উইকেট নেওয়ার আবরার আহমেদকে ঘিরে পাকিস্তান ক্রিকেটারদের উচ্ছ্বাস। ছবি: রয়টার্স
নরেন্দ্র হিরওয়ানিকে ছোঁয়া হল না আবরার আহমেদের। অভিষেক টেস্টে প্রথম ইনিংসে নিলেন ৭ উইকেট। ইংল্যান্ড শেষ ২৮১ রানে। ৫ বছর আগেও আবদুল কাদিরকে না চেনা আবরার পাকিস্তানের ভরসা হয়ে উঠলেন।
১৯ বছর বয়সে পাকিস্তানের সেই সময়ের জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির কোচ মুস্তাক আহমেদের কাছে আসেন আবরার। সেই সময় মুস্তাক তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “তুমি আবদুল কাদিরকে চেন?” উত্তর আবরার বলেন, “সেটা কে? কখনও নাম শুনিনি।” অবাক হয়ে গিয়েছিলেন মুস্তাক। টানা ১০ মিনিট হেসেছিলেন তরুণ আবরারের কথা শুনে। এক সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আবরারের দাদা সাজিদ বলেন, “সকলে হাসছিল। মুস্তাক ভাই ওকে বলেছিল, তুমি লেগ স্পিনার হিসাবে নাম লিখিয়েছ আর আমাদের দেশের সেরাকেই চেন না!”
ছোট থেকেই ক্রিকেট পাগল আবরার। মুলতানের স্টেডিয়ামে বীরেন্দ্র সহবাগ তিনশো করেছিলেন। সেই ম্যাচে সাকলিন মুস্তাককে আক্রমণ করেছিলেন ভারতীয় ওপেনার। মাত্র ৬ বছর বয়সে সাকলিনের বোলিংয়ের ভুল বার করছিলেন আবরার। পরিবারের সঙ্গে খেলা দেখতে বসে ধারাভাষ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। বিরক্ত হয়ে তাঁর বাবা আবরারকে অন্য ঘরে আটকে রাখেন। সেই মুলতানের মাঠেই অভিষেক হল আবরারের। প্রথম ইনিংসেই তুলে নিলেন ৭ উইকেট।
প্রথম টেস্টেই ৭ উইকেট নিলেন আবরার। ছবি: পিটিআই
সেই ক্রিকেট পাগল ছেলে আবদুল কাদিরের নাম শোনেননি! আবরারের দাদা সাজিদ বলেন, “ওর কোনও দোষ নেই। সারা জীবন সুনীল নারাইনের খেলা দেখেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের স্পিনারের ভক্ত ও। আবদুল কাদিরের নাম ও সত্যিই শোনেনি।”
আবরারের মা যদিও চেয়েছিলেন ছেলে পড়াশোনা করুক ইসলাম নিয়ে। কিন্তু মা-কে না বলে দিয়েছিলেন আবরার। প্রথম বারের জন্য মায়ের কথা রাখেননি তিনি। আবরার জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি ক্রিকেট খেলতে চান। টানা চার বছর টেপ বল ক্রিকেট খেলেছিলেন আবরার। এর পরেই মহম্মদ মাসরুরের কাছে যান তিনি। মাসরুর বলেন, “একই গ্রিপে ক্যারম বল, লেগ স্পিন, গুগলি, স্লাইডার সব কিছু করছিল। খুব বেশি টার্ন করে না ওর বল। স্টাম্পে বল রাখছিল। কেউ ওর লাইন, লেংথ বুঝতে পারছিল না। লোহার মতো আঙুল ছিল ওর।”
১৭ বছর বয়স থেকে প্রতিযোগিতা মূলক ক্রিকেট খেলতে শুরু করে আবরার। পরের দু’বছর এত বেশি ক্রিকেট খেলেছিলেন যে শারীরিক ভাবে ভেঙে গিয়েছিল তাঁর শরীর। নেটে টানা বল করে যেতেন। শরীর নিতে পারেনি সেই ধকল। চিকিৎসক বলেছিলেন যে, হয়তো আর ক্রিকেট খেলতে পারবেন না। এতটাই শোচনীয় অবস্থা হয়ে গিয়েছিল তাঁর শরীরের।
মানসিক জোর কাজে লাগিয়ে আবার মাঠে ফিরে আসেন আবরার। পাশে পেয়েছিলেন বাবাকে। নুর আহমেদ তাঁকে মানসিক শক্তি দিয়েছিলেন আবার ক্রিকেট মাঠে ফিরে আসার জন্য। বাবার সেই জোর কাজে লেগেছিল। আবার মাঠে ফিরেছিলেন আবরার। পাকিস্তানের জার্সিও পরলেন শুক্রবার। সেই ম্যাচে প্রথম দিন ৭টি উইকেটও তুলে নিলেন। সবে শুরু হল তাঁর যাত্রা। তিনি আবদুল কাদিরের নাম না-ই জানতে পারেন, এ বার তাঁর নাম জেনে ফেলেছে পাকিস্তানের ক্রিকেট সমর্থকরা।