চর্চায়: বৃষ্টিতে থমকে ওয়াংখেড়ের ঘূর্ণি পিচ তৈরির কাজ। বুধবার। ছবি: টুইটার।
কানপুরে নাটকীয় ভাবে প্রথম টেস্ট ড্র করায় আত্মবিশ্বাস এমনিতেই বেড়ে গিয়েছে নিউজ়িল্যান্ডের। তার উপরে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে নামার আগে আর এক গোপন অস্ত্র কাজে লাগাতে চলেছে কেন উইলিয়ামসনের দল। আইপিএল গুপ্তচরের টোটকা!
খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, নিউজ়িল্যান্ড কোচিং সদস্যদের মধ্যে এমন এক জন আছেন, যিনি গত চার বছর ধরে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ফিল্ডিং কোচের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। নাম জেমস প্যামেন্ট। এবং ওয়াংখেড়ের পিচ সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল তিনি। যে কারণে শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টের আগে দল বাছাই ও রণনীতি তৈরি করার সময় প্যামেন্টের পরামর্শ যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে নিউজ়িল্যান্ড শিবিরে।
নিউজ়িল্যান্ড দলের মিডিয়া ম্যানেজারের পাঠানো এক ভিডিয়ো বার্তায় প্যামেন্ট জানিয়েছেন তাঁর ভারতীয় অভিজ্ঞতার কথা। চতুর্থ কোচ হিসেবে নিউজ়িল্যান্ড দলের সঙ্গে যোগ দেওয়া প্যামেন্টের মন্তব্য, ‘‘গত চার-পাঁচ বছর ধরে আমি আইপিএলের সঙ্গে যুক্ত আছি। সেই অক্টোবরে আইপিএল শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকে আমি মুম্বইয়েই রয়েছি। এখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতি সম্পর্কে একটা ধারণা আছে।’’ এই অভিজ্ঞতার ফলে কী ভাবে বাড়তি সাহায্য করতে পারবেন আপনার দলকে? প্যামেন্ট বলেছেন, ‘‘যদিও আমি টি-টোয়েন্টির সঙ্গে জড়িয়ে ছিলাম, কিন্তু ক্রিকেটের প্রাথমিক ব্যাপারগুলো তো একই হয়। পিচ সম্পর্কে, পরিবেশ সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। তা ছাড়া ভারতীয় ক্রিকেটারদের সম্পর্কেও কিছুটা ধারণা আমার আছে। যা সাহায্য করবে নিউজ়িল্যান্ডকে।’’ জানা যাচ্ছে, এই টেস্ট সিরিজ়ের কথা ভেবেই প্যামেন্টকে দলের সঙ্গে যুক্ত করেছে নিউজ়িল্যান্ড বোর্ড।
ঠিক কী পরামর্শ তিনি কেন উইলিয়ামসনদের দেবেন, তা স্বাভাবিক ভাবেই বলতে চাননি প্যামেন্ট। কিন্তু খোঁজখবর নেওয়ার পরে কয়েকটা তথ্য জানা যাচ্ছে। যেমন, নিউজ়িল্যান্ড শিবির জেনেছে, ওয়াংখেড়ের পিচ লাল মাটির হওয়ায় সেখানে বাড়তি বাউন্স পাওয়া যাবে। যে কারণে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম দলে থাকার ব্যাপারে বাঁ-হাতি পেসার নিল ওয়াগনার অনেকটাই এগিয়ে আছেন। মুম্বইয়ে পা দিয়ে আরও একটা ব্যাপার বুঝতে পেরেছেন উইলিয়ামসনরা। পিচ পরের দিকে স্পিনারদের সাহায্য করলেও শুরুতে কিন্তু পেসাররা চমক দিতে পারেন।
এর কারণ মুম্বইয়ের আবহাওয়া। ওয়াংখেড়েতে ঘূর্ণি উইকেট বানানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু সমস্যা করছে আবহাওয়া। বুধবার বৃষ্টি হয়েছে পুরোদমে। বৃহস্পতিবারও বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। টেস্ট শুরুর দিনও হাল্কা বৃষ্টি হতে পারে। এ দিন দু’দলই অনুশীলন বাতিল করে দিয়েছে। পিচও পুরোপুরি ঢাকা। পর পর দু’দিন যদি বৃষ্টি হয় আর পিচ ‘কভার’ সরানো না যায়, তা হলে কিন্তু টেস্টের প্রথম দিন যথেষ্ট স্যাঁতস্যাঁতে থাকবে ওয়াংখেড়ের বাইশ গজ। এবং, প্যামেন্টের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, বাউন্সের সঙ্গে তখন সুইংও পাবেন নিউজ়িল্যান্ডের পেসাররা। এক জন স্পিনার কমিয়ে তাই ওয়াগনারকে নেওয়ার ভাবনাটা জাঁকিয়ে বসেছে দল পরিচালন সমিতির মনে।
নিউজ়িল্যান্ড দলে আরও এক জন আছেন, যাঁর সঙ্গে মুম্বইয়ের একটা আলাদা সম্পর্ক আছে। তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাঁ-হাতি স্পিনার অজাজ় পটেল। মুম্বইয়ে জন্মানোর পরে বছর আটেক বয়সে নিউজ়িল্যান্ড চলে যান তিনি। মুম্বইয়ে ফিরতে কী রকম লাগছে? ‘ভার্চুয়াল’ সাংবাদিক বৈঠকে অজাজ় বলেছেন, ‘‘অবশ্যই একটা আলাদা আাবেগ কাজ করছে। যে দিন মুম্বই ছেড়ে নিউজ়িল্যান্ড চলে গিয়েছিলাম, সে দিনটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।’’ এ বার নিজের পুরনো শহরে টেস্ট খেলার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি। আপনার পরিবারের কেউ কি মাঠে থাকবেন? অজাজ়ের জবাব, ‘‘কোভিডের কারণে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারছি না। কিন্তু ওরা যখন যে রকম সুযোগ পাবে, মাঠে আসবে।’’
মুম্বইয়ের পিচ নিয়েও একটা ধারণা আছে অজাজ়ের। বাইশ গজ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘‘লাল মাটির পিচে শুনেছি বাউন্স থাকবে। তবে এখনও দেখিনি। যে রকমই হোক, আমাদের দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে।’’ উইকেটে যে বাউন্স থাকবে, সেটা মানছেন অমল মুজ়ুমদারের মতো পোড় খাওয়া প্রাক্তন মুম্বই ক্রিকেটারও। বলছিলেন, ‘‘বাউন্স অবশ্যই থাকবে। তবে যদি অসমান বাউন্স না হয়, তা হলে ব্যাটারদেরও সুবিধে হবে স্ট্রোক খেলতে।’’ অমলের ধারণা, পিচ স্পিনারদেরও ভাল সাহায্য করবে। কিন্তু সব হিসেব উল্টে দিতে পারে মুম্বইয়ের আবহাওয়া।