—ফাইল চিত্র
স্বপ্নভঙ্গ। গ্রুপ পর্বে সব ম্যাচ জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা, ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে রেকর্ড গড়ার পরেও খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে বাংলাকে। রঞ্জি ট্রফির সেমিফাইনালে মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে হার অভিমন্যু ঈশ্বরনদের। কোন কোন কারণে হারতে হল বাংলাকে?
দল নির্বাচন
সেমিফাইনালে পেসার ঈশান পোড়েলকে বসিয়ে স্পিনার প্রদীপ্ত প্রামাণিককে দলে নেয় বাংলা। আগের ম্যাচে তিন পেসার, এক স্পিনারে খেলেছিল বাংলা। পেসারদের মধ্যে ঈশান ছাড়া ছিলেন মুকেশ কুমার, আকাশ দীপ। এই ম্যাচে দুই স্পিনার এবং দুই পেসারে দল সাজান অরুণ লাল। ঈশানকে বসিয়ে দেওয়ায় আগের ম্যাচের কম্বিনেশন ভেঙে যায়। সায়নশেখর মণ্ডল পেসার হলেও তিনি মূলত ব্যাটিং অলরাউন্ডার। পেসার হিসাবে ঈশানের জায়গা নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। গোটা ম্যাচেই ঈশানের অভাব টের পেল বাংলা। মুকেশ, আকাশ চাপ তৈরি করলেও সেই সুবিধা নেওয়া গেল না। তৃতীয় দিনে স্পিনাররাও ব্যর্থ হওয়ায় বাংলার বোলিং আক্রমণ দুর্বল হয়ে যায়। প্রদীপ্ত এবং শাহবাজ দু’জনেই বাঁহাতি স্পিনার। একই ধরনের দু’জন স্পিনারকে খেলিয়েও কিছুটা মুশকিলে পড়ল বাংলা। এই দু’জন দ্বিতীয় ইনিংসে যখন উইকেট পেয়েছেন, একসঙ্গে পেয়েছেন। কিন্তু ব্যর্থও হয়েছেন একই সঙ্গে। বৈচিত্র্যর অভাব দেখা গেল বাংলা দলে।
অভিষেক রামনের ব্যর্থতা
দুই ইনিংসেই শূন্য করলেন অভিষেক রামন। বাংলার ওপেনার মাঠে নামার আগেই কুমার কার্তিকেয়র ভয় কাঁপছিলেন। প্রথম ইনিংসে তিনটি বল খেলেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে আউট প্রথম বলেই। কার্তিকেয় বলছিলেন, রামন কী ভাবছেন, সেটা তিনি বুঝে গিয়েছিলেন। কার্তিকেয় জানতেন রামন প্রথম থেকেই ধরে নিয়েছিলেন তাঁর বল ঘুরবে। সেই কারণেই সোজা বল করেন তিনি। বুঝতে না পেরে উইকেট দেন রামন। পর পর দুই ইনিংসে শূন্য রানে ওপেনার ফিরতেই চাপ বেড়ে যায় বাংলা শিবিরে। সেই চাপ প্রথম ইনিংসে মনোজ-শাহবাজ জুটি কাটিয়ে দিলেও দ্বিতীয় ইনিংসে কাটানো গেল না।
একাধিক ক্যাচ ফেলা
গোটা ম্যাচে একের পর এক ক্যাচ ফেলতে দেখা গেল বাংলা দলকে। কখনও স্লিপে ক্যাচ ফেললেন অনুষ্টুপ মজুমদাররা, কখনও আবার সিলি পয়েন্টে। শাহবাজ আহমেদ নিজের বলেই ক্যাচ ফেললেন। ক্যাচ ফেললে ম্যাচ তো হাতছাড়া হবেই। সেটাই হল। একের পর এক সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে ম্যাচটাই হারিয়ে গেল বাংলার হাত থেকে। গুরুত্বপূর্ণ সময় রজত পাটীদারদের ক্যাচগুলি ধরতে পারলে বাংলার লক্ষ্য অনেকটা কম হতে পারত। সে ক্ষেত্রে শেষ ইনিংসে ৩৫০ রানের বোঝা ঘাড়ে চেপে বসত না।
শট নির্বাচন
বাংলার প্রথম ইনিংসে মনোজ তিওয়ারি ১০২ রান করেন। কিন্তু তার পরেই অফ স্টাম্পের বাইরের একটি বলে সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন তিনি। যে সময় তাঁর ব্যাট থেকে বড় রান আশা করছিল বাংলা, সেই সময় ওই শট খেলতে গিয়েই আউট হন বাংলার অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটার। আর তিনি ফিরতেই বাংলার বাকি ব্যাটাররাও সাজঘরে ফেরেন অল্প সময়ের মধ্যেই। দ্বিতীয় ইনিংসেও মনোজের আউট নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। যে সময় ধরে খেলে ইনিংস গড়ার কথা ভাবছিল বাংলা, সেই সময় হঠাৎ ক্রিজ থেকে বেরিয়ে এসে স্পিনারকে আক্রমণ করতে যান মনোজ। বল ব্যাটের নীচের দিকে লেগে ক্যাচ উঠে যায়। বাংলার অনেক ব্যাটারই ভুল সময়ে ভুল শট খেলে আউট হন। তরুণ অভিষেক পোড়েলও অযথা ব্যাট চালাতে গিয়ে উইকেট দেন।
মধ্যপ্রদেশের স্পিনারদের দাপট
কুমার কার্তিকেয় এবং সারাংশ জৈনের বল বুঝতেই পারেননি বাংলার ব্যাটাররা। দুই ইনিংস মিলিয়ে তাঁরা নেন ১১টি উইকেট। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলা কার্তিকেয় যখনই বল করতে আসেন, তখনই বাংলার ব্যাটারদের চাপে ফেলেন। প্রথম ইনিংসে মনোজ তিওয়ারি সুইপ এবং রিভার্স সুইপে মধ্যপ্রদেশের স্পিনারদের লাইন, লেংথ ঘেঁটে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিছুটা সাফল্যও পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সুইপ শট মারতে গিয়েই উইকেট দেন মনোজ। দুই ইনিংসেই নতুন বলে শুরু করেন মধ্যপ্রদেশের স্পিনাররা। সাফল্যও পান। মধ্যপ্রদেশের স্পিনারদের দাপটেই বাংলার ব্যাটাররা লাইনচ্যুত।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।