ফাইল চিত্র।
সিরিজ় নির্ণায়ক ম্যাচে যে কোনও দলের জয়ের কান্ডারি হতে কে না চায়? ম্যাচ জেতানোর স্বপ্নই দেখেন প্রত্যেক ক্রিকেটার। কিন্তু সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করা সহজ নয়। ঋষভ পন্থ যেন তা অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন। ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়ই হোক, কি ইংল্যান্ডের মাটিতে ওয়ান ডে সিরিজ়। বিদেশের মাটিতে সেঞ্চুরি করে দেশকে জেতানোই বাকিদের থেকে আলাদা করে দিয়েছে পন্থকে। দলের উপরের সারির ব্যাটসম্যানেরা যখন ব্যর্থ, পন্থই তখন রক্ষাকর্তা। বার্মিংহ্যামে সিরিজ়ের পঞ্চম টেস্টে ভারত হারলেও লড়াই করার রসদ দিয়েছিলেন ঋষভ। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক দিলীপ বেঙ্গসরকর মনে করেন, ম্যাচ জেতানোর কৌশল শেখা উচিত পন্থের থেকে।
আনন্দবাজারকে ফোনে বেঙ্গসরকর বলছিলেন, ‘‘৭২ রানে চার উইকেট পড়ার পরে সত্যি ভেবেছিলাম, ওয়ান ডে সিরিজ় ভারত পাচ্ছে না। কিন্তু ঋষভ ক্রিজ়ে থাকায় টিভির সামনে থেকে উঠতে পারিনি। ও যতক্ষণ মাঠে থাকে, ভারত কিন্তু ম্যাচ থেকে বেরিয়ে যায় না।’’ আরও বললেন, ‘‘মইন আলির বলে ওর স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার সময় ব্রিসবেনের সেই দৃশ্য চোখের সামনে ভাসছিল। টিম পেনও একই ভাবে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ নষ্ট করেছিল নেথান লায়নের বলে। তার পরে যা হয়েছিল, সকলেই জানেন। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেও দেখলাম, আউট করার সুযোগ হাতছাড়া করলে ও ক্ষমা করে না।” উল্লসিত কর্নেলের সংযোজন, “ম্যাচ জেতানোর কৌশল ঋষভ রপ্ত করে ফেলেছে। আমি মনে করি, ম্যাচ জেতানোর প্রক্রিয়া পন্থের কাছ থেকে শেখা উচিত সকলের। উঠতি ক্রিকেটারেরাও এই সব ইনিংস থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে।’’
প্রাক্তন ভারতীয় উইকেটকিপার কিরণ মোরেও মুগ্ধ পন্থের রাজকীয় ব্যাটিং দেখে। এক সময় তাঁর কাছে অনুশীলন করেছেন ঋষভ। মোরের কথায়, ‘‘পন্থ এখন সিনিয়র ক্রিকেটার। ও এই রকমের ম্যাচ জেতায় বলেই ব্যাটিং অর্ডারে উপরের দিকে নামানো হচ্ছে। টেস্টে এত দিন বিস্ময়কর সব ইনিংস খেলে কঠিন পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও এ বার ওর ব্যাট থেকে বিশেষ ইনিংস দেখা যাচ্ছে।” যোগ করলেন, “ওর ব্যাটিং দেখে নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি, ধোনির যোগ্য উত্তরসূরি। ওর মতোই দায়িত্ব নিয়ে ম্যাচ জেতাতে শুরু করেছে।’’
পরিণত হার্দিক পাণ্ড্যও মুগ্ধ করেছেন প্রাক্তন তারকাদের। বেঙ্গসরকরের কথায়, ‘‘১৩৩ রানের জুটি গড়েছে পন্থ ও হার্দিক। এই জুটিটা না গড়তে পারলে ম্যাচ জেতা সম্ভব হত না। ব্যাটিংয়ের চেয়েও বোলার হার্দিককে দেখে আরও ভাল লাগছে। টেস্ট দলেও ওকে ফিরিয়ে আনা যায়। ওর সিমের ব্যবহার কিন্তু অনেক পেসারের চেয়ে ভাল।’’
পন্থ, হার্দিককে নিয়ে মুগ্ধ বেঙ্গসরকর অবশ্য চিন্তিত বিরাট কোহলির ছন্দ নিয়ে। তিনি মনে করেন, বিরাটকে যদি সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভাবাই হয়, তা হলে এত বিশ্রাম দেওয়া হচ্ছে কেন? তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্রাম তাদেরই দেওয়া যায়, যারা ভাল ছন্দে রয়েছে এবং টানা ম্যাচ খেলছে। বিরাট কিন্তু টানা খেলছে না। ছন্দেও নেই।’’ যোগ করেন, ‘‘ছন্দহীন ব্যাটসম্যানকে ফর্মে ফেরাতে হলে আরও ম্যাচ খেলানো উচিত। যত বেশি ম্যাচ খেলবে, তত বেশি রান করার সুযোগ পাবে। একেবারেই ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার কথা বলছি না। বিরাটের মাপের ব্যাটসম্যানকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেই ফিরে আসতে হবে।” প্রাক্তন অধিনায়কের জন্য তাঁর পরামর্শ, “আগে যেমন বিপক্ষ বোলারদের ত্রাস হয়ে উঠত, সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করুক। ও নিজেই তো কত বলেছে, ম্যাচের আগে পরিস্থিতিটা কী রকম হবে সেটা চোখ বন্ধ করে ভাবত। সে ভাবেই স্মরণীয় ম্যাচগুলো মনে করুক।’’