কিংবদন্তি: ইন্ডিয়ান স্ট্রিট প্রিমিয়ার লিগের অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ সচিনের। মুম্বইয়ে। ছবি পিটিআই।
জীবনের প্রথম ম্যাচ খেলার আগে বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি। বন্ধুরাও ভিড় করে মাঠে এসেছিল। কিন্তু প্রথম বলেই আউট হয়ে যান সচিন তেন্ডুলকর!
দ্বিতীয় ম্যাচ খেলার আগেও একই ভাবে আমন্ত্রণ জানান বন্ধুদের। তারা এ বারও এসেছিল। কিন্তু এ বারও প্রথম বলে ফিরে যান সচিন।
পরপর দু’বার ব্যর্থ হওয়ার পরে তৃতীয় ম্যাচের আগে আর বন্ধুদের ডাকেননি। এ বার অবশ্য খাতা খোলেন সচিন। কিন্তু এক রানের বেশি করতে পারেননি। তবে সেই একটা রানই তৃপ্তি দিয়েছিল সচিনকে।
বুধবার মুম্বইয়ে ইন্ডিয়ান স্ট্রিট প্রিমিয়ার লিগের অনুষ্ঠানে এসে সচিন বলেন, ‘‘জীবনের প্রথম ম্যাচে আমি সাহিত্য সহবাসের সব বন্ধুকে ডেকেছিলাম খেলা দেখতে। ওরা এসেছিল। কিন্তু আমি প্রথম বলে আউট হয়ে যাই। ব্যাপারটা খুবই হতাশজনক ছিল।’’ বন্ধুদের কাছে এর পরে আউট হওয়ার ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন তিনি। কিংবদন্তির কথায়, ‘‘আমি বলেছিলাম, বলটা নিচু হয়ে গিয়েছে। সবাই সেটা মেনে নেয়।’’
এর পরে আসে দ্বিতীয় ম্যাচের পালা। সচিনের স্মৃতিচারণ, ‘‘দ্বিতীয় ম্যাচেও আমার ডাকে সবাই খেলা দেখতে আসে। সেই ম্যাচেও প্রথম বলে আউট হয়ে যাই। তার পরে বন্ধুদের বলি, বলটা হঠাৎ লাফিয়ে উঠেছিল। আমার দোষে নয়, পিচের দোষে আউট হয়েছি। বন্ধুরা আমার যুক্তি মেনে নেয়।’’ যোগ করেন, ‘‘এর পরে ঠিক করি, তৃতীয় ম্যাচে আর কাউকে ডাকব না। ওদের সময় নষ্ট করে কী লাভ!’’
তৃতীয় ম্যাচে অবশেষে খাতা খোলেন সচিন। এক রান করে আউট হন তিনি। আর তখনই সচিন বুঝতে পারেন, এক রান করার গুরুত্বটা। ওই একটা রানের মূল্য। সচিনের কথায়, ‘‘আমি ওই ম্যাচে এক রান করে আউট হয়ে যাই। ঘটনাটা আমার পরিষ্কার মনে আছে এখনও। খুব সম্ভবত পাঁচটা কী ছ’টা বল খেলেছিলাম।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই একটা রান করেই আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। বাড়ি ফেরার বাস যাত্রাটা খুবই উপভোগ করেছিলাম। কারণ, একটা রান করেছিলাম যে!’’
ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বলেন, ‘‘ওই দিনই আমি একটা রান করার গুরুত্বটা বুঝতে পেরেছিলাম। আমার মেজাজটাই ভাল হয়ে গিয়েছিল। পরে অনেকে আমাদের ওই একটা রানের গুরুত্ব বুঝিয়েছিল। সবাই বলেছিল, ওই একটা রান জয়-পরাজয়ের মধ্যে ফারাক গড়ে দিতে পারে।’’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একশো শতরানের মালিকের একটি শট ক্রিকেট দুনিয়ায় স্মরণীয় হয়ে আছে। স্ট্রেট ড্রাইভ। সোজা বোলারের পিছন দিয়ে মারা শট। কী ভাবে ওই শটে তিনি দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন? সচিন জানিয়েছেন, সাহিত্য সহবাসে ক্রিকেট খেলে বড় হওয়ার সময় ওই শট রপ্ত করেন। কারণ, ওখান দিয়ে মারলেই রান আসত। পরে এই শট তাঁকে হাতে ধরে নিখুঁত করে দিয়েছিলেন কিংবদন্তি কোচ রমাকান্ত আচরেকর।
সচিন সেই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘আমার প্রিয় শট ছিল স্ট্রেট ড্রাইভ। সোজা বোলারের পিছন দিয়ে মারা শট। ওই জায়গায় ফিল্ডার থাকত না। তাই রান করার জন্য ওই জায়গাটা বেছে নিয়েছিলাম।’’
এর পরে সচিন আরও যোগ করেন, ‘‘এর পরে আমি শিবাজি পার্কে গিয়ে স্যরের (আচরেকর) কাছে এই শটটা অনুশীলন করি। স্যর বলেছিলেন, ব্যাটের মুখটা সব সময় সোজা রাখবে। বলকে মারার ওটাই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।’’