Ranji Trophy

Ranji Trophy 2022: ‘বহিরাগত’ শাহবাজকে বাংলায় ঠাঁই দিয়েছিলেন মনোজ, শক্তি জুগিয়েছেন অরুণ লাল

হরিয়ানার ছেলে হয়ে বাংলা দলে সুযোগ। খেলেননি বয়সভিত্তিক ম্যাচও। শাহবাজের দলে ডাক পাওয়া নিয়ে উঠেছিল নানা প্রশ্ন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২২ ১৭:৪৬
Share:

বাংলার ভরসা শাহবাজ। —ফাইল চিত্র

চার বছর আগে বাংলার হয়ে প্রথম সুযোগ পেয়েছিলেন শাহবাজ আহমেদ। মনোজ তিওয়ারিই তাঁকে খুঁজে আনেন ক্লাব ক্রিকেট থেকে। সেই মনোজের অধিনায়কত্বেই অভিষেক ঘটেছিল শাহবাজের। সেই মনোজের সঙ্গে জুটি বেঁধেই বাংলাকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন রঞ্জির সেমিফাইনালে। যদিও তৃতীয় দিনের শেষে ব্যাকফুটে বাংলা।

Advertisement

শাহবাজকে দলে নেওয়ার জন্য চার বছর আগে জোর করেছিলেন মনোজ। সেই সময় শাহবাজকে ‘বহিরাগত’ বলা হত। হরিয়ানায় জন্ম শাহবাজের। ২০১৩ সালে তিনি বাংলায় ক্লাব ক্রিকেট খেলতে আসেন। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট না খেলেই ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন শাহবাজ। তিনি বলেন, “প্রমোদ চান্ডিলা আমার বন্ধু। ও সেই সময় বাংলার হয়ে খেলছে। প্রমোদ আমাকে কলকাতায় নিয়ে আসে। ক্লাব ক্রিকেটে নিয়ে যায়। সেখানেই খেলতে থাকি। বাংলার হয়ে খেলব সেটা ভাবিনি। কিন্তু সারা দেশে কলকাতার ক্লাব ক্রিকেটই সেরা। তাই এখানেই খেলছিলাম।”

সেই ক্লাব ক্রিকেটেই মনোজের নজরে আসেন শাহবাজ। বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক বলেন, “আমি সব সময় এমন স্পিনার দলে চাইতাম, যে ব্যাট করতে পারে। রঞ্জিতে এমন স্পিনারই প্রয়োজন। সে রকম এক জনকেই খুঁজছিলাম। দল নির্বাচনের সময় সব ক্লাবের ক্রিকেটারদের পরিসংখ্যান দেখা হয়। সেখানে শাহবাজকে দেখলাম ৫০-এর উপর উইকেট নিয়েছে আবার ১২০০-১৫০০ রানও করেছে। আমি ওকেই দলে চাইলাম।”

Advertisement

তাঁকে যে সহজে পেয়ে গিয়েছিলেন মনোজ, তেমনটা নয়। অন্য রাজ্যের ক্রিকেটারদের খেলানোর ব্যাপারে বাংলার ক্রিকেট সংস্থার বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। সে সব ঠিক মতো পেরিয়ে এলেও শাহবাজকে শুনতে হয়েছে যে তিনি বহিরাগত। মনোজ বলেন, “আমি যত দূর জানি অন্য রাজ্যের ক্রিকেটারদের জন্য যে নিয়ম সিএবি-র রয়েছে তা শাহবাজ মেনে খেলছে। সেই জন্যই দলে তাকে নিয়েছেন নির্বাচকরা। তাই তাকে বাইরের ক্রিকেটার বলার কোনও মানেই হয় না। এটা ঠিক যে শাহবাজকে বার বার শুনতে হয়েছে যে ও বাইরের ছেলে। কিন্তু ফলাফল সকলের সামনে আছে। ওকে দলে নিয়ে যে কোনও ভুল হয়নি, সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে ও।”

বাংলা দলে সুযোগ পেয়ে শাহবাজ নিজেও মনোজের প্রতি কৃতজ্ঞ। বাংলার অলরাউন্ডার বলেন, “কলকাতায় যখন প্রথম খেলতে শুরু করি, তখন মনোজ ভাইয়াই আমাকে প্রথম লক্ষ করে। ওর নেতৃত্বেই প্রথম বাংলার হয়ে খেলি। ক্লাব ক্রিকেট থেকে সোজা ঘরোয়া ক্রিকেটে সুযোগ পাওয়া সহজ নয়। আমি রাজ্যের হয়ে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলিনি। তাও মনোজ ভাইয়া আমাকে সুযোগ দেয় বাংলার সিনিয়র দলের হয়ে খেলার।”

শুধু মনোজ নন, শাহবাজের উত্থানের পিছনে রয়েছেন কোচ অরুণ লালও। বাংলার বর্তমান কোচ দিল্লির লোক। তিনি বাংলার হয়ে খেলেছিলেন, বাংলাকে রঞ্জিও জিতিয়েছিলেন। তাঁকে কোচ হিসাবে পেয়ে উপকৃত হয়েছেন বলেই মনে করেন শাহবাজ। অরুণ লাল সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে পছন্দ করেন, কোচের এই গুণটাই পছন্দ বাংলার অলরাউন্ডারের। তিনি বলেন, “বাংলার হয়ে দুটো ম্যাচ খেলার পরেই আমাকে বসিয়ে দেওয়া হয়। তখন ব্যাট করার সময় আমি পা অনেকটা ফাঁক করে দাঁড়াতাম। অরুণ স্যর আমাকে বলেন যে এই ভাবে দাঁড়ালে ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করা কঠিন। তাই দল থেকে বাদ দিয়ে উনি বলেন আমার ব্যাট করার সময় দাঁড়ানোর ধরন পাল্টাতে। সেটা করার পর থেকে আমি ব্যাট হাতে সাফল্য পেতে শুরু করি। রঞ্জিতেও সাফল্য পাই।”

শাহবাজ চান অরুণ লালের জন্য রঞ্জি জিততে। তিনি বলেন, “অরুণ স্যর খুবই ইতিবাচক কথা বলেন। উনি আমাদের বলেছেন যে আমরা ভারতের হয়েও খেলতে পারি। এই ইতিবাচক মনোভাব আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। আমার খেলায় অনেক উন্নতি প্রয়োজন। তবেই জাতীয় দলে খেলার আশা করতে পারব। ছন্দ ধরে রাখতে হবে, দলকে ম্যাচ জেতাতে হবে। বিশেষ করে ব্যাট হাতে। সুযোগ পেলে ধারাবাহিকতা দেখাতে হবে।”

আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলেছিলেন ২৭ মে। আমদাবাদে সেই ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে খেলেই চলে আসেন বাংলার হয়ে খেলতে। ৬ জুন থেকে শুরু হয় রঞ্জি কোয়ার্টার ফাইনাল। মাত্র দশ দিনের ব্যবধানে সাদা বল থেকে লাল বলের ক্রিকেটে ঢুকে পড়া। কী ভাবে দুই ধরনের ক্রিকেটেই সফল শাহবাজ?

বাংলার হয়ে সেমিফাইনালে মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে শতরান করেন এই অলরাউন্ডার। রঞ্জিতে এটাই তাঁর প্রথম শতরান। শাহবাজ বলেন, “আইপিএল মানেই জোরে শট। রঞ্জি সম্পূর্ণ অন্য খেলা। সাদা বলের থেকে লাল বল অনেক বেশি সুইং করে, তাই লাল বলে আমি অনেক দেরিতে খেলার চেষ্টা করি। আরও একটা জিনিস প্রয়োজন লাল বলের ক্রিকেটে। বল ছাড়তে জানতে হবে। নেটে আমি সেটাই অনুশীলন করেছি বার বার।”

শাহবাজ যে ব্যাট করতে পারেন সেটা সকলে জানেন। কিন্তু তাঁকে মূলত বাঁহাতি স্পিনার হিসাবেই খেলান হয়, যিনি ব্যাটটাও করেন। বেঙ্গালুরু দলে তাই তাঁকে ব্যাট হাতেও দলের ভরসা হয়ে উঠতে দেখে অবাক হয়েছিল সকলে। শাহবাজ আইপিএলের মঞ্চে সকলকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি বল যেমন করেন, ব্যাটটাও ততটাই ভাল করতে পারেন। এ বারের আইপিএলে ১৬ ম্যাচে ২১৯ রান করেন শাহবাজ। সেই সঙ্গে বল হাতে তাঁর সংগ্রহ চার উইকেট। ব্যাটিংয়ে যে দল তাঁর উপর ভরসা করেছে এই পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ।

আইপিএল শেষ করে দু’দিনের মধ্যে বেঙ্গালুরুতে দলের সঙ্গে যোগ দেন শাহবাজ। সেখানে প্রথম ইনিংসে নেমেই ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে ৭৮ রান করেন। পরের ম্যাচে করেন ১১৬ রান। পরিস্থিতি বুঝে ব্যাট করার মতো পরিণত বোধ দেখা গিয়েছে তাঁর ইনিংসে। আইপিএলে শাহবাজকে নির্দ্বিধায় ড্রাইভ, পুল করতে দেখা যেত। রঞ্জিতে খেলতে নেমে পেসার একের পর এক বল ছাড়লেন। খারাপ বল পেলে চারও মারলেন। মনোজ তিওয়ারির সঙ্গে তাঁর ১৮৩ রানের জুটি বাংলাকে লড়াইয়ে রাখল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement