বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে কি ইডেন ভরবে? —ফাইল চিত্র।
‘দাদা! ইডেনে ভারত-পাকিস্তান সেমিফাইনালের একটা টিকিট হবে?’
‘পাকিস্তান তো এখনও ওঠেইনি!’
‘উঠবে, উঠবে। ইডেনে সেমিফাইনাল হবে।’
না, কোনও অঙ্কেই এই হিসাব মেলেনি। অসম্ভব কোনও ভাবেই সম্ভব হয়নি।
ইডেন গার্ডেন্স এখনও বিশ্বকাপে আছে। বৃহস্পতিবার সেমিফাইনাল আছে। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দল আছে। টান টান লড়াইয়ের মঞ্চও প্রস্তুত। দু’দলই শহরে আছে। কিন্তু ভারত নেই, পাকিস্তানও নেই। তাই ময়দানে লাইন নেই। টিকিটের চাহিদা নেই। ক্রীড়াপ্রেমীদের চেনা হাহাকার নেই। কালোবাজারির অভিযোগ নেই। ইডেনের সামনে ভিড় নেই।
আছে শুধু টিকিট। হ্যাঁ, ৪৮ ঘণ্টা আগেও বৃহস্পতিবার ইডেন ম্যাচের টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে।
বিশ্বকাপে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা আছেন। তাঁদের নিয়ে কলকাতাবাসীর আবেগ, উন্মাদনা রয়েছে। কিন্তু ইডেন নিয়ে এই শহরের ক্রিকেট জ্বর উধাও।
যে সংস্থার বিরুদ্ধে টিকিট ‘উধাও’ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল কয়েক দিন আগে, তারাও আছে। অনলাইনে টিকিট কেনার জন্য আর্জি আছে। তবু কলকাতা পুলিশের তৎপরতা নেই। অনলাইনে টিকিট বিক্রি করা সংস্থা, ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (সিএবি) বা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কর্তাদের তলব নেই। ময়দান বা এন্টালি থানায় নতুন কোনও এফআইআরের খবর নেই। সিএবির সামনে বিক্ষোভ নেই। ২১ জনের গ্রেফতারি নেই। ১২৭টি টিকিটও বাজেয়াপ্ত হয়নি।
কলকাতা এখনও বিশ্বকাপে আছে। কালী পুজোর পর ভাইফোঁটা। শহরবাসী উৎসব, ছুটির মেজাজে আছেন। ইডেনের কিছু দর্শকাসনও খালি আছে। তবু নজর নেই মানুষের। বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল শুরু হতে ৪৮ ঘণ্টাও বাকি নেই। অথচ অনলাইনে টিকিট বিক্রি সংস্থার সাইটে ‘কিউ’ নেই। ‘সোল্ড আউট’ লিখতে পারছেন না কর্তারা। তবে কি ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে টিকিট নিয়ে পুলিশি তৎপরতার পর সব কিছু ‘স্বচ্ছ’? উৎসবের এই বিতর্কে না ঢুকেও বলা যায়, অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা সেমিফাইনাল থেকে কিছুটা হলেও মুখ ফিরিয়ে রেখেছে শহর।
গত ৯ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে অনলাইনে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় সেমিফাইনালের টিকিট বিক্রি। ছ’দিন পরেও খদ্দের নেই। মঙ্গলবার বিকালেও অনলাইনের দোকানে লাইন নেই। কলকাতায় আসছেন না রোহিত, কোহলিরা। তাঁরা নিউ জ়িল্যান্ডের সঙ্গে খেলবেন মুম্বইয়ে। সেই ম্যাচের টিকিট শেষ। ফাইনালের টিকিট পড়ে নেই একটাও। কয়েক দিন আগেই পাকিস্তান-ইংল্যান্ড ম্যাচের দিনেও ইডেনের প্রায় ৭০ শতাংশ আসন ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। যারা নাকি এ বারের বিশ্বকাপে ব্যর্থদের তালিকায়। তবু সেমিফাইনালের টিকিট বিক্রি হচ্ছে না!
হচ্ছে, তবে ধীরে। বেশ ধীরে। চাহিদার গনগনে আঁচ কই? সিএবির আয়োজনে খামতি নেই। বিসিসিআইয়ের উদ্যোগে কমতি নেই। তবু মন ভিজছে না মানুষের। ক্রিকেটকে প্রেম দিচ্ছে না তিলোত্তমা। সব ভালবাসা যেন রোহিত, কোহলিদের জন্য। নেভিল কার্ডাস বলেছিলেন, স্কোর বোর্ড গাধা। বিশ্বকাপও কি তাই? রোহিত, কোহলিরাই সব। এ দেশে ক্রিকেট অনেকটা ধর্মের মতো। ক্রিকেটারেরা ঈশ্বর বা বীরের সম্মান পান। তাঁরাই আকর্ষণ। তাঁরাই ধর্মের ‘আফিম’। ক্রিকেট জনতা তাঁদের পিছনে ছোটে। বিশ্বকাপ বা বিসিসিআইয়ের আয়োজনের পিছনে নয়। মুম্বই, আমদাবাদে টিকিটের হাহাকার। বিশ্বকাপের দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছে কলকাতা। দুটো সেমিফাইনাল হতে হয়, তাই হচ্ছে। যেন বিশ্বকাপের নিয়মরক্ষার ম্যাচ!
পাড়ায় পাড়ায় মিষ্টির দোকানে ভিড় আছে। উপহার কেনার তাড়া আছে। উৎসবের আমেজ আছে। শহরে বিশ্বকাপের ম্যাচও আছে। খেলা দেখার টিকিটও আছে। নেই শুধু ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ। সব উন্মাদনা যেন ভারতীয় দল শুষে নিয়ে চলে গিয়েছে মুম্বইয়ে। শেষ বেলায় কি বাড়বে টিকিটের চাহিদা? তেমন লক্ষণ দেখায়নি মঙ্গলবারের শহর।
প্রথম সেমিফাইনালের টিকিট পড়ে রয়েছে। ৯০০, ১৫০০, ২৫০০, ৩০০০ টাকা— হরেক রকম টিকিট। ইডেন ডাকছে। ইডেন চেনা মুখগুলোর অপেক্ষায়। শহর কাজে ফিরছে। বুধবারই যে উৎসব শেষ। বৃহস্পতিবার আবার কাজ শুরুর দিন। মধ্য কলকাতার বাসিন্দা আইনজীবী শ্রুতি দত্ত, ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের দুটো টিকিটের জন্য সব রকম ভাবে চেষ্টা করেও পাননি। সেমিফাইনাল নিয়ে শ্রুতির বক্তব্য, ‘‘ভারত নেই। আমিও নেই। ১৬ নভেম্বর থেকে আদালতের কাজ শুরু হয়ে যাবে। আর সম্ভব নয়।’’ বেসরকারি সংস্থার কর্তা সন্দীপন পালের বক্তব্য, ‘‘কোহলিদের খেলাই দেখতে পেলাম না, সারা দিন বসে এই খেলা কে দেখবে।’’
এগিয়ে চলেছে শহর। তাল মেলাতে পারছেন না বিশ্বকাপ!