শিখর ধাওয়ানের রেকর্ড ভেঙে দিলেন যশস্বী জয়সওয়াল। —ফাইল চিত্র
ইরানি কাপে দু’ইনিংসে বড় রান যশস্বী জয়সওয়ালের। টপকে গিয়েছেন শিখর ধওয়ানকে। অগ্রজের শুভেচ্ছা পেয়েছেন তরুণ ব্যাটার। যশস্বী যদিও অপেক্ষায় থাকবেন ভারতীয় দলে ডাক পাওয়ার। তার জন্য আগামী মরসুমেও ধারাবাহিক ভাবে রান করতে হবে মুম্বইয়ের তরুণ ওপেনারকে।
ইরানি কাপে অবশিষ্ট ভারতের হয়ে মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে দু’টি ইনিংসে ২১৩ এবং ১৪৪ রান করেন যশস্বী। দুই ইনিংস মিলিয়ে তিনি করেন ৩৫৭ রান। টপকে যান ধওয়ানকে। ভারতের বাঁহাতি ওপেনার ২০১১-১২ মরসুমে ইরানি কাপে অবশিষ্ট ভারতের হয়ে ৩৩২ রান করেছিলেন। ভারতীয় দলে না খেলা ব্যাটারদের মধ্যে সেটাই ছিল সর্বোচ্চ। ২০১৩ সালে টেস্ট অভিষেক হয় ধওয়ানের। যশস্বীর ইনিংসের পর টুইট করে ধওয়ান লেখেন, “যশস্বীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা। ইরানি কাপে নতুন রেকর্ড গড়ল ও। দুর্দান্ত।”
ইরানি কাপে সেই ৩৩২ রান করার পর এক বছরের বেশি সময় ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভাবে রান করছিলেন ধাওয়ান। তার পরেই টেস্ট অভিষেক হয় তাঁর। যশস্বী রঞ্জিতে রান পেয়েছেন। আগামী মরসুমেও রান করতে হবে তাঁকে। যদিও ভারতীয় দলে সিনিয়ররা নিজেদের জায়গা পাকা করে রেখেছেন। যশস্বীর পক্ষে তাঁদের টপকে এখনই জায়গা করে নেওয়া কঠিন। তবে লোকেশ রাহুলরা ছন্দে নেই। সেই জায়গায় যশস্বীকে দেখে নেওয়ার কথা ভাবতেই পারেন নির্বাচকরা।
ভারতের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা যশস্বী ইতিমধ্যেই ভারত এ দলে খেলেছেন। সেই দলের হয়েও শতরান আছে তাঁর। মুম্বইয়ের হয়ে ১৫ ম্যাচে যশস্বী ১৮৪৫ রান করেছেন। গর ৮০.২১। ন’টি শতরান, দু’টি অর্ধশতরান করেছেন। লিস্ট এ ক্রিকেটে ৩২ ম্যাচে ১৫১১ রান করা যশস্বীর গড় ৫৩.৯৬।
বেনারস থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের ভাদোহিতে জন্ম যশস্বীর। বাবা ভূপেন্দ্র রং বিক্রি করতেন। বেসরকারি স্কুলে পড়াতেন মা কাঞ্চন। চার সন্তানের লালন-পালনের পর যশস্বীকে ক্রিকেটার বানানোর খরচ জোগানো অসম্ভব হয়ে উঠছিল। তাঁকে মুম্বইয়ে নিয়ে আসার জন্য বাবাকে বুঝিয়েছিলেন যশস্বী। সেই সময় আজাদ ময়দানে তাঁবুতে থাকত হত। মুম্বইয়ে ক্রিকেট শিখতে এসে পেট চালাতে এক সময় ফুচকা বিক্রি করতেন যশস্বী।
সেই সময়ই কোচ জ্বালা সিংহের নজরে পড়ে ছোট্ট যশস্বী। ঘুরে যায় জীবনের গতিপথ। তাঁকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান জ্বালা। তিনি বলেন, “আমাকে বলেছিল, স্যর, আমি আর কোনও কিছু পারি না। শুধু ক্রিকেট খেলতে পারি। আমি আপনার সব কাজ করে দেব। যা বলবেন সব করব, ঘর পরিষ্কার করব, জুতো পালিশও করে দেব। শুধু ক্রিকেট খেলতে দেবেন। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়েছিল যে, আরে, আমিও তো এক সময় এই কথাগুলোই মুম্বই এসে কাউকে বলেছিলাম! কোথাও একটা আত্মিক সংযোগ তৈরি হয়েছিল সঙ্গে সঙ্গে।”
সেই যশস্বী এখন ভারতীয় দলে ঢোকার দাবিদার হয়ে উঠছেন। নিয়মিত রান করছেন। আইপিএলে খেলেছেন। মুম্বইয়ে ফ্ল্যাট কিনেছেন। বাবা-মাকে সেখানে এনে রেখেছেন। ধাওয়ানের রেকর্ড ভাঙা যশস্বী শিখরে ওঠার রাস্তাটায় হাঁটতে শুরু করে দিয়েছেন।