সফর: (বাঁ দিকে) দিল্লি পৌঁছলেন মুকেশ। তৈরি যশস্বীও। নিজস্ব চিত্র।
আকাশ দীপ, ঈশান পোড়েলরা যখন দলীপ ট্রফির ম্যাচে ব্যস্ত। তাঁদেরই পূর্বাঞ্চল দলের সতীর্থ তখন বিমানে বসে। প্রথম বারের মতো পাড়ি দিচ্ছেন ব্রায়ান লারার দেশে।
কলকাতা থেকে বৃহস্পতিবারই দিল্লি উড়ে গেলেন মুকেশ কুমার। সেখান থেকে শুক্রবার উড়ে যাবেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দিল্লি থেকে তাঁর সঙ্গী মহম্মদ সিরাজ ও কে এস ভরত। এ দিকে মুম্বই থেকে উড়ে যাবেন যশস্বী জয়সওয়াল, ঋতুরাজ গায়কোয়াড়রা। ভারতীয় দল থেকে নির্দেশ অনুযায়ী সে দেশের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য দু’সপ্তাহ আগেই পৌঁছে যেতে হচ্ছে মুকেশদের।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে সব চেয়ে বড় সমস্যা জেটল্যাগ। ভারতীয় সময়ের সঙ্গে ক্যারিবিয়ান সময়ের পার্থক্য অনেকটাই। সাড়ে ৯ ঘণ্টা পিছিয়ে সেই দ্বীপরাষ্ট্র। সারা বছর ধরে তাপমাত্রা থাকে চল্লিশের আশে-পাশে। গরমের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি সে দেশের ব্যাটিং-সহায়ক পিচে রীতিমতো পরীক্ষা দিতে হয় বোলারদের। তাই আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে তরুণ সদস্যদের।
বিরাট কোহলি, শুভমন গিলরা আপাতত ইংল্যান্ডে ছুটি কাটাচ্ছেন। তাঁরাও আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন ব্রায়ান লারার দেশে। যদিও বিরাটরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরিবেশের সঙ্গে ওয়াকিবহাল। সেই পরিবেশের সঙ্গে নতুন করে মানিয়ে নেওয়ার মতো কিছু নেই। কিন্তু মুকেশদের আগে পাঠিয়ে তৈরি করে নিতে চায় ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ রওনা দেওয়ার আগে মুকেশ বলছিলেন, ‘‘অন্য রকম উত্তেজনা হচ্ছে। প্রথম বার ভারতীয় দলের সদস্য হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাচ্ছি। এই দেশের গল্প আমি অনেক শুনেছি। শেষ কয়েক দিন ধরে ইউটিউবে একাধিক ভ্লগ দেখেছি।’’ যোগ করেন, ‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রত্যেকটি দেশেরই মাহাত্ম্য অন্য রকম। এ বার সেই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে চলেছি।’’
মুকেশ বলেছিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাওয়ার আগে মহম্মদ শামির সঙ্গে আলোচনা করবেন। মুকেশ ফোন করেছিলেন। দু’জনের মধ্যে কিছু কথা হয়েছে কিন্তু ইদ-এ শামি ব্যস্ত থাকায় দীর্ঘ আলোচনা করতে পারেননি। বঙ্গ পেসার বলছিলেন, ‘‘শামি ভাই নিজেই বলেছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজে কোনও রমক সমস্যা যদি হয়, সে মাঠে হোক কি মাঠের বাইরে, ও সাহায্য করবে।’’
মুকেশরা দিল্লিতে পৌঁছনোর দিন মুম্বইয়ে নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছেন যশস্বী জয়সওয়ালও। তিনি বলছিলেন, ‘‘বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে ইংল্যান্ড উড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তখন স্ট্যান্ডবাই ক্রিকেটার ছিলাম। এখন ভারতীয় দলের সদস্য।’’ যোগ করেন, ‘‘ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার ফলে আত্মবিশ্বাস অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। সুযোগ পেলে সেরাটা উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করব।’’
ভারতীয় দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড় হলেও এনসিএ প্রধান ভিভিএস লক্ষ্মণের কাছে বেশ কিছু পরামর্শ পেয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজগামী ক্রিকেটারেরা। টেস্ট ক্রিকেটে সফল হওয়ার টোটকা দ্রাবিড় ও লক্ষ্মণের চেয়ে ভাল কার থেকেই বা পাবেন? মুকেশ বলছিলেন, ‘‘এনসিএ থেকে যাবতীয় সাহায্য করা হয়েছে। সে দেশে কী রকম পরিবেশ, কতটা গরম, বল বাউন্স করে কি না, ব্যাটসম্যানেরা কতটা সুবিধা পায়, সব রকম তথ্যই দেওয়া হয়েছে। যা বুঝলাম, ভারতের পরিবেশের চেয়ে খুব একটা বেশি পার্থক্য নেই। তবে হ্যাঁ, টেস্ট খেলা হয় ডিউকস বলে। যা এসজি টেস্টের (যে বল ভারতে ব্যবহৃত) চেয়ে বেশি সুইং করে। অনেক ওভার পর্যন্ত নতুনও থাকে।’’
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বর্তমান পরিস্থিতি যা, তাতে খুব একটা কঠিন পরীক্ষা হওয়ার কথা নয় মুকেশদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ান ডে দল আসন্ন বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে কি না বলা যাচ্ছে না। টেস্ট দলের অবস্থা আরও শোচনীয়। ক্রেগ ব্রেথওয়েট ছাড়া ধৈর্য ধরে ইনিংস গড়ার মতো ব্যাটসম্যান নেই সে দেশে।
মুকেশ যদিও বিপক্ষের শক্তি অথবা দুর্বলতা নিয়ে ভাবছেন না। তাঁর লক্ষ্য সফল হওয়া। বলে দিলেন, ‘‘বিপক্ষ দেখে কোনও দিনও খেলি না। ক্রিকেটে কোনও প্রতিপক্ষই দুর্বল নয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাক্তন পেসারদের ভিডিয়ো দেখেছি। মাইকেল হোল্ডিং, ম্যালকম মার্শালদের দেশে পেস বোলার হিসেবে খেলতে যাওয়াই তো অনুপ্রেরণা। ভরসা রাখুন, হতাশ করব না।’’