৫ উইকেট নেওয়া কুলদীপ যাদবকে ঘিরে উল্লাস ভারতীয় ক্রিকেটারদের। ছবি: পিটিআই।
ধর্মশালায় টেস্টের প্রথম দিনই অনেকটা এগিয়ে গেল ভারত। প্রথমে বোলার ও তার পরে ব্যাটারেরা দাপট দেখালেন। ভারতের তিন স্পিনার মিলে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের ১০টি উইকেটই তুলে নিলেন। কুলদীপ যাদব নিলেন ৫ উইকেট। শততম রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ঝুলিতে গেল ৪ উইকেট। ২১৮ রানে শেষ হয়ে গেল ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস। পরে ব্যাট করতে নেমে অর্ধশতরান করলেন রোহিত শর্মা ও যশস্বী জয়সওয়াল। বাজে শট খেলে যশস্বী আউট না হলে দিনের শেষে দুই ওপেনারই ক্রিজ়ে থাকতেন।
দিনের শুরুটা অবশ্য হয়েছিল ইংল্যান্ডের পক্ষে। টস জেতেন বেন স্টোকস। প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। যশপ্রীত বুমরার বল শুরুতে একটু সুইং করছিল। কিন্তু ক্রিজ়ে বাউন্স কম থাকায় সামলাতে সমস্যা হচ্ছিল না ইংরেজ ওপেনারদের। জ্যাক ক্রলি ও বেন ডাকেট অপেক্ষা করছিলেন খারাপ বলের। কোনও বল ব্যাটের গোড়ায় পেলে বড় শট খেলতে ভয় পাচ্ছিলেন না তাঁরা। ফলে রান উঠছিল।
দুই পেসারের প্রথম স্পেলের পরে স্পিনারদের হাতে বল তুলে দেন রোহিত। প্রথমে অশ্বিন। পরে কুলদীপ। অশ্বিনের বল সাবধানে খেলেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার। ঝুঁকি নেননি। কিন্তু কুলদীপের প্রথম ওভারেই বড় শট খেলতে যান ডাকেট। ব্যাটে-বলে হয়নি। পিছন দিকে বেশ খানিকটা দৌড়়ে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ ধরেন শুভমন গিল। ২৭ রানে ফেরেন ডাকেট। ক্রলি ভাল খেলছিলেন। তাঁকে সঙ্গ দেন ওলি পোপ। হাত জমে যাওয়ার পরে রান তোলার গতি বাড়ান ক্রলি। অশ্বিনের বলে সামনে বিশাল ছক্কা মারেন। মধ্যাহ্নভোজের আগেই অর্ধশতরান করেন ক্রলি। বিরতির ঠিক আগেই ইংল্যান্ডকে আরও একটি ধাক্কা দেন কুলদীপ। তাঁর বলে ক্রিজ় ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে ১১ রানের মাথায় স্টাম্প আউট হন পোপ।
মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পরেই খেলার ছবিটা বদলে যায়। বিরতির ঠিক আগেই ওলি পোপকে আউট করেছিলেন কুলদীপ। বিরতির পরে দ্বিতীয় বলেই উইকেট পেতে পারতেন তিনি। তাঁর বল জ্যাক ক্রলির ব্যাটের কানায় লেগে হাওয়ায় ওঠে। ঝাঁপিয়ে ক্যাচ ধরেন সরফরাজ় খান। আম্পায়ার আউট দেননি। সরফরাজ় অনেক আবেদন করলেও রোহিত রিভিউ নেননি। পরে দেখা যায় ক্রলি আউট ছিলেন।
ক্রলিকে আউট করতে অবশ্য বেশি ক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি কুলদীপকে। তাঁর বল অফ স্টাম্পের বাইরে পরে ক্রলির ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক দিয়ে উইকেটে গিয়ে লাগে। ৭৯ রানে আউট হন ক্রলি। নিজের শততম টেস্ট খেলতে নেমে জন বেয়ারস্টো শুরু থেকেই বড় শট খেলার মানসিকতা নিয়ে নেমেছিলেন। দু’টি ছক্কাও মারেন তিনি। কিন্তু বেশি ক্ষণ টিকতে পারেননি। ২৯ রান করে কুলদীপের বলে আউট হন। ভাল ক্যাচ ধরেন উইকেটরক্ষক ধ্রুব জুরেল।
পরের ওভারেই জো রুটকে আউট করেন রবীন্দ্র জাডেজা। রুট ভেবেছিলেন বল ঘুরবে। কিন্তু বল সোজা প্যাডে গিয়ে লাগে। ২৬ রান করেন রুট। চলতি সিরিজ়ে আরও এক বার ব্যর্থ হলেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস। কুলদীপের বল বুঝতেই পারলেন না তিনি। পিছনের পায়ে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হলেন শূন্য রানে। ১৭৫ রানের মাথায় তিনটি উইকেট পড়ে ইংল্যান্ডের।
কুলদীপ, জাডেজার পরে উইকেট নেন অশ্বিনও। নিজের শততম টেস্ট খেলতে নেমে টম হার্টলিকে আউট করেন তিনি। ভাল ক্যাচ ধরেন দেবদত্ত পড়িক্কল। সেই ওভারেই আউট হন মার্ক উড। চা বিরতির আগেই ইংল্যান্ডকে অল আউট করার সুযোগ ছিল। কিন্তু দু’টি ক্যাচ মিস হওয়ায় তা হয়নি। বিরতির পরে বাকি দু’টি উইকেট তুলে নেন অশ্বিন। ২১৮ রানে অল আউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড।
দেখে মনে হচ্ছিল, এই পিচে ভারতের ওপেনারদেরও সমস্যা হবে। কিন্তু আদতে উল্টো ছবি দেখা গেল। রোহিত ও যশস্বী শুরু থেকে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে খেলা শুরু করেন। কেউ তাড়াহুড়ো করেননি। বল দেখে খেলছিলেন। রোহিতকে বেশি আক্রমণাত্মক দেখাচ্ছিল। মার্ক উডের বলে ছক্কাও মারেন তিনি। ধীরে ধীরে দলের রানকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন দুই ওপেনার।
খেলা যত গড়াচ্ছিল, তত হাত খুলছিলেন যশস্বী। নিজের অর্ধশতরান করেন তিনি। চলতি সিরিজ়ের পাঁচটি টেস্টেই অন্তত একটি করে অর্ধশতরান করলেন তিনি। তার পরে নিজেকে আর সামলাতে পারলেন না। শোয়েব বশিরের বলে পর পর দু’টি চার মারার পরে তৃতীয় বলও ক্রিজ় ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে যান। ব্যাটে-বলে হয়নি। ৫৭ রানের মাথায় ফেরেন তিনি।
রোহিত অবশ্য তাড়াহুড়ো করেননি। ধীরে সুস্থে নিজের অর্ধশতরান পূর্ণ করেন। তাঁকে সঙ্গে দেন শুভমন গিল। তাঁরাই দিনের শেষ পর্যন্ত খেলেন। প্রথম দিনের শেষে ভারতের রান ১ উইকেটে ১৩৫। রোহিত ৫২ ও শুভমন ২৬ রানে ব্যাট করছেন। ইংল্যান্ডের থেকে ভারত এখনও ৮৩ রানে পিছিয়ে থাকলেও হাতে ৯ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করবে তারা। তাই বলাই যায়, প্রথম দিনেই অনেকটা এগিয়ে গেলেন রোহিতেরা।