ফাইল চিত্র।
রবিবার দুপুরে আবু ধাবিতে এমন একটা ম্যাচ খেলতে নামছে আফগানিস্তান, যার দিকে সে দেশের মানুষের চেয়েও সম্ভবত বেশি নজর থাকবে ভারতীয়দের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার জন্য বিরাট কোহালিদের সামনে অঙ্কটা খুব পরিষ্কার। এক, নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় পেতে হবে আফগানিস্তানকে। দুই, শেষ ম্যাচে নেট রানরেট বাড়িয়ে জিততে হবে ভারতকে।
সোমবার নামিবিয়ার বিরুদ্ধে কোহালিরা নামার আগেই পরিষ্কার হয়ে যাবে ভারতের ভাগ্য। রবিবার সন্ধ্যা সাতটার মধ্যেই জানা হয়ে যাবে আফগানিস্তান-নিউজ়িল্যান্ড ম্যাচের ফল।
এটা নিশ্চয়ই বলার দরকার নেই যে, আফগানিস্তানের চেয়ে অনেক ভাল দল নিউজ়িল্যান্ড। কিন্তু ভাল দলকেও তো হারানো সম্ভব। ক্রিকেটে এ রকম অঘটনের উদাহরণ তো কম নেই। আমি বিশ্বাস করি, কম শক্তিশালী দল হলেও নিউজ়িল্যান্ডকে হারানোর ক্ষমতা রাখে আফগানিস্তান। কিন্তু জিততে গেলে কয়েকটা ব্যাপার ঠিক মতো করতে হবে মহম্মদ নবিদের। আমি যদি আফগান দল পরিচালন সমিতির অংশ হতাম, তা হলে রণনীতির ক্ষেত্রে কয়েকটা সিদ্ধান্ত নিতাম।
ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ ছাড়া এই বিশ্বকাপে আফগানিস্তান কিন্তু টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ওরা মনে করছে, স্কোরবোর্ডে একটা রান চাপিয়ে দিয়ে তার পরে বিপক্ষকে চেপে ধরব। আমি বলব, নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে টস জিতলে আগে ফিল্ডিং নিক আফগানিস্তান। আবু ধাবির এই ম্যাচটা ওখানকার সময় দুপুর দুটোয় শুরু হচ্ছে। ফলে শিশিরের প্রভাব থাকবে না। কিন্তু তাও কেন পরে ব্যাটিংয়ের কথা বলছি? তার একটা কারণ হল, এই ম্যাচে সামনে একটা লক্ষ্য রেখে ব্যাট করুক আফগানিস্তান। তা হলে হিসেব করে খেলতে পারবে। না হলে ওদের ব্যাটারদের প্রতি বলে শট খেলার একটা প্রবণতা আছে। আগে ব্যাট করলে সেই করতে গিয়ে হয়তো কম রানে গুটিয়ে গেল। একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। আগে ব্যাট করলে ১৬০-১৭০ রান চাই। আর পরে ব্যাট করলে নিউজ়িল্যান্ডকে ১৩৫-১৪০ রানের মধ্যে আটকাতে হবে। আগে ব্যাট করুক বা পরে, বোলিংয়ের শুরুটা যেন করে রশিদ খানকে দিয়ে। আমি জানি, আফগানিস্তান হয় অফস্পিনার মহম্মদ নবি বা রহস্য স্পিনার মুজিব-উর-রহমানকে দিয়ে বোলিং শুরু করাচ্ছে। জানি না, মুজিব কতটা সুস্থ। ও খেললেও চাই রশিদ শুরু করুক।
কেন এ রকম বলছি? নিউজ়িল্যান্ডের ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ফর্মে আছে মার্টিন গাপ্টিল। এই ওপেনার যদি টিকে যায়, তা হলে দ্রুত রান তুলে দেবে। বলটা দ্রুত ব্যাটে আসবে, এটাই পছন্দ গাপ্টিলের। সেক্ষেত্রে ওর শট খেলাটা সুবিধে হয়ে যায়। আফগানিস্তানের সেরা বোলার রশিদ। তাই শুরুতেই এই লেগস্পিনারের সামনে ফেলে দাও গাপ্টিলকে। প্রথম ছ’ওভারে নিউজ়িল্যান্ডের ওপেনারকে ফিরিয়ে দিতে পারলে কিন্তু চাপে পড়ে যাবে উইলিয়ামসনরা।
সবাই জানে, আফগানিস্তানের বোলিং আক্রমণ পুরোটাই প্রায় স্পিন নির্ভর। মুজিব খেললে ১২০ বলের মধ্যে ৭২টাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাবে। কিন্তু মুজিব না খেললে কাকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করতে পারে নবি? আমি ওদের বর্ষীয়ান পেসার হামিদ হাসানের কথা বলব। ভারতের বিরুদ্ধে রোহিত শর্মারা বিশাল রান করলেও এই হামিদ কিন্তু ভাল বল করেছিল। বিশেষ করে ইয়র্কারগুলো দারুণ জায়গায় রাখছিল। এই আফগান পেসারের ইয়র্কার দেখে আমার লাসিথ মালিঙ্গার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। মালিঙ্গাও কিন্তু ডান-হাতি ব্যাটারদের ডান-পায়ের সামনে ইয়র্কারগুলো ফেলত। এই ছেলেটাকে পাওয়ার প্লে এবং শেষের দিকে কাজে লাগাতে পারে আফগানিস্তান।
আফগানদের সমস্যা হতে পারে ওদের ব্যাটিং। ট্রেন্ট বোল্ট-টিম সাউদি নতুন বলে দারুণ বল করছে। স্পিন জুটি মিচেল স্যান্টনার এবং ইশ সোধিও ছন্দে। আগেই বলেছিলাম, আফগান ব্যাটারদের একটা সমস্যা হল, সব বলে চালাতে যায়। নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে কিন্তু এই অভ্যাসটা ছাড়তে হবে। সুইং করানোর জন্য বোল্ট নতুন বলটা ব্যাটের কাছাকাছি ফেলবে প্রথম দিকে। সেটা মাথায় রেখে ড্রাইভ করতে হবে। এ ছাড়া যে স্লোয়ার বাউন্সারটা দেয়, তার জন্য ক্রিজ়ের একটু ভিতরে ঢুকে অপেক্ষা করে শট খেলতে হবে। আফগানদের শারীরিক শক্তিটা খুব বেশি। ব্যাটে বল লেগে গেলে কিন্তু অনেক দূর চলে যাবে। শট তো অবশ্যই খেলবে, শুধু একটু সতর্ক হয়ে।ভারতের দুর্ভাগ্য, শেষের দুটো ম্যাচে যে ক্রিকেটটা খেলল, তা প্রথম দিকে খেললে অন্যের উপরে এখন নির্ভর করতে হয় না। এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চাপে ছিল ভারত। বিশ্রাম পেয়েও ওই হারের ধাক্কা সামলানো যায়নি। তার বড় কারণ হল, গণমাধ্যমের প্রভাব। পাকিস্তানের কাছে ১০ উইকেটে হারের পরে যে ঝড় উঠেছিল, তা নিউজ়িল্যান্ড ম্যাচেও ভারতকে চাপে রাখে। শেষ দুটো ম্যাচে ‘কিছুই হারানোর নেই’ মনোভাব নিয়ে মাঠে নেমেছিল কোহালিরা। আর সেই ভারত কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, সবাই দেখেছে। এ বার কোহালিরা বিশ্বকাপে থাকবে না ফিরে আসবে, তা রবিবার ঠিক করে দেবে রশিদ খানরা।