ছন্দে: চলতি বিশ্বকাপে বাটলার করে ফেলেছেন ২৪০ রান। ছবি: টুইটার।
তাঁর রিভার্স সুইপ থেকে স্কুপ শট মুগ্ধ করেছে ক্রিকেটবিশ্বকে। পাশাপাশি বিশাল সব ছক্কা দেখে বিস্মিত ক্রিকেট ভক্তরা। এই বিশ্বকাপের একমাত্র সেঞ্চুরি এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। এখনও পর্যন্ত চলতি প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি ছয়ও মেরেছেন তিনি। ১৩টি। কেন জস বাটলার এত ভয়ঙ্কর? তাঁর সাফল্যের রসায়নটাই বা কী?
ইংল্যান্ড ওপেনারের উত্থান কাছ থেকে দেখেছেন তাঁর উঠতি বয়সের দুই কোচ। টনটনে বাটলারের স্কুলের কোচ ফিল লুইস এবং সমারসেটে আসার পরে জেসন কের। দু’জনের কাছে রয়েছে বাটলার-রহস্যের চাবিকাঠি। মঙ্গলবার ইংল্যান্ড থেকে জেসন বলছিলেন, ‘‘বাটলারের কব্জি যে রকম শক্তিশালী, তেমনই নমনীয়। তাই কব্জির মোচড়ে মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে বল পাঠাতে সমস্যা হয় না। এমনকি, রিভার্স সুইপ বা স্কুপ শটেও শক্তিটা ব্যবহার করতে পারে।’’ এই শটই কিন্তু আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে নিউজ়িল্যান্ডের কাছে।
এই শক্তিশালী কব্জির নেপথ্যের রহস্যটাও ফাঁস করলেন সমারসেটের প্রধান কোচ। জেসন বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে হকি, গল্ফ, রাগবি, ফুটবল— সব রকমের খেলাতেই দক্ষ ছিল বাটলার। হকি, গল্ফ খেলার সুবাদে ওর কব্জি যেমন শক্তিশালী হয়েছে, তেমনই নমনীয় থেকে গিয়েছে।’’ প্রাক্তন দুই কোচ মুগ্ধ বাটলারের দক্ষতায়। বলছেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে নানা খেলায় পারদর্শী ছিল বাটলার। পুরোদস্তুর অ্যাথলিট। তাই উইকেটকিপিং বলুন বা মাঠের যে কোনও জায়গায় ফিল্ডিং, সব কিছুই দারুণ দক্ষতার সঙ্গে করে।’’
নিজেদের শটের জোর বাড়ানোর জন্য এখন নানা ধরনের প্রস্তুতি নেন ক্রিকেটারেরা। সমারসেটেরই টম ব্যান্টন যেমন ভারী বলে ব্যাট করতেন। ওই বলে ছয় মারতে পারলে সাধারণ বলে বড় হিট নেওয়াটা সহজ হয়ে যায়। জানা যাচ্ছে, বাটলার নিজেও একটা বিশেষ পদ্ধতি নিয়েছিলেন শটের শক্তি বাড়াতে। বক্সিংয়ের পাঞ্চিং ব্যাগ ক্রমাগত ব্যাট দিয়ে মারতেন। বক্সার যে ভাবে পাঞ্চিং ব্যাগে ঘুসি মেরে শক্তি বাড়ান, বাটলার তেমন করে নিজের কাঁধের শক্তি বাড়াতেন। যাতে ক্রিকেট বল গ্যালারিতে পাঠাতে পারেন।
বাটলার সমারসেটে খেলার সময় তাঁকে দেখার অভিজ্ঞতা থেকে জেসন বলছিলেন, ‘‘ওর সবচেয়ে বড় গুণ হল, দ্রুত শিখতে পারে। আর সব সময় শেখার চেষ্টাটা আছে।’’ যে কারণে দ্রুত নিজেকে পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন ইংল্যান্ডের এই ব্যাটার। স্পিনের বিরুদ্ধে বাটলারের অন্যতম অস্ত্র হল সুইপ এবং রিভার্স সুইপ। দুই কোচই জানাচ্ছেন, নেটে এই ধরনের শট নিয়মিত খেলেন বাটলার। সঙ্গে আরও একটা ব্যায়াম করেন তিনি। যা তাঁর রিভার্স শটের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। মেডিসিন বল নিয়ে সেটা শরীর বেঁকিয়ে একবার ডান-দিকে, একবার বাঁ-দিকে ছুড়ে দেন।
জেসনের কথায় জানা যাচ্ছে আরও একটা বাটলার-টেকনিক সম্পর্কে। যাকে বেসবল টেকনিকও বলা যেতে পারে। বোলার বলটা ছাড়ার সময় বাটলারের শরীরটা সামান্য পিছনে চলে যায়। তার পরে আবার দুলিয়ে সামনে নিয়ে এসে শট খেলেন। এর সঙ্গে বেসবলের সম্পর্ক কী? ‘‘বেসবলে ব্যাটার প্রথমে শরীরটা পিছনে ঝুঁকিয়ে দেয়। এর পরে সেখান থেকে গতি বাড়িয়ে শরীরটা সামনে এনে বলটা মারে। এর ফলে পুরো শক্তিতে বলটা মারা যায়,’’ ব্যাখ্যা কোচের। কোনও সন্দেহ নেই, এই টেকনিক কাজে লাগিয়ে সফল বাটলারও। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর ১০২ মিটারের বিশাল ছয় সেটাই প্রমাণ করে দেয়।
একটা ব্যাপার স্পষ্ট। শুধু ক্রিকেটীয় দক্ষতার জোরেই নয়, গল্ফ থেকে হকি— সব কিছুই আজ ভয়ঙ্কর করে তুলেছে জস বাটলারকে।