চায়নাম্যান: টানা অনুশীলনে মগ্ন থেকেছেন কুলদীপ। ফাইল চিত্র
দীর্ঘদিন হয়ে গিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটের মূলস্রোত থেকে ছিটকে গিয়েছেন তিনি। গত সেপ্টেম্বরে আইপিএলের মাঝপথে দেশে ফিরে আসতে হয়েছিল তাঁকে। করতে হয়েছিল অস্ত্রোপচার। সেখান থেকে লড়াই শুরু করে আবার জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন ঘটেছে কুলদীপ যাদবের।
কিন্তু কতটা কঠিন ছিল এই রাস্তা? কী ভাবে তৈরি হয়েছেন এই চায়নাম্যান বোলার? বৃহস্পতিবার কানপুর থেকে ফোনে কুলদীপের কোচ কপিল দেব পাণ্ডে তুলে ধরলেন তাঁর ছাত্রের প্রত্যাবর্তনের যাত্রাপথটা। কপিল বলছিলেন, ‘‘গত সেপ্টেম্বরে আইপিএলে খেলার সময় ওর পায়ের চোটটা ধরা পড়ে। তার পরে অস্ত্রোপচার। বেঙ্গালুরুতে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে রিহ্যাব শেষ করে আমার কাছে আসে কুলদীপ। তখন একটাই লক্ষ্য ছিল। খুব ধীরে ধীরে ট্রেনিং শুরু করব, যাতে ওর পায়ের উপরে বাড়তি চাপ না পড়ে।’’ কোচের কথায় জানা যাচ্ছে, এনসিএ থেকে যে রুটিন তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল, সেটা মেনে চলেছেন তাঁরা।
গত বছরের শেষ থেকে অনুশীলন পর্ব শুরু হয়। মাঝে অবশ্য উত্তরপ্রদেশ রঞ্জি দলের হয়ে শিবিরে চলে গিয়েছিলেন কুলদীপ। কিন্তু রঞ্জি ট্রফি পিছিয়ে যাওয়ায় আবার কোচের কাছে ফিরে আসেন এই রিস্টস্পিনার (যে বোলার কব্জির মোচড়ে বল ঘোরান)।
তার পরে কী ভাবে চলেছে প্রস্তুতি পর্ব? কপিল বলছিলেন, ‘‘শেষ ক’দিনে আমার লক্ষ্য ছিল একটা ব্যাপার দেখে নেওয়া। কুলদীপ ম্যাচ খেলার জন্য তৈরি কি না। আর সেটা দেখার জন্য আমি ‘লং আওয়ার্স প্র্যাক্টিস’ করাই ওকে।’’ কী ভাবে চলেছে সেই অনুশীলন? জানা গেল, আট ঘণ্টার সেই বিশেষ অনুশীলন সকাল সাড়ে ন’টায় শুরু হয়ে শেষ হত বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। ‘‘ম্যাচ যত সময় চলে, এই অনুশীলন পর্বও ততটা চলে। ফিটনেস থেকে শুরু করে বোলিং-ব্যাটিং, সবেতেই জোর দিয়েছিলাম,’’ বলছিলেন কোচ, ‘‘১০-১৫ মিনিট বিশ্রাম দিয়ে শুরু হয়ে যেত এক-একটা পর্ব। অনুশীলনে ১৫-২০ ওভার করে বল করেছে কুলদীপ। তা ছাড়া ফিল্ডিং প্র্যাক্টিসও যেমন চলেছে, সে রকম ব্যাটিংও করেছে আমার কাছে।’’ যোগ করেন, ‘‘দিনে এ রকম লম্বা সময়ের অনুশীলন করে দেখে নিতে চেয়েছিলাম, ম্যাচ খেলার জন্য কুলদীপ কতটা তৈরি।’’
একটা সময় কলকাতা নাইট রাইডার্সের অন্যতম সেরা অস্ত্র কুলদীপ হঠাৎ করেই হারিয়ে যান বড় মঞ্চ থেকে। কুলদীপের বদলে নাইটদের প্রথম একাদশে জায়গা করে নেন রহস্য স্পিনার সি ভি বরুণ। এর পরে ভারতীয় ক্রিকেটেও ক্রমশ ব্রাত্য হয়ে ওঠেন কুলদীপ। কিন্তু আবার তিনি ফিরে এসেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। যে দলে রয়েছেন তিন রিস্টস্পিনার— কুলদীপ, যুজ়বেন্দ্র চহাল এবং নবাগত রবি বিষ্ণোই। গণমাধ্যমে কুলদীপের ফিরে আসাকে স্বাগত জানিয়ে বলা হচ্ছে আবার ভারতীয় ক্রিকেটে ফিরতে চলেছে রিস্টস্পিনারদের যুগ।
কোচের লক্ষ্য ছিল কুলদীপের ছন্দ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরিয়ে আনা। বলছিলেন, ‘‘যে কোনও রিস্টস্পিনারের মতো এক জন চায়নাম্যান বোলারের ছন্দটা ফিরে পাওয়া খুব জরুরি। যে কারণে ওকে দিয়ে টানা বল করিয়েছিলাম।’’ বেশ কয়েকটা প্রস্তুতি ম্যাচও খেলানো হয়েছে কুলদীপকে। বাঁ-হাতি স্পিনারের ছোটবেলার কোচের কথায়, ‘‘৪০ ওভারের ম্যাচ খেলিয়েছি ওকে। উত্তর ভারতে সকালে কুয়াশা থাকার জন্য এর চেয়ে বেশি ওভার খেলানো সম্ভব হয়নি। কুলদীপ তিন-চারটে করে উইকেট নিয়েছে। এমনকি, ব্যাটেও হাফসেঞ্চুরি করেছে। ও কিন্তু ব্যাটটাও খারাপ করছে না।’’ তবে রঞ্জি ট্রফির কথা মাথায় রেখে সেই ম্যাচগুলো লাল বলে খেলা হয়েছিল।
বোলিংয়ে কোনও টেকনিক্যাল পরিবর্তন কি আনা হয়েছে? কোচের কথায়, ‘‘না, না এখন ওর বোলিংয়ে কোনও রদবদল কিছু করিনি। জোর দিয়েছি, লাইন-লেংথ ঠিক রেখে বল করে যাওয়ার উপরে। সেটাই এখন আসল ব্যাপার।’’ তবে একটা ব্যাপারের উপরে জোর দিয়েছিলেন কোচ। বেশি করে বাঁ-হাতি ব্যাটারদের বিরুদ্ধে নেটে বল করিয়েছেন। ‘‘বাঁ-হাতিরা ওকে একটু সহজে খেলে। যে কারণে এই অনুশীলনটা,’’ বলেছেন কপিল।
ভারতীয় দলে কুলদীপের প্রত্যাবর্তন কতটা কঠিন হতে পারে? কোচ আত্মবিশ্বাসী, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফিরে আসার জন্য তাঁর ছাত্র তৈরি। বলছিলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারটা ঠিক সময়ে হয়েছে। অনেকে হয়তো বলবে, ম্যাচ প্র্যাক্টিসের অভাব আছে। কিন্তু ওকে প্রচুর বল করিয়েছি। ভাল করার ব্যাপারে কুলদীপও যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী।’’
বাঁ-হাতি স্পিনার তাঁর পরিবারের সঙ্গে এখন মথুরা গিয়েছেন। সেখানে পুজো দিয়ে ফিরেই শুরু হবে নতুন লড়াই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে আসন্ন সিরিজেই দেখা যেতে পারে নতুন কুলদীপ যাদবকে।