চেতেশ্বর পুজারা। ফাইল ছবি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রান পাচ্ছিলেন না অনেক দিন ধরেই। চেতেশ্বর পুজারার ব্যাটিং নিয়ে কথাও উঠছিল। টানা ব্যর্থতায় ভরসা রাখতে পারেননি জাতীয় নির্বাচকরা। ভারতীয় টেস্ট দলের নির্ভরযোগ্য এই ব্যাটারকে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজের দল থেকে ছেঁটেই ফেলেন তাঁরা।
পুজারা দল পাননি আইপিএলেও। রানের খোঁজে পাড়ি জমান বিলেতে। সাসেক্সের ডাকে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে যান পুজারা। ইংল্যান্ডে গিয়েই পুজারার ব্যাটে আবার সোনালী ছোঁয়া। তাঁকে থামানোই যাচ্ছে না। এখনও পর্যন্ত চারটি শতরান এসেছে সৌরাষ্ট্রের এই ব্যাটারের কাছ থেকে। রানই যেন তাড়া করছে পুজারাকে। খরা কাটিয়ে রানের বন্যা পুজারার ব্যাটে। এত দিনের খামতি যেন কাউন্টিতেই পূরণ করে নিচ্ছেন। কাউন্টিতে পুজারার ইনিংসগুলো পর পর সাজালে বিশ্বের যে কোনও ব্যাটারেরই হিংসে হতে পারে। ৬, অপরাজিত ২০১, ১০৯,১২, ২০৩, অপরাজিত ১৭০। স্বপ্নের ছন্দে রয়েছেন।
রাহুল দ্রাবিড় অবসর নেওয়ার পর ভারতীয় টেস্ট দলের ব্যাটিং অর্ডারে তিন নম্বর জায়গা কে পূরণ করবেন, সেই আলোচনায় বহু নাম উঠেছিল। কিন্তু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বরাবর ৫০-এর বেশি গড় রেখে খেলে যাওয়া পুজারাই ছিলেন প্রথম পছন্দ। হতাশ করেননি বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার দেবু মিত্রের প্রিয় ছাত্র। ভারতীয় দলের ‘দেওয়াল’ আরও পোক্ত করেন তিনি। ওপেনিং জুটি দ্রুত ভাঙলেও সাজঘরে দুশ্চিন্তা ঢুকতে দিত না পুজারার চওড়া ব্যাট। প্রতিপক্ষের সব আক্রমণ সামলে দিতেন অবলীলায়। সাবলীল ব্যাটিংয়ে।
আইপিএল শেষ হলেই আবার শুরু হবে ভারতের আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সূচি। প্রথম টেস্ট ইংল্যান্ডের মাটিতে। করোনা সংক্রমণের জন্য গত বছরের সিরিজের না হওয়া পঞ্চম টেস্ট খেলবে ইংল্যান্ড এবং ভারত। সেই দলে ফেরার জোরালো দাবিদার পুজারা। জাতীয় নির্বাচকরা কি কাউন্টিতে তাঁর দুরন্ত ছন্দকে উপেক্ষা করতে পারবেন। প্রশ্ন উঠছে। জাতীয় দলের চৌহদ্দিতে কিন্তু আবার চলে এসেছেন পুজারা। তাঁর বাড়তি সুবিধা ইংল্যান্ডেই রয়েছেন। সে দেশের আবহাওয়া, উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন। রান যে ভাবে তাঁর ব্যাটে ছুটে আসছে, তেমন কিন্তু আইপিএলে খুব বেশি ভারতীয় ব্যাটারের ব্যাটে আসছে না। হতে পারে কুড়ি ওভার আর পাঁচ দিনের ক্রিকেটের পার্থক্য অনেক। আইপিএলের ছন্দ দিয়ে টেস্ট দল বাছতে বসা ভুল। কিন্তু কাউন্টিতে পুজারার রানকে কীভাবে উপেক্ষা করবেন জাতীয় নির্বাচকরা?
পুজারাকে টেস্ট দলে না ফেরালে যিনি তিন নম্বরে খেলবেন তাঁকেও কিন্তু ব্যাট করতে হবে পুজারার পাহাড় প্রমাণ রানের চাপ নিয়েই।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পুজারার দ্বিশতরানের সংখ্যা এখন ১৫। সর্বকালীন তালিকায় প্রথম দশে চলে এসেছেন। এই তালিকার শীর্ষে ডন ব্যাডম্যানের ৩৭টি দ্বিশতরান। পুজারার আগে যাঁরা রয়েছেন এই তালিকায়, তাঁরা সকলে আগেই ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। বর্তমান ব্যাটারদের মধ্যে এই তালিকায় পুজারার নিকটতম বিরাট কোহলী। কিন্তু তিনি অনেকাই দূরে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর দ্বিশতরানের সংখ্যা সাত। তাঁর পরে রয়েছেন রোহিত শর্মা এবং কেন উইলিয়ামসন। দু’জনের ঝুলিতেই রয়েছে পাঁচটি করে দ্বিশতরানের ইনিংস। পুজারা ছাপিয়ে গিয়েছেন রঞ্জিত সিংহজিকেও। ছাপিয়ে গিয়েছেন গর্ডন গ্রিনিজ, ডব্লু জি গ্রেসের মতো কিংবদন্তিদের। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রতি ২৫টি ইনিংসে একটি করে দ্বিশতরান করেছেন পুজারা।
সমালোচকদের একাংশ বলেছিলেন, পুজারা শেষ। হ্যাঁ সেই শেষ ছিল, খারাপ ছন্দের। সেই হয়তো শেষ সুযোগ ছিল সমালোচকদের দাঁত-নখ বের করার। পুজারা সাধারণত ঠান্ডা মাথার ক্রিকেটার। ধীর স্থির ভাবে ব্যাটিং করেন। কিন্তু তাঁর আত্মবিশ্বাসী চোখই প্রতিপক্ষের বোলারদের দ্বন্দ্বে ফেলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। যেমন তাঁর কাউন্টির ছন্দ প্রতি ইনিংসে দ্বিধা বাড়াচ্ছে জাতীয় নির্বাচকদের।
রেলকর্মী বাবা অরবিন্দ পুজারার কাছেই ক্রিকেটের পাঠ শুরু ৩৪ বছরের ব্যাটারের। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা পুজারার নাম ইতিমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে সাসেক্সের বিশিষ্টদের তালিকায়। ইংল্যান্ডের ক্রিকেট সমালোচকরাও কুর্নিশ করছেন ভারতের ব্যাটারকে। পুজারাকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা জানেন ছন্দে ফেরা পুজারাকে থামানো কঠিন। সেরা ছন্দের পুজারাকে বাদ দিয়ে ভারতের সেরা টেস্ট একাদশ বেছে নেওয়া কঠিন। সেই কঠিন কাজটা কি করবেন নির্বাচকরা? সমালোচকরা কিন্তু প্রবল আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। করবেনও।