(বাঁদিকে) রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি। —ফাইল চিত্র।
অতীত নিয়ে ভাবতে রাজি নন রোহিত শর্মা। ভারতীয় দলের অধিনায়ক বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে এসে শুধু সামনে তাকাতে চাইছেন। প্রত্যাশার চাপ কাটাতে বিশ্বকাপের মাঝে গোপনে ফ্যাশন শোতেও অংশগ্রহণ করেছেন ভারতীয় দলের ক্রিকেটারেরা। নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের আগে গোপন তথ্য ফাঁস করে দিলেন অধিনায়ক নিজেই।
বিশ্বকাপের সময় ফ্যাশন শো? রাহুল দ্রাবিড়ের ছেলেদের কি খেলায় মন নেই? প্রশ্ন উঠতেই পারে। আসলে খেলায় ভাল ভাবে মন দিতেই নিজেদের নানা ভাবে হালকা রাখার চেষ্টা করছেন রোহিত, বিরাট কোহলিরা। তাঁদের মনোভাব হল— যা হওয়ার হয়েছে, যা হওয়ার হবে। শুধু সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে। রোহিত প্রতিযোগিতার শুরু থেকে সতীর্থদের চাপ মুক্ত রাখতে চেয়েছেন। নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের আগের দিন রোহিত দলের পরিবেশ নিয়ে বলেছেন, ‘‘আমরা যা করছি সম্মিলিত ভাবে। আমরা সবাই এক সঙ্গে চেষ্টা করছি। এক বা দু’জন ভাল খেললে হয় না। আমাদের সাপোর্ট স্টাফেরাও নিজেদের সেরাটা দিচ্ছে। সবার মধ্যে ভাল বোঝা পড়া রয়েছে। ধর্মশালায় নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলার পর আমদের একটা গোপন ফ্যাশন শো হয়েছিল। যার কথা কেউ জানে না। এমনই আমাদের দলের পরিবেশ এবং বোঝা পড়া।’’
আপনারা কি পারবেন ১৯৮৩ রা ২০১১ সালের স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে? রোহিত বলেছেন, ‘‘দেখুন ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জয়ের সময় এই দলের কেউ জন্মায়নি। ২০১১ বিশ্বকাপের সময় দলের প্রায় অর্ধেক জন ক্রিকেট খেলত না। তাই কবে কী ভাবে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম, তা ভেবে এখন কী লাভ? আমরা কী ভাবে চ্যাম্পিয়ন হতে পারি, সেটা নিয়ে ভাবছি। এটাই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’’ রোহিত মেনে নিয়েছেন প্রত্যাশার চাপের কথা। তিনি বলেছেন, ‘‘এই চাপ থাকবেই। এমন প্রতিযোগিতায় সবার চোখ আমাদের দিকে থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। ভারতীয় দল ভাল ক্রিকেট খেলবে, সবাই এটাই চায়। আমাদেরও সেটাই লক্ষ্য। এখনও পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতায় আমরা ভালই করেছি। কিন্তু এটাও ঠিক সামনের এক সপ্তাহ আমাদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের মানসিকতার বদল হচ্ছে না। প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই একটা লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি আমরা।’’
ভারতীয় দলের ভাল পারফরম্যান্সে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে অধিনায়ক রোহিতেরও। ব্যাট হাতে ভাল ফর্মে রয়েছেন তিনি। ইনিংসের শুরুতে তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিং প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে দিচ্ছে। তাতে সুবিধা হচ্ছে মিডল অর্ডার ব্যাটারদেরও। যদিও রোহিত ব্যক্তিগত কীর্তি নিয়ে চিন্তিত নন। ভারতীয় দলের অধিনায়কের বক্তব্য, ‘‘নিজেকে নিয়ে এখন তেমন কিছুই ভাবছি না। প্রতিটা ম্যাচ ধরে ভাবছি। বুধবারের ম্যাচ নিয়েই সব ভাবনা আমাদের এখন। ব্যক্তিগত প্রাপ্তি নিয়ে ভাবার সময় নয় এটা। এ সব নিয়ে ১৯ নভেম্বরের পর ভাবা যাবে। এখন শুধু একটাই কাজ। দলের জন্য যেটা দরকার, সেটা করা। বাকি সব পরে ভাবা যাবে।’’
প্রতিপক্ষ হিসাবে নিউ জ়িল্যান্ডকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন? ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে তো কিউয়িদের কাছেই হারতে হয়েছিল। এ ক্ষেত্রেও সোজাসাপ্টা রোহিত। তিনি বলেছেন, ‘‘চার বছর আগে কী হয়েছিল সেটা সবাই জানেন। ১০ বছর বা পাঁচ বছর আগে কী হয়েছে ভেবে এখন কী লাভ? সেটা তো আর বদলাবে না। অতীত সব সময় অতীত। আমরা সামনের ম্যাচ নিয়ে ভাবছি। ভাবছি এখন কী করতে পারি আমরা। ভাবছি আগামী কাল কী করতে পারব। পুরনো ঘটনা নিয়ে ভাবার সময় আমাদের এখন নেই। নিউ জ়িল্যান্ড খুবই ভাল দল। আমার মতে, এই প্রতিযোগিতার সব থেকে শৃঙ্খলাবদ্ধ দল। ওদের হালকা ভাবে নেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। বেশ ভাল ক্রিকেট খেলছে ওরা। নিউ জ়িল্যান্ড প্রতিপক্ষের মানসিকতা খুব ভাল বুঝতে পারে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপেও ওরা ধারাবাহিক ভাবে ভাল পারফরম্যান্স করেছিল। তবে আমরাও জানি ওরা কী কী করতে পারে।’’
ভারতীয় দলের ক্রিকেটারেরা হালকা মেজাজে থাকতে চাইছেন। মাঠে নেমে যেমন সাহসী ক্রিকেট খেলছে, মাঠের বাইরেও তেমন সাহসী থাকতে চাইছেন। প্রতিযোগিতার প্রতিটি মুহূর্তে উপভোগ করতে চাইছেন। সেমিফাইনালের আগে সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন ভারতীয় দলের অধিনায়ক।