মহম্মদ রিজওয়ান। ফাইল ছবি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের ঠিক আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন পাকিস্তানের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার মহম্মদ রিজওয়ান। ভর্তি হতে হয় হাসপাতালেও। প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলেন রিজওয়ান। কী ভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন তিনি? জানিয়েছেন সে কথা।
বুকে প্রবল সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন রিজওয়ান। হাসপাতালে নিয়ে যেতে ২০ মিনিট দেরি হলে বড় বিপদ ঘটতে পারত। তবু অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে মাঠের বাইরে থাকতে চাননি তিনি। তাঁকে হাসপাতালের নার্স সতর্ক করে জানান এক সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকতে হবে। কিন্তু রিজওয়ানের মাথায় তখন শুধুই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল।
না ছোড় ছিলেন রিজওয়ান। তাঁর জেদের সামনে হার মানতে বাধ্য হন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড নিযুক্ত চিকিৎসকও। শেষ পর্যন্ত রিজওয়ানকে সুস্থ করার জন্য আইসিসি-র দ্বারস্থ হন তিনি। প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে আইসিসি-র নিষিদ্ধ তালিকায় থাকা একটি ইঞ্জেকশন দেন রিজওয়ানকে। এর পর দু’দিন আইসিইউ-তে কাটানো রিজওয়ান অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওপেন করে ৫২ বলে ৬৭ রানের ইনিংস খেলেন।
রিজওয়ানকে একটি সাক্ষাৎকারে নাজিবুল্লাহ সোমরো বলেছেন, ‘‘তোমার পরিস্থিতি ভাল ছিল না। ঠিক মতো শ্বাস নিতে পারছিলে না। তোমাকে সুস্থ করার জন্য একটা ইঞ্জেকশন দিতেই হত। অন্য বিকল্প ছিল না আমার কাছে। কিন্তু অ্যাথলিটদের আবার ওই ইঞ্জেকশন দেওয়া যায় না। নিষিদ্ধের তালিকায় রয়েছে। বাধ্য হয়ে যোগাযোগ করি আইসিসি-র সঙ্গে। অনুমতি পাওয়ার পর সেই ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় তোমাকে।’’
রিজওয়ান নিজের অবস্থা নিয়ে বলেছেন, ‘‘আমি চিকিৎসককে বলেছিলাম, ‘দয়া করে জানান ঠিক কী হয়েছে আমার। কেন কেউ আমাকে ঠিক মতো বলছে না।’ আমার ১২-১৩ রকম পরীক্ষা করা হয়েছিল। নার্স আমাকে জানান, আর কুড়ি মিনিট দেরি হলে পরিস্থিতি খুবই খারাপ হত। আমাকে এক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকতে হবে। তাঁকে বলি, আপনি কি পাগল! আমাকে সেমিফাইনাল খেলতেই হবে।’’
বেশ কয়েক দিন অসুস্থ বোধ করার পর হাসপাতালে যান রিজওয়ান। পরীক্ষা করে দেখা যায় তাঁর ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ হয়েছে। রিজওয়ান বলেছেন, ‘‘যখন হাসপাতালে পৌঁছই, তখন শ্বাস নিতে পারছিলাম না। নার্স আমাকে জানান, আমার শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এর বেশি কিছুই জানানো হয়নি আমাকে। যদিও তখনই জানিয়ে দিয়েছিলাম, পরের দিন সকালে একটু সুস্থ বোধ করলেই হাসপাতাল থেকে চলে যাব। সকালেও একটু দুর্বল লাগছিল। তাই বিকালেই হাসপাতাল চলে যাই দলের হোটেলে।’’
রিজওয়ান প্রত্যাশার থেকে দ্রুতই সুস্থ হয়েছিলেন। তা নিয়ে নাজিবুল্লাহ বলেছেন, ‘‘দেশের জন্য মাঠে নামার এমন তীব্র ইচ্ছা কারোর দেখিনি। অসম্ভব মনের জোর এবং চেষ্টাই ওকে সুস্থ করে তুলেছিল অপ্রত্যাশিত দ্রুত। তার পর আমরা দেখেছিলাম মাঠে রিজওয়ানের পারফরম্যান্স।’’
অসুস্থতা সত্ত্বেও মনের জোরে দেশের জন্য খেলতে চেয়েছিলেন। প্রতিযোগিতায় ভাল ছন্দে ছিলেন রিজওয়ান। তাই সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাঠের বাইরে থাকতে চাননি। শেষ পর্যন্ত সেই ম্যাচ খেলেন তিনি। সেমিফাইনালে পাকিস্তান হেরে গেলেও ওপেন করতে নেমে রিজওয়ান ৫২ বলে ৬৭ রান করেছিলেন।