তাঁর নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজ় হেরেছে ভারত। অধিনায়কত্বের বোঝা কি ক্রমশ ভারী হচ্ছে রোহিতের? —ফাইল চিত্র
কয়েক বছর আগেও তাঁকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে তুলনা করা হত। বলা হত, ধোনির মতোই মাঠে মাথা ঠান্ডা রাখেন রোহিত শর্মা। সেই কারণেই আইপিএলে এত সাফল্য তাঁর। কিন্তু দেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কি সেই ঠান্ডা মাথা গরম হয়ে উঠছে! মাঝেমাঝেই মেজাজ হারাচ্ছেন রোহিত। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তৃতীয় এক দিনের ম্যাচে মাঠ ও মাঠের বাইরে ৫ বার রেগে গেলেন ভারত অধিনায়ক। কখনও সতীর্থের উপর। তো কখনও প্রশ্ন শুনে।
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং চলাকালীন ১১তম ওভারে হার্দিক পাণ্ড্যর বলে ক্যাচ তোলেন ট্রাভিস হেড। কিন্তু ক্যাচ ফস্কান শুভমন গিল। শুভমন ক্যাচ ফস্কানোর পরে দেখা যায় যথেষ্ট বিরক্ত রোহিত। মাঠেই তাঁর রাগ বোঝা যাচ্ছিল। তখনও পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার ১ উইকেটও পড়েনি। তাই ক্যাচ ফস্কানো মেনে নিতে পারছিলেন না রোহিত।
পরে মাঠে কুলদীপ যাদবের উপর দু’বার রেগে যান ভারত অধিনায়ক। এক বার রিভিউ না নেওয়ার জন্য। দ্বিতীয় বার রিভিউ নেওয়ার জন্য। প্রথম ক্ষেত্রে ভারতের বাঁহাতি স্পিনারের বল ডেভিড ওয়ার্নারের পায়ে লাগে। আউটের আবেদন করা হলে আম্পায়ার নট আউটের সিদ্ধান্ত জানান। কিন্তু রোহিতকে রিভিউ নিতে নিষেধ করেন কুলদীপ। তিনি মনে করেছিলেন যে, রিভিউ নিয়ে লাভ হত না। এমন সময় মাঠের বড় স্ক্রিনে রিপ্লে দেখানো হয়। যা দেখে রোহিতের মনে হয় রিভিউ নিলে আউট হয়ে যেতেন ওয়ার্নার। সেই সময় রেগে গিয়ে বেশ কিছু বলতে দেখা যায় তাঁকে। বিরাট সঙ্গে সঙ্গে রোহিতের কাছে এসে কথা বলেন। তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন কিছু। রোহিতকে তবুও বিড়বিড় করতে দেখা যায়।
দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ম্যাচের ৩৯তম ওভারে কুলদীপের বল অ্যাস্টন অ্যাগারের প্যাডে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে আউটের আবেদন করেন কুলদীপ। আম্পায়ার আউট দেননি। সামনে চলে আসেন রোহিত। কুলদীপ তখন রোহিতকে অনুরোধ করেন ডিআরএস নিতে। রোহিত প্রথমে রাজি হননি। উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুলও বলেন, বল উইকেটে ছিল না। কিন্তু কুলদীপের জোরাজুরিতে হেসে ফেলে সময় বাকি থাকার ২ সেকেন্ড আগে ডিআরএস নেন রোহিত। তার পরেই মাথা নীচু করে ফিরে যেতে দেখা যায় কুলদীপকে। ভাবখানা এমন, যেন তিনি মজা করে ডিআরএস নিতে বলেছেন। রোহিত সেটাকে সত্যি বলে ধরে নিয়েছেন। কুলদীপের হাবভাব দেখেই রেগে যান রোহিত। প্রকাশ্যে সতীর্থ বোলারের উপর ক্ষোভপ্রকাশ করতে থাকেন। চোখে আঙুল দেখিয়ে রোহিত বোঝানোর চেষ্টা করেন, কুলদীপ কি চোখে দেখতে পান না? কুলদীপও পাল্টা অধিনায়ককে ‘সরি’ বলেন। রোহিতের রাগ অবশ্য তাতে থামেনি। একটি ডিআরএস নষ্ট হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে যান তিনি।
ম্যাচের পর ধারাভাষ্যকারের সামনে দলের ক্রিকেটারদের উপর ক্ষোভপ্রকাশ করেন রোহিত। ভারত অধিনায়ক বলেন, ‘‘আমার মনে হয় না খুব বড় রানের লক্ষ্য ছিল আমাদের। তবে দ্বিতীয়ার্ধে উইকেট একটি চ্যালেঞ্জিং হয়ে গিয়েছিল। তবু বলব, আমরা ভাল ব্যাট করতে পারিনি। জুটি তৈরি করা প্রয়োজন ছিল। একটাও ভাল জুটি তৈরি করতে পারিনি আমরা। এই ধরনের উইকেটে খেলেই আমরা বড় হয়েছি। এই রকম উইকেটেই আমরা খেলা শিখেছি। অথচ আমরা অনেকেই খারাপ ভাবে আউট হলাম। এ ভাবে খেললে জিততে পারব না। সেটা ক্রিকেটারদের বুঝতে হবে।’’
সাংবাদিক বৈঠকে ভারতীয় দলের চোট-আঘাত নিয়ে প্রশ্ন করা হয় রোহিতকে। তাতে রেগে যান তিনি। পাল্টা প্রশ্ন করেন, তিনি কি চিকিৎসক। রোহিত বলেন, “আমরা সত্যিই চিন্তিত। এমন ক্রিকেটারদের পাচ্ছি না, যারা প্রথম একাদশে থাকার যোগ্য। সবাই যাতে খেলতে পারে সেই সুযোগ আমরা তৈরি করে দিতে চাই। ক্রিকেটারদের ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের ব্যাপারে এখন আগের থেকেও বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। তাই ক্রিকেটারদের বিশ্রাম দেওয়ার প্রবণতাও আগের থেকে বেড়েছে।”