কিংবদন্তি: পুষ্পবৃষ্টিতে স্বাগত জানানো হল ঝুলনকে। নিজস্ব চিত্র।
দুর্গাপুজো শুরু হওয়ার আগে শহরে ফিরলেন বঙ্গকন্যা ঝুলন গোস্বামী। দমদম বিমানবন্দরে পৌঁছেই জানিয়ে দিলেন, এ বারের দুর্গাপুজো প্রাণ ভরে উপভোগ করতে চান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে যে খাদ্যাভ্যাসে থাকতে হয়েছে এত দিন, তা আর এ বার মানতে হবে না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা অথবা সুস্বাদু বিরিয়ানিতে আর কোনও বাধা নেই। সকালে দেরি করেও ঘুম থেকে উঠতে পারবেন তিনি। ঝুলনের সামনে যেন নতুন এক জীবন। যার প্রত্যেক মুহূর্ত উপভোগ করতে চান তিনি।
প্রাক্তন ভারতীয় পেসার হিসেবে সোমবার কলকাতায় পা রাখার পরে তাঁকে পুষ্পবৃষ্টিতে স্বাগত জানানো হয় বিমানবন্দরে। সিএবি কর্তারা হাতে তুলে দেন ফুলের তোড়া। বাংলার খুদে ক্রিকেটারেরা ভোর থেকে বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিল ঝুলনের জন্য। হাতে ছিল বেশ কিছু পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড। যাতে লেখা, ‘‘স্বাগত ঝুলনদি।’’ কোনওটায় লেখা, ‘‘ঝুলন, দ্য গ্রেটেস্ট অব অল টাইম।’’
লর্ডসে হরমনপ্রীত কৌরের কান্না দেখেও চোখে জল আসেনি ঝুলনের। কিন্তু নিজের শহরে তাঁকে ঘিরে যে উন্মাদনা দেখা গিয়েছে, তা দেখে কি ঝুলন কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন? বিমানবন্দরে তিনি বলেছেন, ‘‘খুবই ভাল লাগছে। অনেকটা চাপ হাল্কা হল মনে হচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় ড্রেসিংরুমে ফিরে যেতে পারব না ভেবে খারাপ লাগছে। সকলের সঙ্গে এত একাত্ম হয়ে গিয়েছিলাম যে, ওদের ছেড়ে আসতে খারাপ লাগছিল।’’
এতদিন যা করতে পারেননি, তা এ বার একে একে পূরণ করতে চান ঝুলন। বলছিলেন, ‘‘বিরিয়ানি খাওয়া হয়নি বহু দিন। এখন আর সে ধরনের খাবারে কোনও নিষেধাজ্ঞা থাকবে না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকাও খেতে ইচ্ছে করে। সেই স্বাদ ফিরে পেতে চাই। ভোরবেলায় উঠে ট্রেনিংয়ে আর যেতে হবে না। এটাই সব চেয়ে শান্তির। দেরি করে ঘুম থেকে উঠতে পারব।’’
লর্ডসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শেষ ম্যাচেও দু’টি উইকেট ছিল ঝুলনের। যা বিশেষ ভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে তাঁর স্মৃতিতে। ঝুলন বলেছেন, ‘‘ভারতীয় দলের হয়ে প্রথম উইকেটের কথা কখনও ভুলব না। সে রকমই শেষ উইকেটও ভোলা সম্ভব নয়। মাঝে অনেক সাফল্য পেয়েছি। এমন অনেক ম্যাচ খেলেছি যা সম্প্রচার হয়নি। সেগুলোর স্মৃতিও মনে গেঁথে রয়েছে। ২০১৭ বিশ্বকাপ ফাইনালের কথাও মনে থাকবে।’’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পরে ঝুলনের পরিকল্পনা কী, তা প্রশ্ন করা হয়। কিংবদন্তির উত্তর, ‘‘আপাতত কলকাতার দুর্গাপুজো উপভোগ করতে চাই। ঠিক পুজোর আগে শহরে ফেরার মজাই অন্য রকম। এ বার আরও আনন্দের সঙ্গে পুজো উপভোগ করতে পারব।’’ তবে ঝুলনের চাকদহের বাড়িতে এ বার পুজো হচ্ছে না। কিন্তু পুজোয় চাকদহে ফিরছেন তিনি। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েই এ বারের পুজোটা কাটাতে চান কিংবদন্তি। তিনি বলেছেন, ‘‘পুজো মানে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা। বহু দিন পরে এতটা খোলা মনে গল্প করার সুযোগ পাব। পাড়ার বন্ধুরা সব সময়ই কাছের। তাদের সঙ্গে এ বার সময় কাটাতে পারব।’’
ক্রিকেট যদিও একেবারে ছেড়ে দেননি ঝুলন। শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবেন না। এমনিতে ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলার জার্সিতে তাঁকে দেখা যেতেই পারে। কারণ, সামনে মেয়েদের আইপিএল। তা নিয়ে ঝুলন মুখ না খুললেও প্রথম মরসুমে তাঁকে খেলতে দেখতে চান ভক্তেরা। মেয়েদের আইপিএলের সরকারি ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ঝুলন এ বিষয়ে মুখ খুলবেন না। তবে আইপিএল খেলার সিদ্ধান্ত নিলে বাংলা দলের হয়ে ম্যাচ খেলে নিজেকে তৈরি করে তুলতে পারেন তিনি।
ঝুলনের সঙ্গেই শহরে পৌঁছলেন দীপ্তি শর্মা। বুধবার যদিও তিনি উড়ে যাবেন এশিয়া কাপ খেলার উদ্দেশে। কিন্তু শহরে পৌঁছেই জানিয়ে দিলেন, তাঁর প্রিয় ঝুলুদিকে শেষ ম্যাচে জেতানোর মরিয়া চেষ্টা করেছেন তিনি। বেশ কয়েক বার চার্লি ডিনকে অনুরোধ করেছিলেন ক্রিজ়ের ভিতরে দাঁড়ানোর। তিনি না শোনায় রানআউট করতে বাধ্য হন দীপ্তি।
দামোদরকে অনুদান: ময়দানের প্রাক্তন মাঠকর্মী দামোদর বারিককে আর্থিক অনুদান দিল আরবিইএসসি।