লর্ডসের লং রুমে ইংরেজ সমর্থকদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার উসমান খোয়াজা ও ডেভিড ওয়ার্নার। ছবি: টুইটার
অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের সমর্থকদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ক্রিকেটার। পঞ্চম দিন লর্ডসের লং রুমে এমসিসি-র (মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব) কয়েক জন সদস্যের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় উসমান খোয়াজা ও ডেভিড ওয়ার্নারের। অস্ট্রেলিয়ার অভিযোগ, তাদের ক্রিকেটারদের হেনস্থা করা হয়েছে। তদন্তের দাবি করেছে তারা। এই ঘটনার জন্য অবশ্য ক্ষমা চেয়েছে এমসিসি।
ইংল্যান্ডের ব্যাটার জনি বেয়ারস্টোর আউট ঘিরে এই বিবাদ হয়। নিজের প্রিয় মাঠ লর্ডসে এই ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হবেন তা ভাবতে পারেননি খোয়াজা। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘‘লর্ডসের সমর্থকদের প্রতি আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা ছিল। কিন্তু রবিবার যা হল তা মেনে নেওয়া যায় না। ইংল্যান্ডের সমর্থকেরা যে ভাষায় কথা বলছিল, তা খুবই অসম্মানের। আমি সেটা মেনে নিতে পারিনি। তাই প্রতিবাদ করেছি। ওরা অন্যায় ভাবে আমাদের উপর দায় চাপাচ্ছিল। সেটা ঠিক না।’’
খোয়াজার মতে, মাঠের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেন আম্পায়াররা। ক্রিকেটারেরা আবেদন করতে পারেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে আম্পায়ারকে বাধ্য করতে পারেন না। অথচ, তাঁদের দায়ী করছেন ইংল্যান্ডের সমর্থকেরা। খোয়াজা বলেন, ‘‘আম্পায়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি যদি মনে করতেন, অ্যালেক্স ক্যারে যা করেছে তা বৈধ নয়, তা হলে আউট দিতেন না। কিন্তু আম্পায়ার আউট দিয়েছেন। চতুর্থ দিনও তো মিচেল স্টার্কের ক্যাচ নিয়ে আমরা আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে এক মত হতে পারিনি। কিন্তু সিদ্ধান্ত মানতে হয়েছে। এটাই তো ক্রিকেট।’’
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড এই ঘটনায় তদন্তের দাবি করেছে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘লর্ডস টেস্টের পঞ্চম দিন লং রুমে দর্শকদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের যে বিবাদ হয়েছে তার নিন্দা করছি আমরা। মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের কাছে আবেদন করছি, ঘটনার তদন্ত করা হোক। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের হেনস্থা করা হয়েছে। ধাক্কা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’
এই ঘটনার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে এমসিসি। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছে তারা। একটি বিবৃতিতে এমসিসি বলেছে, ‘‘লং রুম লর্ডসের ঐতিহ্য। পঞ্চম দিন সকালের পর থেকে মাঠের উত্তাপ গ্যালারিতে ছড়িয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এমসিসি-র কয়েক জন সদস্য অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। তার জন্য আমরা অস্ট্রেলিয়া দলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটবে না বলেও আশ্বাস দিয়েছে তারা।
ঠিক কী ঘটেছিল লর্ডসের লং রুমে?
পঞ্চম দিন বেয়ারস্টোর আউট নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। ক্যামেরন গ্রিনের বাউন্সার থেকে মাথা বাঁচিয়ে নেওয়ার পর বেয়ারস্টো ভুলেই গিয়েছিলেন বল কোথায়। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। উইকেটরক্ষক ক্যারে সঙ্গে সঙ্গে বল ছুড়ে উইকেট ভেঙে দেন। রান আউট হয়ে যান বেয়ারস্টো। ইংরেজ সমর্থকেরা এই সিদ্ধান্ত মোটেই মানতে পারেননি। এর কিছু ক্ষণ পরে মধ্যাহ্নভোজের বিরতি হয়। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা একে একে সাজঘরে ফিরছিলেন। সেই সময় দর্শকেরা চিৎকার করে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের ‘চোর, প্রতারক’ ইত্যাদি সম্বোধনে ডাকতে থাকেন। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা প্রথমে তাতে বিশেষ পাত্তা দেননি।
কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে উঠে লং রুমে ঢোকার পরেই বিপত্তি ঘটে। সেখানে ছিলেন এমসিসি-র সদস্যেরা। তাঁরা ইংল্যান্ডেরই সমর্থক। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের উদ্দেশে কিছু বলেন। ওয়ার্নার এবং খোয়াজা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। তাঁরা পাল্টা দেন। শুরু হয়ে যায় উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। ঝামেলা থামাতে এগিয়ে আসতে হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। তাঁরা ওয়ার্নার, খোয়াজাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। ওই সমর্থকদের থেকে তাঁদের দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। লর্ডস কর্তৃপক্ষের তরফে আবেদন করা হয় ক্রিকেটারদের কোনও ভাবে বিরক্ত বা আক্রমণ না করার জন্যে। তাঁদের সংযত থাকার অনুরোধ করা হয়।