানা থাকতে থাকতে মস্তিষ্ক ঠিক মতো কাজ করা বন্ধ করে দেয়। বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পরে আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছি। প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগে এত গলদ ধরতে পারলে এই দিন দেখতে হত না।