(বাঁ দিকে) লোকেশ রাহুল এবং যশস্বী জয়সওয়াল (ডান দিকে)। ছবি: এক্স (টুইটার)।
টেস্ট ক্রিকেটে ফিরল ভারতীয় দল। আসলে পার্থের ২২ গজ যশস্বী জয়সওয়াল, লোকেশ রাহুলদের টেস্ট ক্রিকেটের ব্যাটিং করতে বাধ্য করল। ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সিরিজ় থেকে সাদা বলের মেজাজে টেস্ট খেলছিল গৌতম গম্ভীরের দল। নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে চুনকাম হয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। লাল বলকে প্রাপ্য সম্মান দিতেই ভারতীয় ব্যাটিংকে আবার ঝকেঝকে দেখাচ্ছে। বিদেশের মাটিতে ভারতের ওপেনিং জুটিকে দেখতে ভাল লাগল। দু’জনেই অর্ধশতরান পেলেন। দিনের শেষে অপরাজিতও থাকলেন। রবিবার যশস্বীর শতরানের অপেক্ষায় থাকল ভারত।
ভালর শেষ নেই। তাই দ্বিতীয় ইনিংসে যশস্বী, লোকেশদের সংযমী ব্যাটিং কতটা কার্যকর হবে, তা বোঝা যাবে খেলা এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে। শুক্রবার দু’দলের ব্যাটারদের খেলা দেখে ম্যাথু হেডেন বলেছিলেন, ‘‘টেস্ট ক্রিকেটে কী শট মারব, তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কোন বল ছাড়ব তা বুঝতে পারা।’’ একটুও ভুল বলেননি অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ওপেনার। ক্রিকেট শিক্ষার্থীদেরও প্রাথমিক পাঠ হিসাবে বল ছাড়তে শেখান কোচেরা। ব্যাটারদের বল বুঝতে পারা জরুরি। বল বুঝতে পারলে ২২ গজে টিকে থাকা যায়। যত বেশি ক্ষণ পিচে থাকা যায়, তত বেশি রান করারও সুযোগ থাকে। সাধারণ এই তথ্য অজানা নয় ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদেরও। তবু আধুনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের প্রবণতায় ঢাকা পড়ে যায় টেস্ট ব্যাটিংয়ের কৌশল।
লাল বলের ক্রিকেটের ধৈর্য, সংযম, পড়ে থাকার মানসিকতা জরুরি। ভাল বলকে প্রাপ্য সম্মান দিতে হয়। সাদা বলের রঙিন ক্রিকেটের দাপটে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে রঙিন বলের সাদা ক্রিকেট। পার্থের ২২ গজ সেই গ্রহণ মুক্ত করল ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপকে। ২০০৪ সালে সিডনি টেস্টে ওপেনিং জুটিতে ১২৩ রান করেছিলেন বীরেন্দ্র সহবাগ এবং আকাশ চোপড়া। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের আরও একটা শতরানকারী ওপেনিং জুটি পেতে ২০ বছর চলে গেল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্মের পর প্রথম বার।
অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস ১০৪ রানে শেষ হওয়ায় যশপ্রীত বুমরার দল ৪৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ লিড নেয়। বিদেশের মাটিতে একটা দল প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পরও ৪৬ রানে লিড! ঘরের মাঠে নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে চুনকাম হওয়া ভারতই করে দেখাল। করে দেখালেন বুমরা, মহম্মদ সিরাজ, হর্ষিত রানারা। ব্যাটিং ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে মিচেল স্টার্ক (২৬) কিছুটা লড়াইয়ের চেষ্টা করেছিলেন মাত্র। তিনিই প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার সফলতম ব্যাটার! ৩০ রানে ৫ উইকেট বুমরার। হর্ষিতের ৩ উইকেট ৪৮ রানে। সিরাজ ২ উইকেট নিলেন ২০ রান খরচ করে। ভারতীয় দলের এই দাপটই উধাও হয়ে গিয়েছিল গত বেঙ্গালুরু থেকে। পার্থের পিচ চেনা মেজাজে ফিরিয়ে দিল ভারতীয় দলকে।
পার্থের ২২ গজ শনিবার প্রথম দিনের মতো সবুজ ছিল না। শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে ঘাস। পিচের রং কিছুটা ধুসর দেখিয়েছে। নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়া ঘাসের উপর প্যাট কামিন্স, জশ হেজ়লউডদেরও খানিকটা নিস্তেজ দেখাল। ভারতকে বেকায়দায় ফেলেও সুবিধা ধরে রাখতে না পারার হতাশা স্পষ্ট ছিল কামিন্সদের চেহারায়। সেই সুযোগ নিখুঁত ভাবে কাজে লাগালেন ভারতের দুই ওপেনার। জুতসই বল পেলে যশস্বী যেমন পুল করতে দ্বিধা করেননি, তেমন ভাল বল ছেড়ে দিয়েছেন অ্যালেক্স ক্যারের জন্য। রাহুল ছিলেন আরও সতর্ক। ঝুঁকিহীন থাকার চেষ্টা করেছেন সারাক্ষণ। অস্ট্রেলিয়ার পিচে সব সময়ই বল ব্যাটে আসে ভাল। শট খেলা সহজ। তবে বেছে নিতে হয় সঠিক বল। অপেক্ষা করতে হয় শিকারির মতো। শনিবার যশস্বী-রাহুল জুটি ঠিক সেটাই করলেন। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে যা করা উচিত। প্রতিটি বল খেলছেন বুঝে। প্রলোভনে পা দেননি কেউ। প্রথম ইনিংসে ওভার প্রতি ৩.০২ রান তোলা ভারতীয় দল দ্বিতীয় ইনিংসে ওভার প্রতি তুলল ৩.০১ রান। একই বোলারদের বিরুদ্ধে। প্রথম দিনের তুলনায় কিছুটা সহজ পিচে। যশস্বী-রাহুলকে পুরস্কৃত করল ধৈর্য। যথাযথ সম্মান পেতেই তাঁদের ব্যাটে রান ফিরিয়ে দিল লাল বল। লাভবান হল ভারতও।
দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসের রান ১৭২। এগিয়ে ২১৮ রানে। হাতে ১০ উইকেট। যশস্বী অপরাজিত ৯০ রানে। রাহুল খেলছেন ৬২ রানে। ম্যাচের এখনও তিন দিন বাকি। অপটাস স্টেডিয়ামে ঝকঝক করছে ভারতীয় ক্রিকেট। গম্ভীর মস্তিষ্ক নিশ্চিত ভাবে মগ্ন জয়ের ভাবনায়। ছাত্রদের পারফরম্যান্সে স্বস্তি লাভ করতে পারেন শিক্ষকও।