জয়ের উচ্ছ্বাস বিরাট কোহলিদের। ছবি: বিসিসিআই।
মুম্বইয়ের মাটিতে আইপিএলের তৃতীয় জয় পেল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। প্রথমে ব্যাট করে বেঙ্গালুরু করে ৫ উইকেটে ২২১। জবাবে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স করল ৯ উইকেটে ২০৯ রান। ১২ রানে জয় পেল বেঙ্গালুরু। ২০১৫ সালের পর প্রথম বার ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে মুম্বইকে হারাল তারা।
লড়াইটা হতে পারত বিরাট কোহলি বনাম রোহিত শর্মার। সম্ভাবনা একটা তৈরি হয়েছিলও। কিন্তু যশ দয়ালের একটা বল সব শেষ করে দিল। রান তাড়া করতে নেমে আগ্রাসী মেজাজে রোহিতকে আউট করে দিলেন। সাজঘরে ফেরার আগে রোহিত করেছেন ৯ বলে ১৭ রান। ২টি চার এবং ১ ছয় উপহার দিয়েছেন ঘরের মাঠের দর্শকদের। তার আগে কোহলি খেলে গিয়েছেন ৪২ বলে ৬৭ রানের ইনিংস। ৮টি চার এবং ২টি ছয়ের সাহায্যে বন্ধুর জন্য মঞ্চ সাজিয়ে দিয়েছিলেন।
রোহিত পারলেন না সুযোগ কাজে লাগাতে। দয়াল ভাল বোলার নিশ্চিত। তবে ক্রিকেট জনতার অপছন্দের কারণ হতে পারেন কোহলি-রোহিত দ্বৈরথ জমতে না দেওয়ায়। কিন্তু পেশাদার ক্রিকেটে কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়েন না। বড় নামের ব্যাটার বা বোলারদের বিরুদ্ধে সাফল্য তরুণ ক্রিকেটারদের ভবিষ্যৎ আলোকিত করতে পারে। সঙ্গত ভাবেই দয়াল সেই চেষ্টা করেছেন। সফলও হলেন।
সোমবার আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স-রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ম্যাচের আর এক আকর্ষণ ছিলেন জসপ্রীত বুমরাহ। চোট সারিয়ে ৯২ দিন পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফেরা বুমরাহ কেমন বল করেন, তা নিয়ে আগ্রহ ছিল ক্রিকেটপ্রমীদের। বুমরাহ হতাশ করেননি। উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে ২৯ রান দিয়েছেন তিনি। মুম্বইয়ের বোলারদের মধ্যে ওভার প্রতি সবচেয়ে কম রান খরচ করেছেন। দেখে মনেই হয়নি তিন মাসের বেশি সময় পর ক্রিকেট খেলছেন।
লড়াই ছিল আরও একটা। হার্দিক পাণ্ড্য এবং ক্রুণাল পাণ্ড্য। ভারতীয় ক্রিকেটের খ্যাতনামী দুই ভাইয়ের লড়াই জমল না। হার্দিক বল হাতে ৪৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নিলেন। ক্রুণালকে ব্যাট করতে নামতেই হয়নি। ম্যাচের দ্বিতীয় ভাগে দাপট দেখালেন হার্দিক। ক্রুণালের বলে পর পর দু’টি ছক্কা মারলেন। মুম্বই অধিনায়ক অবশ্য ২২ গজে এসেই ম্যাচের গতি পথ বদলের চেষ্টা করেন। ব্যাট হাতে দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করলেন। শেষ ওভারের প্রথম দু’বলে উইকেট তুলে নিয়ে শেষ হাসি হাসলেন অবশ্য ক্রুণালই। শেষ পর্যন্ত ৪৫ রানে ৪ উইকেট নিলেন তিনি। দু’ভাইয়ের মুখোমুখি লড়াই না জমলেও দু’ছক্কা খাওয়া দাদাই শেষবেলায় কেড়ে নিলেন ভাইয়ের হাসি।
আগ্রহ আর একটা বিষয় নিয়ে ছিল।
সোমবারের আগে ওয়াংখেড়ের ২২ গজে রোহিতদের বিরুদ্ধে ২-৮ ব্যবধানে পিছিয়ে ছিলেন
কোহলিরা। সেই ব্যবধান বেঙ্গালুরু কমাতে পারে কিনা। টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত
নিয়েছিলেন হার্দিক। প্রথমে ব্যাট করার সুযোগ সম্পূর্ণ কাজে লাগালেন কোহলিরা। ফিল
সল্ট (৪) ব্যর্থ হলেও কোহলির সঙ্গে বেঙ্গালুরুর ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যান দেবদত্ত পাড়িক্কল।
তিনি করেন ২২ বলে ৩৭। মারেন ২টি চার ৩টি ছয়। অধিনায়ক রজত পাটিদার এবং জিতেশ শর্মাও ভাল খেললেন। পাটিদারের ব্যাট থেকে এল ৩২ বলে ৬৪ রানের ইনিংস। ৫টি চার এবং ৪টি
ছক্কা মারলেন। ১৯ বলে ৪০ রান করে অপরাজিত থাকলেন জিতেশ। ২টি চার এবং ৪টি ছয় এসেছে
তাঁর ব্যাট থেকে। মুম্বইয়ের সফলতম বোলার হার্দিক। ট্রেন্ট বোল্ট ২ উইকেট নিলেও খরচ
করলেন ৫৭ রান। ১০ রানে ১ উইকেট বিগ্নেশ পুতুরের।
জয়ের জন্য ২২২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারাল মুম্বই। রোহিত ছাড়াও রান পেলেন না রায়ান রিকেলটন (১০ বলে ১৭) এবং উইল জ্যাকস (১৮ বলে ২২)। সূর্যকুমার যাদবও চাপের মুখে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারলেন না। সহজ ক্যাচ দিয়ে এক বার বেঁচে যাওয়ার পরও করলেন ২৬ বলে ২৮ রান। তিনিও দয়ালের শিকার। তিনি আউট হওয়ার পর রান তোলার গতি বৃদ্ধি করেন হার্দিক। তাঁকে সঙ্গ দিলেন তিলক বর্মা। তাতেও লাভ হল না। ১৮তম এবং ১৯তম ওভারে পর পর দু’জনে আউট হতেই মুম্বইয়ের জয়ের আশা শেষ হয়ে যায়। হার্দিক করলেন ১৫ বলে ৪২। মারলেন ৩টি চার এবং ৪টি ছয়। তিলকের ব্যাট থেকে এল ২৯ বলে ৫৬ রানের ইনিংস। ৪টি করে চার এবং ছয় মারেন তিনি। মিচেল স্যান্টনার (৪ বলে ৮ রান), নমন ধীরেরা (৬ বলে ১১ রান) ম্যাচ শেষ করতে পারলেন না। শেষ তিন ওভারে ৫ উইকেট হারাল মুম্বই।
ক্রুণাল ছাড়াও ভাল বল করেছেন জস হেজ়লউড। তিনি ৩৭ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন। ৪৬ রানে ২ উইকেট দয়ালের। ৪৮ রান খরচ করে ১ উইকেট ভুবনেশ্বর কুমারের।