মুখোমুখি চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত এবং অমল মজুমদার। —ফাইল চিত্র
মুম্বই কোচ হিসাবে রঞ্জি জয়ের ১৯ বছর পার। সেই সময় চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের অধীনে খেলতেন অমল মজুমদার। রঞ্জির ইতিহাসে সব থেকে বেশি রানের মালিক। জন্ম সূত্রে দু’জনেই মুম্বইকর। এ বারের রঞ্জির ফাইনালে লড়াই মুম্বই বনাম মুম্বইয়ের, ছাত্র বনাম গুরুর, ইতিহাস বনাম বর্তমানের।
মধ্যপ্রদেশ শেষ বার যখন রঞ্জি ফাইনাল খেলেছিল, তখন সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন পণ্ডিত। ভারতের প্রাক্তন উইকেটরক্ষক সে বার রঞ্জি জেতাতে পারেননি মধ্যপ্রদেশকে। সেই ইতিহাস বদলানোর সুযোগ কোচ পণ্ডিতের সামনে। আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পণ্ডিত বললেন, “অতীত নিয়ে ভাবব না। যা চলে গিয়েছে, তা যাক। সব ম্যাচ খেলতে নামার আগে জেতার কথাই ভাবি, ফাইনালে আমি এবং আমার দল সেটা ভেবেই নামব।” তিনি অতীত ভুলতে চাইলেও নিশ্চয়ই মনে রাখতে চাইবেন মুম্বই এবং বিদর্ভের মতো দলকে কোচ হিসাবে রঞ্জি জেতানোর সুখস্মৃতি।
চন্দ্রকান্ত কোচ হিসাবে কেমন তা বোধ হয় সব থেকে ভাল জানেন মুম্বই দলের বর্তমান কোচ অমল মজুমদার। এই দু’জন মিলেই যে মুম্বইকে দু’বার রঞ্জি জিতিয়েছিলেন ২০০৩ এবং ২০০৪ সালে। পণ্ডিত যদিও এই লড়াইকে দুই কোচের লড়াই বলতে নারাজ। তিনি বললেন, “ম্যাচটা অমল মজুমদার বনাম চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের নয়, মুম্বই বনাম মধ্যপ্রদেশের। আমরা বাইরে থেকে চেষ্টা করব দলকে সাহায্য করতে। সেটাই আমাদের কাজ।” পণ্ডিতের প্রাক্তন ছাত্রের মুখেও প্রায় একই কথা। অমল বলেন, “এটা ফাইনাল ম্যাচ। আমরা সেটার প্রক্রিয়ার দিকে নজর দিতে চাই। সেটা সাজঘর থেকে শুরু হবে, মাঠে গিয়ে শেষ হবে। এটার বাইরে আর কোনও কিছুর দিকে আমাদের নজর নেই।”
মুম্বইয়ের হয়ে ধারাবাহিক ভাবে রান করছেন সরফরাজ খান। —ফাইল চিত্র
ভারতের হয়ে পাঁচটি টেস্ট এবং ৩৬টি এক দিনের ম্যাচ খেলা পণ্ডিতের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৩৮টি ম্যাচে রয়েছে ৮২০৯ রান। মুম্বই, মধ্যপ্রদেশ ছাড়াও তিনি খেলেছেন অসমের হয়ে। উল্টো দিকে অমল ভারতের হয়ে না খেললেও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে করেছেন ১১,১৬৭ রান। দুই কোচের মধ্যে বয়সের ফারাক ১৩ বছরের। ফারাক রয়েছে অভিজ্ঞতাতেও। কিন্তু দু’জনেই মুম্বই ক্রিকেটে দীক্ষিত। যে মুম্বই ৪১ বার রঞ্জি জিতেছে। পাঁচ বছর পর ফের তারা ফাইনালে। পণ্ডিত জানেন, মুম্বই দলে পৃথ্বী শ, যশস্বী জয়সবাল, সরফরাজ খান, ধবল কুলকর্নির মতো ভারতীয় ক্রিকেটের পরিচিত নাম রয়েছে। তাঁর দলে তেমন কোনও নাম নেই। আইপিএলে ইডেনে শতরানের আগে রজত পাটীদারকেই বা ক’জন চিনতেন, মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলা কুমার কার্তিকেয়র নামই বা ক’জন শুনেছেন? পণ্ডিত -মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে তাঁরাই উড়িয়ে দিয়েছিলেন বাংলাকে। সেই সাহসটাই তো ভরে দেন পণ্ডিত।
যে সাজঘরে পণ্ডিত থাকেন, সেখানে আওয়াজ শোনা যায় না। বাংলাকে সেমিফাইনালে হারানোর পরও সাজঘরে বেশি সময় কাটাননি মধ্যপ্রদেশের ক্রিকেটাররা। এটাই যে নিয়ম। খেলা শেষ মানেই হোটেলে ফিরে যাওয়া। শৃঙ্খলা মেনে চলা। যে শৃঙ্খলা পণ্ডিত পেয়েছেন রমাকান্ত আচরেকরের থেকে, অশোক মাঁকড়ের থেকে। সেই শৃঙ্খলার মন্ত্রই তিনি দেন তাঁর দলের ক্রিকেটারদের। পণ্ডিত বিশ্বাস করেন ক্রিকেটে এবং জীবনে শৃঙ্খলা প্রয়োজন। সেটাই সাফল্যের চাবিকাঠি। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে থাকার সময়ও তো এই শৃঙ্খলাই মানতে শিখিয়েছিলেন ক্রিকেটারদের।
পণ্ডিত বিশ্বাস করেন দলের মধ্যে একাত্মবোধ থাকাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। তাই দলের সকলে একসঙ্গে হোটেলে চা খায়, আড্ডা দেয়, ভিডিয়ো গেম খেলে, বাইরে ঘুরতে যাওয়া বা সিনেমা দেখতে যাওয়ার বদলে। রজতদের মধ্যে একাত্মবোধ আনতে পেরেছেন বলেই আইপিএলের মাঝেও তাঁরা যোগাযোগ রেখেছিলেন পণ্ডিতের সঙ্গে। প্রতিটা ক্রিকেটারকে সাদা বল থেকে লাল বলের ক্রিকেটে ফিরিয়ে আনতে সেই যোগাযোগটাই সাহায্য করেছে বলে মত পণ্ডিতের। তিনি বললেন, “মানসিক ভাবে প্রস্তুতিটা নেওয়া চলছিল আইপিএলের মধ্যেই। আমরা ভাগ্যবান যে রজত, কার্তিকেয়রা এক ম্যাচের মধ্যেই পরিবর্তনটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছে।”
মধ্যপ্রদেশের হয়ে কুমার কার্তিকেয়র স্পিন বিপক্ষকে বিপদে ফেলেছে বার বার। —ফাইল চিত্র
পণ্ডিতের প্রাক্তন ছাত্র অমল আবার ক্রিকেটারদের জীবনে বেশি ঢুকতে পছন্দ করেন না। তিনি বলেন, “আমার দলে অসংখ্য প্রতিভা রয়েছে। আমি খুশি তারা পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেদের মেলে ধরেছে দেখে। আমি বিশ্বাস করি কোচ হিসাবে আমার তাদের মানসিক দিকটা বোঝা উচিত। প্রতিটা ক্রিকেটারের নিজের জগত প্রয়োজন। আমি নিজে ক্রিকেটার হিসাবে সেটা চাইতাম। এখন কোচ হিসাবে সেটা দিতেও পছন্দ করি। তাই সন্ধ্যা ছ’টার পর ক্রিকেটাররা কী করছে, তা দেখতে যাই না।”
কুড়ি বছরের বেশি সময়ের কোচিং অভিজ্ঞতা রয়েছে পণ্ডিতের। মুম্বই ছাড়াও বিদর্ভকে পর পর দু’বছর রঞ্জি জিতিয়েছিলেন ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে। বিভিন্ন দলকে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে পণ্ডিত এখন মধ্যপ্রদেশের কোচ। যে দলকে রঞ্জি ফাইনালে তুলেও জেতাতে পারেননি, সেই দলটার হয়ে সেই অসম্পূর্ণ কাজটাই শেষ করতে চাইবেন তিনি।
পাঁচ বছর আগে মুম্বইয়ের যে দল রঞ্জি ফাইনাল খেলেছিল, সেই দলে ছিলেন পৃথ্বী এবং ধবল। তাঁরা বাদে বাকি সকলেই প্রথম বার রঞ্জি ফাইনাল খেলছেন। মধ্যপ্রদেশ দলের সকলেই প্রথম বার রঞ্জি ফাইনালে। বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে বুধবার থেকে লড়াইয়ে নামবে মুম্বই এবং মধ্যপ্রদেশ, কিন্তু সাজঘরে থাকবেন দুই রঞ্জিজয়ী মুম্বইকর।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।