অস্ট্রেলিয়া দল। —ফাইল চিত্র।
অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্টের প্রথম দিনেই পড়ল ১৩ উইকেট। অস্ট্রেলিয়া ২৬৩ রানে অলআউট হয়ে যায়। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ড ৬৮ রানে তিন উইকেট হারিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার থেকে এখনও ১৯৫ রানে পিছিয়ে ইংল্যান্ড। চার বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে শতরান করলেন মিচেল মার্শ।
ক্যামেরন গ্রিনের বদলে এই টেস্টে মার্শকে দলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। শেষ টেস্ট তিনি খেলেছিলেন ২০১৯ সালে। চার বছর পর লাল বলের ক্রিকেটে ফিরে প্রথম দিনটি ভালই কাটল তাঁর। ব্যাট হাতে করলেন ১১৮ রান। পরে বল হাতে একটি উইকেটও নিলেন তিনি।
টস জিতে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস বল করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম ওভারেই ডেভিড ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে দেন স্টুয়ার্ট ব্রড। দিনের শুরুটা ভালই হয়েছিল তাঁদের। ৮৫ রানের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার চার উইকেট চলে যায়। কোনও ব্যাটারই রান পাচ্ছিলেন না। সেখান থেকে মার্শ এবং ট্রেভিস হেড দলের হাল ধরেন। ১৫৫ রানের জুটি গড়েন তাঁরা। যদিও এর মধ্যে বেশিটাই করেন মার্শ। হেড মাত্র ৩৯ রানে আউট হয়ে যান। উল্টো দিকে মার্শ করেন ১১৮ রান। তাঁরা আউট হতেই ভেঙে যায় অস্ট্রেলিয়ার সব জুটি। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের শেষ ৫১ বলে ৬ উইকেট চলে যায়।
ইংল্যান্ডের হয়ে নজর কাড়েন মার্ক উড। প্রথম দু’টি টেস্টে দলে নেওয়া হয়নি তাঁকে। কিন্তু ফিরে এসেই পাঁচ উইকেট তুলে নেন তিনি। প্রথম দু’টি স্পেলে তাঁর বলের গতির গড় ছিল ১৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। তিনটি উইকেট নেন ক্রিস ওকস। ব্রড নেন দু’টি উইকেট।
অ্যাশেজ মানেই অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের সঙ্গে তার বাইরের এক লড়াই। এই সিরিজ়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ০-১ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদপত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সঙ্গে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।
সে সময় কয়েক জন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাই ভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসে এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।
সেই অ্যাশেজে ইংল্যান্ড প্রথম দিনেই ব্যাট করতে নামে। অস্ট্রেলিয়ার বোলারেরাও ছেড়ে দেননি তাঁদের। অধিনায়ক প্যাট কামিন্স সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। তিনি শুরুতেই দু'টি উইকেট তুলে নেন। তৃতীয় উইকেটটি নেন মার্শ। তিন উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড তুলেছে ৬৮ রান। সাজঘরে ফিরে গিয়েছেন জ্যাক ক্রলি (৩৩), বেন ডাকেট (২) এবং ব্রুক (৩)। ক্রিজে রয়েছেন রুট (১৯) এবং জনি বেয়ারস্টো (১)। তাঁদের থেকে বড় ইনিংসের আশায় ইংল্যান্ডের সমর্থকেরা।