এরই মধ্যে আবার ওয়ার্নের মৃত্যু ঘিরে বিতর্কিত মন্তব্য করায় গণমাধ্যমে তোপের মুখে পড়তে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন উইকেটকিপার ইয়ান হিলিকে। তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘ওয়ার্নের মৃত্যুতে আমি অবাক নই। ও শরীরের যত্ন নিত না।’’ এর পরেই গণমাধ্যমে হিলির উদ্দেশে বলা হতে থাকে, প্রয়াত কিংবদন্তির প্রতি কিছুটা শ্রদ্ধা দেখান।
শোকস্তব্ধ: বিমানবন্দরে ওয়ার্নের বাবা-মা ও পুত্রের সামনে গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিংবদন্তির দেহ। ছবি রয়টার্স।
সাদা ভ্যানটা বেরিয়ে যাচ্ছে তাঁদের পাশ দিয়ে। আর শূন্য চোখে সে দিকে তাকিয়ে আছেন এক বৃদ্ধ দম্পতি।
ওই ভ্যানেই যে শায়িত আছেন ক্রিকেট গ্রহের সম্ভবত সেরা স্পিনারের দেহ। আর বিষণ্ণ দৃষ্টিতে মিলিয়ে যাওয়া গাড়িটির দিকে যে বৃদ্ধ দম্পতি তাকিয়ে আছেন, তাঁদের নাম কিথ এবং ব্রিজেত। এঁদের বিশেষ একটা পরিচিতি আছে। কিথ এবং ব্রিজেতের ছেলের নাম হল শেন ওয়ার্ন। এবং, যে সাদা গাড়িটা বেরিয়ে গেল মেলবোর্নের এসেনডন বিমানবন্দর থেকে, সেখানে শায়িত আছে তাঁদের ছেলেরই দেহ।
মৃত্যুর ছ’দিন পরে ঘরে ফিরিয়ে আনা হল ওয়ার্নের মরদেহ। ব্যাঙ্কক থেকে আট ঘণ্টার বিমানযাত্রার পরে ওয়ার্নের মরদেহ নিয়ে বিমান যখন মেলবোর্নের মাটি স্পর্শ করে, ঘড়ির কাঁটায় স্থানীয় সময় রাত আটটা চল্লিশ। তার আগেই বিমানবন্দরে চলে এসেছিলেন প্রয়াত স্পিনারের বাবা-মা। সঙ্গে ছিল তাঁদের নাতি, ওয়ার্নের পুত্র জ্যাকসনও। ছিলেন ওয়ার্নের প্রাক্তন স্ত্রী সিমোনেও। ওয়ার্নের পছন্দের গাড়িটা চালিয়েই বিমানবন্দরে এসেছিলেন জ্যাকসন। একটি সাদা গোলাপ হাতে বিমানবন্দরের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্রিজেত।
বিমানবন্দরের বাইরেও ভিড় জমিয়েছিলেন ওয়ার্নের ভক্তরা। ওয়ার্নের মরদেহ নিয়ে বিশেষ বিমানটি অবতরণ করার আধঘণ্টা আগে থেকেই বিমানবন্দরের আকাশে ঘুরপাক খেতে থাকে একটি পুলিশ হেলিকপ্টার। বিমান অবতরণের আধঘণ্টা পরেও দেখা গিয়েছে
সেই হেলিকপ্টারকে।
আগামী ৩০ মার্চ, মেলবোর্ন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে, এক লাখ মানুষের সামনে ওয়ার্নের শেষকৃত্য হওয়ার কথা। এরই মধ্যে ওয়ার্নের মৃত্যু নিয়ে নতুন একটা জল্পনা শুরু হয়েছে। কোনও কোনও সংবাদমাধ্যমে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, ওয়ার্নের মৃত্যুর নেপথ্যে কোভিডের কোনও ভূমিকা আছে কি না। জানা গিয়েছে, কয়েক মাসের ব্যবধানে দু’বার কোভিডে আক্রান্ত হন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন স্পিনার। সরকারি ভাবে অবশ্য বলা হয়েছে, ওয়ার্নের মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগে। তাইল্যান্ড পুলিশের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, ময়নাতদন্তে অস্বাভাবিক মৃত্যুর কোনও চিহ্ন দেখা যায়নি।
যাঁকে আদর্শ করে তিনি বড় হয়ে উঠেছেন, সেই ওয়ার্নের মৃত্যু ভীষণ ভাবে ধাক্কা দিয়ে গিয়েছে ডেভিড ওয়ার্নারকেও। আগামী ৩০ মার্চ, মেলবোর্নে ওয়ার্নের শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে চান অস্ট্রেলিয়ার এই ওপেনার। ওয়ার্নার জানিয়েছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শেষ টেস্টের পরেই দেশে ফিরে আসবেন। যে টেস্ট শেষ হবে ২৯ মার্চ।
এরই মধ্যে আবার ওয়ার্নের মৃত্যু ঘিরে বিতর্কিত মন্তব্য করায় গণমাধ্যমে তোপের মুখে পড়তে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন উইকেটকিপার ইয়ান হিলিকে। তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘ওয়ার্নের মৃত্যুতে আমি অবাক নই। ও শরীরের যত্ন নিত না।’’ এর পরেই গণমাধ্যমে হিলির উদ্দেশে বলা হতে থাকে, প্রয়াত কিংবদন্তির প্রতি কিছুটা শ্রদ্ধা দেখান।
অস্ট্রেলিয়ার আর এক প্রাক্তন উইকেটকিপার, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট আবার জানিয়েছেন, মৃত্যুর আট ঘণ্টা আগে ওয়ার্ন তাঁর মোবাইলে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। গিলক্রিস্ট বলেছেন, ‘‘রডনি মার্শের মৃত্যুর পরে আমি একটা অনুষ্ঠান করেছিলাম। যার প্রশংসা করে ওয়ার্ন আমাকে বার্তা পাঠায়। ধরে নিচ্ছি, মৃত্যুর ঘণ্টা আটেক আগে ও আমাকে এই বার্তাটা পাঠিয়েছিল। এই বার্তাটা চিরকাল আমার কাছে থেকে যাবে। কোনও দিন মুছে ফেলব না।’’