ফুুরফুরে: প্রস্তুতি চলছে সূর্য ও হার্দিকের। শনিবার। বিসিসিআই
মেলবোর্নে আবহাওয়া শেষ পর্যন্ত সব দ্বৈরথের সেরা দ্বৈরথকে ভেস্তে দেবে কি না, জানি না। শুনছি, বৃষ্টির পুর্বাভাস রয়েছে। সিডনিতেও বৃষ্টির আশঙ্কা ছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত ম্যাচ হল আর নিউজ়িল্যান্ড শুরুতেই গত বারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে চমক সৃষ্টি করল। ক্রিকেট দুনিয়ার সকলে নিশ্চয়ই প্রার্থনা করবে, রবিবারের মেলবোর্ন যেন রোদ ঝলমলে থাকে আর আমরা দুর্দান্ত একটা ম্যাচ দেখতে পারি।
দুবাইয়ে গত বারের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পাকিস্তান দশ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছিল ভারতকে। সেই হারের যন্ত্রণা নিশ্চয়ই ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে থেকে গিয়েছে। কিন্তু আমার মতে, রবিবারের দ্বৈরথে ভারতই এগিয়ে কারণ অনেক বেশি প্রভাব সৃষ্টি করার মতো ক্রিকেটার রয়েছে রোহিত শর্মাদের অস্ত্রাগারে।
ওপেনে রোহিত, কে এল রাহুল। তিনে বিরাট কোহলি। চারে সূর্যকুমার যাদব। প্রথম চার জন যে কোনও বিশ্ব একাদশেও ঢুকে পড়ার যোগ্য। তার পরে হার্দিক পাণ্ড্যর মতো অলরাউন্ডার। বয়সকে হার মানিয়ে দীনেশ কার্তিক ফিরে এসেছে দুর্দান্ত ফিনিশার হিসেবে। যে কেউ ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে।
তবে আমাকে যদি কেউ রবিবারের ম্যাচে ভারতের তুরুপের তাস বাছতে বলে, আমি হার্দিক পাণ্ড্যকে বাছব। শেষ আইপিএলে নেতৃত্বের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়ার পর থেকেই যেন নতুন এক হার্দিককে আমরা দেখতে পাচ্ছি। যেমন ব্যাটিং করছে, তেমনই বল হাতে জেতাচ্ছে। তেমনই দুর্ধর্ষ ফিল্ডিং। ফিটনেস পুরো ফিরে এসেছে বলে ফিল্ডিংটা দারুণ করতে পারছে, বোলিংয়েও নিয়মিত ভাবে ঘণ্টায় ১৪০ কিমির উপরে গতিতে বল করছে। এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একা চার উইকেট নিয়ে জিতিয়েছে। ভারতীয় দলে অনেক তারকা ক্রিকেটার রয়েছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে এই মুহূর্তে হার্দিক সব চেয়ে প্রভাবশালী ক্রিকেটার। তার পরেই নাম করতে হবে দুরন্ত ফর্মে থাকা সূর্যকুমার যাদবের। তারকাদের পাশে এই দু’জন কিন্তু বড় ম্যাচউইনার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে।
দুবাইয়ে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শাহিন শাহ আফ্রিদি গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ভারতের ব্যাটিংকে। তাই এ বারও দ্বৈরথের শিরোনাম হয়ে গিয়েছে, আফ্রিদি বনাম ভারতীয় ব্যাটিং। বাঁ হাতি পাক পেসারকে কী ভাবে সামলাবে ভারতীয় ব্যাটাররা, সেটা নিয়েই যত গবেষণা।
আমি যদিও সম্পূর্ণ একমত নই যে, আফ্রিদিই একমাত্র অস্ত্র বাবর আজ়মদের। ওদের হাতে হ্যারিস রউফ আছে, নাসিম শাহ আছে। প্রত্যেকে এক্সপ্রেস গতিতে বল করতে পারে, ভাল সুইংও আছে হাতে। আর আফ্রিদি-সহ পাকিস্তানের পেসাররা সব আক্রমণ করতে পছন্দ করে। মেলবোর্নে হাওয়া বইলে সুইং বোলাররা সুবিধা পাবে।
তবে হ্যাঁ, আফ্রিদি ওদের সেরা ভরসা এবং ও ফিরে আসায় পাক শিবির অনেক চনমনে হয়ে উঠবে। এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত একটা ম্যাচ জিতেছে, একটা হেরেছে। সেখানে আফ্রিদি ছিল না।
ভারতীয় ব্যাটিংয়ের সামনে আফ্রিদিকে সামলানোর জন্য দু’টো রাস্তা খোলা। এক) নতুন বলে ওর দু’টো ওভার দেখে-দেখে খেলে দেওয়া, অন্য বোলারদের আক্রমণ করা। দুই) আফিদিকে অতিরিক্ত সমীহ না করে বল অনুযায়ী খেলা। মারার বল পেলে মারো, ভাল বল হলে সম্মান দেখাব।
আমার মতে, দ্বিতীয় পথই নেওয়া উচিত না হলে আফ্রিদি কিন্তু ঘাড়ে চেপে বসবে। যদি আফ্রিদিকে শুরুতে ছন্দহীন করে দিতে পারে রোহিতরা, তা হলে পাকিস্তানের মনোবলও ধাক্কা খাবে। ওদের তখন নতুন কোনও পরিকল্পনা ভাবতে হবে।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ কুঁকড়ে গিয়ে খেলার ম্যাচ নয়। ভয়ডরহীন মানসিকতা নিয়ে খেলতে হয়। হোটেলে রুম সার্ভিস বয় থেকে শুরু করে হাউসকিপিং, রিসেপশন, অপারেটর সকলে বলে যাবে, এই ম্যাচটা কিন্তু জিততে হবে। রাস্তায় হাঁটতে যাওয়ার উপায়ও নেই কারণ ক্রিকেট ভক্তরা ছেঁকে ধরবে। তাতে আরওই চাপ বাড়বে। আমাদের ভারতীয় মহিলা দল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নামার আগে ক্রিকেট নিয়ে আলোচনাই করতাম না। আমি নিশ্চিত, রোহিত-বিরাটরাও সেটাই করে।
আমি তাই বলব, আফ্রিদিকে সম্মান করো ঠিকই কিন্তু অতিরিক্ত সমীহ করতে যেয়ো না। এটাও তো মনে রাখতে হবে যে, পাকিস্তানের বাকি বোলাররাও যথেষ্ট ভাল। তাই মারার বলটা মারার সুযোগ হারালে চলবে না। তা সে বোলারের নাম যা-ই হোক না কেন। তা ছাড়া আফ্রিদি বল করবে পাওয়ার প্লে-তে। তখন তো রানও তুলতে হবে। এখন টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ছয় ওভারে অন্তত ৫০ টার্গেট করে ব্যাটাররা। খুব রক্ষণাত্মক হয়ে গেলে পরের দিকে চাপ বেড়ে যাবে।
ভারতের প্রথম একাদশ বাছার সময় দু’টো জায়গা নিয়ে বিশেষ করে আলোচনা বেশি হতে পারে। ঋষভ পন্থকে অতিরিক্ত ব্যাটার হিসেবে খেলাব কি না? দীনেশ কার্তিককে খেলাতেই হবে। পন্থকে যদি প্রথম একাদশে রাখতে হয়, তা হলে এক জন বোলার কম খেলাতে হবে। সে ক্ষেত্রে হার্দিককে পঞ্চম বোলারের কাজ করতে হবে। শামি, ভুবনেশ্বর, আরশদীপের সঙ্গে যে কোনও এক জন স্পিনারই নেওয়া যাবে। পাকিস্তানে কয়েক জন বাঁ হাতি ব্যাটার থাকায় অশ্বিনের সম্ভাবনা কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।