দুই কোচ চরণজিৎ এবং লক্ষ্মীর মাঝে হৃষিতা। ছবি: লক্ষ্মীরতন শুক্লর সৌজন্যে
মহিলাদের প্রথম অনূর্ধ্ব ১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত। সেই দলের প্রথম একাদশে বাংলার তিন জন। রিচা ঘোষ, তিতাস সাধু এবং হৃষিতা বসু। চুঁচুড়ার তিতাস জোরে বোলার। বাকি দু’জন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। রিচা এখন ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটে পরিচিত মুখ। হৃষিতা উঠে এসেছেন হাওড়ায় লক্ষ্মীরতন শুক্লার অ্যাকাডেমি থেকে।
বাংলা দলের কোচ লক্ষ্মীর নিজের ক্রিকেট অ্যাকাডেমি রয়েছে হাওড়ায়। সেখানেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি বালিটিকুরির বাসিন্দা হৃষিতার। অ্যাকাডেমির কোচ চরণজিৎ সিংহের কাছেই ক্রিকেটের অ, আ, ক, খ শেখা অষ্টাদশী হৃষিতার। আট বছর ধরে চরণজিতের নজরদারিতে চলেছে প্রশিক্ষণ, অনুশীলন। প্রয়োজন মতো পরামর্শ দিয়েছেন লক্ষ্মী। হাতে ধরে দেখিয়ে দিয়েছেন কোথায় ভুল হচ্ছে। মনোজ তিওয়ারিদের কোচ তবু কৃতিত্ব দিচ্ছেন চরণজিৎ। ফোনে আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘হৃষিতা আমার অ্যাকাডেমির স্টুডেন্ট। তবে ওকে তৈরি করেছে চরণজিৎ। ওই সব বলতে পারবে হৃষিতা সম্পর্কে।’’
ছাত্রীর সাফল্যে গর্বিত চরণজিৎ। প্রথমেই বললেন, ‘‘শুধু সাহস এক জনকে কোথায় পৌঁছে দিতে পারে তার উদাহরণ হৃষিতা। আট বছর আগে প্রথম যখন অ্যাকাডেমিতে এসেছিল, তখনই নজর কেড়েছিল। বলের জন্য ছেলেদের মতো ঝাঁপাতে হৃষিতা ছাড়া আর কোনও মেয়েকে দেখিনি। বেশ পরিশ্রম করতে পারে। ফিটনেসও দারুণ। ছোট থেকে প্রতিটি স্তরেই সাফল্য পেয়েছে। ২০১৯ সালে প্রথম বাংলার অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সুযোগ পেয়েছিল।’’ শুধু হৃষিতা নয়, চরণজিৎ অনুশীলন করিয়েছেন রিচা এবং তিতাসকেও। হরমনপ্রীত কৌরদের সাজঘরে আগেই জায়গা করে নিয়েছেন শিলিগুড়ির রিচা। খেলার জন্য এখন থাকেন কলকাতায়। মাঝে মধ্যে অনুশীলন করতে যান লক্ষ্মীর অ্যাকাডেমিতে। অনুশীলন করান চরণজিৎ। বাংলার অনূর্ধ্ব ১৯ দলের শিবিরে তিতাসকেও প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ মহিলা বিশ্বকাপ জয়ী দলের তিন সদস্যকে চরণজিৎ চেনেন হাতের তালুর মতো। রিচার মতো হৃষিতা, তিতাসও এক দিন সিনিয়র দলের হয়ে খেলবেন, আশাবাদী তাঁদের কোচ।
মঙ্গলবার দেশে ফিরবেন প্রিয় ছাত্রীরা। দেখা হলে কী বলবেন? চরণজিৎ বক্তব্য, ‘‘আমার কতটা আনন্দ হচ্ছে ঠিক বলে বোঝাতে পারব না। ভারতের বিশ্বকাপ জয়ে আমাদের বাংলার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রইল। প্রথমেই ওদের অভিনন্দন জানাব। বলব, এটা সবে শুরু। সামনের রাস্তা অনেক লম্বা, আরও কঠিন। আরও পরিশ্রম করতে হবে। আরও উন্নতি করতে হবে। থামার কোনও সুযোগ নেই। মহিলাদের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সফল হওয়ার মশলা হৃষিতাদের মধ্যে রয়েছে।’’
ভারতের কোনও জাতীয় দলে তিন বাঙালি এক সঙ্গে খেলছে, এমন ঘটনা এখন খুব বেশি দেখা যায় না। ভারতীয় ফুটবল দলে এক সময় প্রথম একাদশে সাত-আট জন বাঙালি ফুটবলার খেলতেন দাপটের সঙ্গে। সেই সুদিন অতীত। মহিলা ক্রিকেটের হাত ধরে আবার তেমনই সুদিনের আশা দেখতে পারেন বাংলার ক্রীড়াপ্রেমীরা। রিচা, তিতাস, হৃষিতারা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।
ভ্রম সংশোধন: এই প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রকাশিত ছবিটি লক্ষ্মীরতন শুক্লর সৌজন্যে প্রাপ্ত। কৌশিক বিশ্বাস দাবি করেছেন ছবিটি তাঁর তোলা। অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।