পূজা বস্ত্রকর। —ফাইল চিত্র
মেয়ে যখনই ক্রিকেট খেলার জন্য বাবার কাছে টাকা চাইত, তখনই বাবা প্রশ্ন করত, কেন এ ভাবে সে টাকা নষ্ট করছে! মেয়ের একটাই জবাব ছিল। এক দিন দেশের হয়ে খেলবে সে। ছোট্ট পূজার সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। শুধু দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলা নয়, এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশকে মাটি ধরিয়ে দিয়েছে তাঁর বোলিং। শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেট নিয়েছেন পূজা বস্ত্রকর। তাঁর শুরুটা হয়েছিল গলিতে ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে।
বাড়ির সব থেকে ছোট মেয়ে পরিবারের নাম উজ্জ্বল করেছে। মেয়ের এই উত্থানে অবাক বাবা বন্ধন রাম। তিনি কোনও দিনই পূজার খেলা নিয়ে বিশেষ আগ্রহ দেখাননি। আবার নিষেধও করেননি। ছোট থেকেই জোরে বল করতেন পূজা। সেই গতিই তাঁকে ভারতীয় দলে জায়গা করে দিয়েছে। সেই ক্রিকেটই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে এনে দিয়েছে অর্থ। আর সেই কারণেই বন্ধন চান না, মেয়ের রোজগার করা অর্থ অপচয় করুক।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে ১৫ লক্ষ টাকার গাড়ি বাবাকে উপহার দিয়েছিলেন পূজা। বন্ধন তাতে খুশি হননি। এমনকি মহিলাদের আইপিএলে পূজাকে যখন ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স কিনেছিল তখনও বাবা চেয়েছিলেন, সেই টাকা ব্যাঙ্কে জমা রাখতে। খরচ না করতে। যদিও বাবা-মায়ের আরামের সব খেয়াল রেখেছেন পূজা।
এশিয়ান গেমসে পদক তালিকা। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
বন্ধন কোনও দিন ভাবেননি, মেয়ে সত্যি সত্যি কোনও দিন ভারতের হয়ে খেলবে। সেটা করে দেখিয়েছেন পূজা। বন্ধন বলেন, ‘‘চার বছর বয়স থেকে পূজা ক্রিকেট খেলে। আট-ন’বছর বয়স থেকে গলিতে ছেলেদের সঙ্গেই ও খেলত। তার পরে আশুতোষ শ্রীবাস্তবের চোখ পড়ে পূজার উপর। ওর অ্যাকাডেমিতে পূজাকে ভর্তি করে দিই। তার পরে আর পিছন ফিরে তাকায়নি পূজা। শুধু মন দিয়ে খেলেছে। আজ ওর কৃতিত্বে আমরা গর্বিত।’’
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম ওভারেই জোড়া উইকেট নেন পূজা। সেখান থেকে আর ফিরতে পারেনি তারা। শেষ পর্যন্ত ৪ ওভারে ১৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন তিনি। পূজার দাপটে বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে ভারত।