প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকেই দলের জয়ে উইকেটের পিছনে এবং সামনে অবদান রাখলেন অভিষেক পোড়েল। ছবি: সিএবি
কটকের বারাবাটি স্টেডিয়ামে বাংলা ক্রিকেটের আরও এক নক্ষত্রের জন্ম হল। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকেই দলের জয়ে উইকেটের পিছনে এবং সামনে অবদান রাখলেন অভিষেক পোড়েল।
বরোদার বিরুদ্ধে রঞ্জি ম্যাচের প্রথম ইনিংসে বাংলার ৮৮ রানের মধ্যে ২১ রান করেন ১৮ বছরের তরুণ। ভাল শুরু করেও বড় রান পাননি। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য বাংলাকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন অভিষেক। তাঁর অপরাজিত ৫৩ রানের ইনিংস বাংলাকে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে।
এ তো গেল উইকেটের সামনের পারফরম্যান্স। চন্দননগরের বাসিন্দা তরুণ উইকেটরক্ষক দু’ইনিংস মিলিয়ে চারটি ক্যাচ নিয়েছেন। অনূর্ধ্ব ১৯ পর্যায়ের ক্রিকেটে বাংলার হয়ে ভাল পারফরম্যান্সের পুরস্কার পেয়েছেন। ডাক পেয়েছেন বাংলার সিনিয়র দলে। তার আগেই অবশ্য অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের রিজার্ভ সদস্য হিসেবে উড়ে যান ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
অভিষেক ম্যাচে অভিষেকের এ হেন পারফরম্যান্সের অন্য একটি তাৎপর্যও রয়েছে। ছবি: সিএবি
অভিষেক ম্যাচে অভিষেকের এ হেন পারফরম্যান্সের অন্য একটি তাৎপর্যও রয়েছে। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর শনিবার ঋদ্ধিমান সাহা বলেছিলেন, তিনি আইপিএল-এর পর রঞ্জি খেলতে পারেন। কিন্তু শুরু থেকেই অভিষেক যে ভেল্কি দেখালেন, তাতে বাংলা দলেও কি ঋদ্ধির দরজা বন্ধ হয়ে গেল? এই রঞ্জি ম্যাচ না খেলার জন্যই ঋদ্ধিকে একহাত নিয়েছিলেন জাতীয় নির্বাচক কমিটির প্রধান চেতন শর্মা। কিন্তু রঞ্জির প্রথম ম্যাচেই কোচ, সতীর্থ, কর্তাদের মন জিতে নিয়েছেন অভিষেক। এই ছন্দ ধরে রাখতে পারলে বাংলা দলে উইকেটরক্ষকের জায়গা থাকতে পারে অভিষেকের দস্তানাতেই।
বাংলার ফাস্ট বোলার ঈশান পোড়েলের খুরতুতো ভাই অভিষেক। অভিষেক ম্যাচে দাদার বলেও ক্যাচ নিয়েছেন। তাঁর পারফরম্যান্সে খুশি কোচ অরুণ লাল, সহকারী কোচ সৌরাশিস লাহিড়ি, অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরণ, মনোজ তিওয়ারিরা।
বাংলার কোচ অরুণ লাল আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছেন, ‘‘নতুন ছেলেটা স্পেশাল। একদম ম্যাচ উইনার। ভয়হীন ক্রিকেট খেলল।’’ সহকারী কোচ সৌরাশিসও উচ্ছ্বসিত। তিনি বললেন, ‘‘অভিষেক ম্যাচেই এমন কৃতিত্ব। দলের জয়ে অবদান রাখল। ব্যাটিং, কিপিং দুটোই দারুণ করল। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ দলের পর বাংলার সিনিয়র দলে এসেছে। শাহবাজ আহমেদের সঙ্গে জুটিটা তৈরি না করলে বাংলার জয় এত সহজ হত না।’’
কোচেদের মতো উচ্ছ্বসিত সতীর্থরাও। বাংলার অধিনায়ক অভিমন্যু বলছেন, ‘‘অভিষেক খুবই প্রতিভাবান খেলোয়াড়। অনূর্ধ্ব ১৯ পর্যায়ে ভাল পারফরম্যান্স করে ও এই জায়গাটা অর্জন করেছে। অনূর্ধ্ব ১৯ পর্যায়ে অনেক রান করেছে। ভাল ফর্মেও রয়েছে এই মরসুমে। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপেও গিয়েছিল। ওকে বলা হয়েছিল, এতদিন যেভাবে খেলেছে, সে ভাবেই খেলতে। যখন ব্যাট করতে নেমেছিল, তখনও প্রায় একশো রান বাকি ছিল। সেখান থেকে ঠাণ্ডা মাথায় শাহবাজের সঙ্গে ম্যাচ বার করেছে। অভিষেক ম্যাচেই এমন খেললে আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়।’’
দলের সিনিয়র ব্যাটার তথা রাজ্যের মন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি প্রশংসা করলেন অভিষেকের মানসিকতার। মনোজ বললেন, ‘‘দুর্দান্ত খেলেছে। খুব ভাল লাগল ওকে দেখে। মানসিকতা খুব ভাল। মরসুমটা ওর যেমন যাচ্ছে, সেটা ধরে রাখতে পারলে বাংলার হয়ে খেলার অনেক সুযোগ পাবে। প্রথম ম্যাচের প্রথম ইনিংসেও ভাল ব্যাট করছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে তো দুর্দান্ত খেলল। বেশ ভাল লাগল দেখে। অনেক দিন পর একটা ছেলে দেখলাম, যে প্রতিপক্ষকে চাপে রেখে খেলতে চায়।’’
কোচ, কর্তাদের মতোই অভিষেকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বাংলার ক্রিকেট কর্তারা। সিএবি সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া বলেছেন, ‘‘এরকম তরুণদের দেখলে ভাল লাগে। অভিষেক ম্যাচে অসাধারণ খেলল অভিষেক পোড়েল। এই ইনিংসে ও নিজের খেলোয়াড়ি চরিত্র এবং পরিণতিবোধের পরিচয় দিয়েছে।’’ সিএবি সচিব স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় অভিষেক পোড়েলকে নিয়ে বলছেন, ‘‘অভিষেকেই একটা অমূল্য অপরাজিত অর্ধশতরান করল। দুর্দান্ত।’’