(বাঁ দিক থেকে) হিমাংশু সাংওয়ান। তাঁর বলেই আউট বিরাট কোহলি। ছবি: সংগৃহীত।
বিরাট কোহলির অফ স্টাম্পটা ডিগবাজি খেতে খেতে স্লিপের দিকে চলে যাচ্ছে। গোটা মাঠ চুপ। চিৎকার করছিলেন শুধু হিমাংশু সাংওয়ান। তাঁর বলেই বোল্ড হয়েছেন কোহলি। যাঁকে দেখার জন্য দিল্লির মাঠে হাজার হাজার দর্শক এসেছিলেন। সকলকে হতাশ করলেন হিমাংশু। তিনিও দিল্লির ঘরের ছেলে। যদিও শুক্রবার কোহলিকে আউট করে হিমাংশু এখন ‘ঘরশত্রু’ ।
২৯ বছরের হিমাংশু ডানহাতি পেসার। তাঁর জন্ম দিল্লির নজফগড়ে। যেখান থেকে বীরেন্দ্র সহবাগের মতো ক্রিকেটার পেয়েছিল ভারত। সেই শহরেরই ছেলে হিমাংশু। কিন্তু খেলেন রেলওয়েজ়ের হয়ে। এক সময় যদিও দিল্লির অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে হিমাংশু প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন ২০১৯ সালে। লিস্ট এ ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। বিজয় হজারে ট্রফি খেলেছিলেন। সেই বছরই একে একে অভিষেক হয় সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি এবং রঞ্জি ট্রফিতে। দিল্লির রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট পরীক্ষক ছিলেন হিমাংশু। চাকরি সূত্রেই রেলের হয়ে ক্রিকেট খেলেন দিল্লির ছেলে।
হিমাংশু এক সময় এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে গিয়েছিলেন। সেখানে গ্লেন ম্যাকগ্রার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। সেটাই তাঁর কেরিয়ার বদলে দেয়। ম্যাকগ্রার পরামর্শে বোলার হিসাবে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন হিমাংশু। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ওয়াংখেড়ের মাঠে একবার রঞ্জিতে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। পৃথ্বী শ, অজিঙ্ক রাহানেদের উইকেট নিয়েছিলেন। সেই ম্যাচে মুম্বইকে ১০ উইকেটে হারিয়েছিল রেলওয়েজ়। একটি ইনিংসে ৩৩ রান ৬ উইকেট নেওয়া হিমাংশুর সেটাই সেরা বোলিং।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে হিমাংশু চলতি ম্যাচ বাদ দিয়ে ২৩টি ম্যাচ খেলেছেন। ৭৭টি উইকেট নিয়েছেন। লিস্ট এ ক্রিকেটে ১৭টি ম্যাচে ২১টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। সাতটি টি-টোয়েন্টিতে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। এ বারের রঞ্জিতে এখনও পর্যন্ত ১৬টি উইকেট নিয়েছেন হিমাংশু। তার মধ্যে একটি উইকেট বিরাটের। তা-ও আবার তাঁর অফ স্টাম্প ছিটকে দিয়ে।
হিমাংশুর বলে বোল্ড হন কোহলি। আউট হওয়ার আগের বলটিতে চার মেরেছিলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক। হিমাংশুর ফুল লেংথ বলটি ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে। কোহলি একটু এগিয়ে এসে স্ট্রেট ড্রাইভে চার মারেন। ওই রকম শক্তিশালী স্ট্রেট ড্রাইভ তাঁকে অনেক দিন মারতে দেখা যায়নি। কিন্তু পরের বলেই শেষ কোহলির ইনিংস। প্রায় একই রকমের বল করেছিলেন হিমাংশু। এ বারের বলটি স্টাম্পে ছিল। কোহলি ড্রাইভ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ভুল করলেন আগের বলের মতো এগিয়ে না এসে। জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে কোহলির ব্যাট এবং পায়ের মাঝে ফাঁক তৈরি হয়। সেখান দিয়েই বল ঢুকে ছিটকে দেয় অফ স্টাম্প। ঘুরতে ঘুরতে অফ স্টাম্পটা গিয়ে পড়ে কিছুটা দূরে, যা কোহলির মতো ব্যাটারের জন্য ভাল বিজ্ঞাপন নয়। আর ফর্মে না থাকা কোহলির জন্য তো আরওই নয়। কিন্তু কোহলির উইকেট নেওয়া বোলারদের তালিকায় তখন হিমাংশুর নাম উঠে গিয়েছে।