—ফাইল চিত্র
ঝাড়খণ্ডকে হারিয়েই সেমিফাইনাল নিয়ে ভাবনা শুরু করে দিল বাংলা শিবির। শুক্রবার ম্যাচ শেষ হতেই সাজঘরে আলোচনায় বসেন অরুণ লাল, সৌরাশিস লাহিড়ী, অভিমন্যু ঈশ্বরনরা। ১৪ জুন থেকে মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল খেলবে বাংলা। সেই ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল ঝাড়খণ্ডকে হারানোর পরের মুহূর্ত থেকেই।
শনিবার বাংলা দল বিশ্রাম নেবে। কোয়ার্টার ফাইনালে জেতার আনন্দ থাকলেও বাংলা জানে এখনও কাজ বাকি। আনন্দবাজার অনলাইনকে বাংলার কোচ অরুণ লাল বললেন, “আমি চাইছিলাম বাংলা নিজের সেরাটা খেলুক। ব্যাটিং সে ভাবে দানা বাঁধছিল না। কোয়ার্টার ফাইনালে ন’জন ব্যাটার পঞ্চাশের উপর রান করে রেকর্ড গড়েছে। এটা আত্মবিশ্বাস দেবে। আমরা নিজেদের শক্তি অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করব।”
সহকারী কোচ সৌরাশিস বলছিলেন মধ্যপ্রদেশ লড়াকু দল। বাংলাকে জমি ছাড়বে না। তিনি বললেন, “মধ্যপ্রদেশ মানে চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের দল। ওরা প্রতিটা বলে লড়াই করবে। আমাদের সব সময় জয়ের জন্য ঝাঁপাতে হবে। কখনও গা ছাড়া মনোভাব দেখানো যাবে না।” অরুণ লাল যদিও মধ্যপ্রদেশ নিয়ে আলাদা করে ভাবতে রাজি নন। তিনি বললেন, “বিপক্ষে কে খেলছে না খেলছে ভাবি না। এটা এগারো বনাম এগারোর খেলা। আমরা নিজেদের খেলার উপর ফোকাস করব। ৪০ বছর ধরে সারা দেশের ক্রিকেট দেখছি। এই মুহূর্তে বাংলা দলই সেরা। নিজেদের ক্ষমতার ৬০ শতাংশ খেলতে পারলেই আমরা যে কোনও দলকে হারিয়ে দেব।” মনোজ বললেন, “সেমিফাইনাল খেলছে মানে সেটা ভাল দল। ম্যাচের দিন যে দল ভাল খেলবে সে জিতবে। পাঁচ দিনের খেলা, ওঠা নামা থাকবেই। লড়াই করতে হবে। ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে জয় ভুলে নতুন করে শুরু করতে হবে।”
বাংলা দলে মনোজ তিওয়ারি, অনুষ্টুপ মজুমদার, অভিমন্যু ঈশ্বরনদের মতো ক্রিকেটাররা যেমন রয়েছেন, তেমনই অভিষেক পোড়েল, সুদীপ ঘরামির মতো তরুণরাও রয়েছেন। সিনিয়র এবং জুনিয়রদের যদিও আলাদা করে দেখতে রাজি নন বাংলার কোচ। অরুণ লাল বললেন, “দলে সবাই সমান। মনোজকেও যেমন রান করে দলে থাকতে হবে, সুদীপকেও তাই। কারও জন্য আলাদা কিছু নেই।”
বাংলা দলের অধিনায়ক অভিমন্যু প্রশংসা করলেন অলরাউন্ডারদের। তিনি বললেন, “দল ভাল খেলছে। সেমিফাইনালে উঠে ভাল লাগছে। সুদীপ প্রথম ইনিংসে খুব ভাল ব্যাট করেছে। সায়নশেখর মণ্ডল এবং শাহবাজ আহমেদ খুব ভাল খেলেছে। সেরা সময় চলছে ওদের। অধিনায়ক হিসাবে ভাল লাগছে এমন দু’জন অলরাউন্ডারকে দলে পেয়ে। আশা করব ওরা এই ভাবে খেলে যাবে।” অলরাউন্ডারদের কথা বললেন অরুণ লালও। তিনি বললেন, “আমি বিশ্বাস করি ক্রিকেটে অলরাউন্ডাররাই পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। সায়ন, শাহবাজ এই ম্যাচে ব্যাটে, বলে যে ভাবে খেলল সেটা দুর্দান্ত। দলে ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়ের মতো অলরাউন্ডারও রয়েছে। অন্য দলের থেকে এগিয়ে থাকতে হলে সাত থেকে দশ নম্বর ব্যাটারদের রান করতে হবে। প্রথম ছয়ের মধ্যে চার জন ব্যাটার সব দলেই রান করতে পারে। বাকিরা পার্থক্য গড়ে দেয়।”
অরুণ লাল প্রশংসা করেন দলের সাপোর্ট স্টাফদের। কয়েক বছর ধরে বাংলার ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলার পিছনে তাঁদের কৃতিত্ব দিচ্ছেন কোচ। অরুণ লাল বললেন, “সৌরাশিস এমন একটা ছেলে যে সারা দিন বাংলার ক্রিকেটের জন্য ভাবছে। আমাদের দলে সেরা ভিডিয়ো বিশ্লেষক রয়েছে। ট্রেনার সঞ্জীব (দাস) ভাল কাজ করছে। সকলে একসঙ্গে কাজ করছে বলেই দল ছন্দে রয়েছে।” শুক্রবার বাংলা দলকে অভিনন্দন জানাতে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন অভিষেক ডালমিয়া। সিএবি প্রধান ফুলের তোড়া তুলে দেন ক্রিকেটারদের হাতে। অভিষেক বললেন, “বাংলার ক্রিকেট সংস্থা যে দলের পাশে আছে সেটা বোঝানোর জন্যই আমি এসেছি। বিশ্বরেকর্ড গড়ায় সকলে খুব খুশি। সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে মধ্যপ্রদেশ কঠিন প্রতিপক্ষ। ওরা ভাল খেলছে। বাংলাকেও নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে হবে। ক্রিকেটারদের বলেছি তারা যেন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী না হয়ে পরে। এটাও মনে রাখা দরকার যে তারা অন্যতম সেরা দল এবং ফাইনাল আর এক ধাপ দূরে।”
সহকারী কোচ সৌরাশিস মনে করেন এই ধারাবাহিকতা দেখাতে পারলে আগামী পাঁচ বছরে বাংলা একাধিক ট্রফি জিততে পারে। ট্রফি জয়ের স্বপ্ন দেখছেন অরুণ লালও। তিনি ক্রিকেটার হিসাবে বাংলার হয়ে রঞ্জি জিতেছেন, এ বার চান কোচ হয়ে জিততে। রঞ্জি জয়ের স্বপ্ন দেখেন মনোজও। নিজেদের সেই স্বপ্ন সত্যি করার জন্য আর বাকি দু’টি জয়। নিজেদের সেরাটা দিতে চান মনোজরা।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।