ইদানীংকালে দেখা যায়, প্রচুর বোলার-ব্যাটার উইকেট নিয়ে বা রান পেলে নানা ভঙ্গিমায় উৎসব করেন। কিন্তু বুমরা যেন বিরল প্রজাতির এক ক্রিকেটার। উইকেট পাওয়ার পরে তাঁকে হাসতেও দেখা গিয়েছে খুব কম। কেন এ রকম উৎসব-বিমুখ তিনি? এই প্রশ্নও উঠেছিল।
মহড়া: সামনে এ বার শ্রীলঙ্কা। তৈরি হচ্ছেন বুম বুম বুমরা। মগ্ন: ঐতিহাসিক টেস্টের জন্য কোহলির প্রস্তুতি। মঙ্গলবার। বিসিসিআই
শুক্রবার থেকে মোহালিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া সিরিজ়ের প্রথম টেস্ট ঐতিহাসিক মাত্রা পেতে চলেছে বিশেষ একটা কারণের জন্য। মোহালির ওই ভারত-শ্রীলঙ্কা দ্বৈরথই হতে চলেছে বিরাট কোহলির
শততম টেস্ট।
সেই টেস্টকে কী চোখে দেখেছে ভারতীয় দল? প্রাক্তন অধিনায়ককে সতীর্থরাই বা কী উপহার দিতে চান? মঙ্গলবার মোহালি থেকে ‘ভার্চুয়াল’ সাংবাদিক বৈঠকে এসে ভারতের সহ-অধিনায়ক যশপ্রীত বুমরা বলে গেলেন, ‘‘ভারতের জয়ের চেয়ে তো বড় উপহার আর কিছু হতে পারে না।’’ যোগ করেন, ‘‘তবে সব টেস্টেই আমরা জয়ের কথা মাথায় রেখে খেলতে নামি। আমাদের প্রথম লক্ষ্যই হল সিরিজ় জয়। আর ম্যাচ জিততে পারলে বিরাট সব সময়ই খুশি হয়।’’
তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ারের উত্থানের নেপথ্যে কোহলির বড় ভূমিকা আছে। সেই কোহলি এখন একশোতম টেস্ট খেলতে চলেছেন। প্রাক্তন অধিনায়ককে নিয়ে মুগ্ধ বুমরা বলেছেন, ‘‘অবশ্যই একশো টেস্ট খেলা একটা বিশেষ কৃতিত্বের ব্যাপার। বিরাটের পরিশ্রম, ত্যাগ, দায়বদ্ধতা আজ ওকে এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। ওর মুকুটে আর একটা পালক যোগ হতে চলেছে। বিরাটের কাছে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। আমার তরফ থেকে ওকে শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন।’’ তিনি এও বলেন, ‘‘দেশের হয়ে একশো টেস্ট খেলা খুব বড় কৃতিত্বের। বিরাট অতীতে দলের সাফল্যে অনেক অবদান রেখে গিয়েছে। এবং ভবিষ্যতেও রাখবে।’’
বুমরা যখন বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করছিলেন, তখনও জানা ছিল না শেষ পর্যন্ত ভারতীয় বোর্ড মোহালিতে ৫০ শতাংশ দর্শক থাকার অনুমতি দেবে। ফলে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে কোহলির একশোতম টেস্ট খেলা নিয়ে। বুমরার জবাব ছিল, ‘‘আমরা সে দিকেই নজর দিতে চাই, যেটা আমাদের হাতে আছে। মাঠে দর্শক থাকলে স্বাভাবিক ভাবেই খেলোয়াড়দের চনমনে ভাবটা অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু এটা তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আমরা নিয়ম তৈরি করিনি।’’ ভারতীয় পেসার আরও বলেন, ‘‘আমরা যেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, সেটা হল, ফাঁকা মাঠেও নিজেদের কী ভাবে তাতিয়ে তোলা যায়, সেটা দেখা। আমরা সে দিকেই নজর দিচ্ছি। দর্শক ছাড়াও মাঠে নেমে কী ভাবে নিজেদের সেরাটা দেওয়া যায়, সেটাও আমাদের আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’
শ্রীলঙ্কা সিরিজ় থেকে নতুন একটা দায়িত্ব পেয়েছেন বুমরা। তিনি এই মুহূর্তে রোহিতের সহ-অধিনায়ক। কী রকম লাগছে নেতৃত্ব গ্রুপের অংশ হতে পেরে? বুমরার মন্তব্য, ‘‘অবশ্যই এটা একটা সম্মানের ব্যাপার। দলের সিনিয়র সদস্য হওয়ার কারণে বাকিদের যতটা সম্ভব সাহায্য করাটা আমার কাজ। আমি আগেও বলেছিলাম, নেতৃত্ব একটা পদ মাত্র। তবে হ্যাঁ, এটা একটা ভাল সুযোগও। সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করতে পেরে আমি খুশি।’’ এখন দেখা যাচ্ছে, বোলারদের হাতেও অধিনায়কের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হচ্ছে। যেমন অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স। বুমরা অবশ্য এই ব্যাপারটাকে সে রকম গুরুত্ব দিতে চান না।
ইদানীংকালে দেখা যায়, প্রচুর বোলার-ব্যাটার উইকেট নিয়ে বা রান পেলে নানা ভঙ্গিমায় উৎসব করেন। কিন্তু বুমরা যেন বিরল প্রজাতির এক ক্রিকেটার। উইকেট পাওয়ার পরে তাঁকে হাসতেও দেখা গিয়েছে খুব কম। কেন এ রকম উৎসব-বিমুখ তিনি? এই প্রশ্নও উঠেছিল। বুমরার জবাব, ‘‘আমি ছোটবেলায় উইকেট নিয়ে খুব উৎসব করতাম। উত্তেজিত হয়ে পড়তাম। এমনকি, ঠিকই করে রাখতাম, উইকেট পেলে কী ভাবে উৎসব করব। কিন্তু তার পরে যখন আসল ক্রিকেটটা খেলতে শুরু করি, তখন নিজেকে বদলে নিই।’’ কী রকম? বুমরার ব্যাখ্যা, ‘‘ব্যক্তিগত সাফল্যের চেয়ে দলের সাফল্য আমার কাছে বড়। তাই ঠিক করি, দল জিতলেই উৎসব করব।’’