দেশের হয়ে শেষ ম্যাচে উইকেট প্রাপ্তির উচ্ছ্বাস ঝুলনের। অভিনন্দন সতীর্থদের। ছবি: রয়টার্স
ঝুলন গোস্বামীর বিদায়ী সিরিজকে স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিলেন তাঁর সতীর্থরা। ইংল্যান্ডকে তাদের মাটিতেই এক দিনের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে নজির গড়লেন হরমনপ্রীত কউররা। শনিবার সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ১৬ রানে জিতল ভারত। হরমনদের ১৬৯ রানের জবাবে ইংল্যান্ড করল ১৫৩ রান।
ঝুলনের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে তাঁকে নিয়েই টস করতে যান হরমনপ্রীত। ৩৯ বছরের জোরে বোলারকেই কয়েন টস করতে দেন তিনি। শেষ ম্যাচের শুরুতেই প্রাক্তন অধিনায়ককে এ ভাবে সম্মানিত করলেন অধিনায়ক। টস অবশ্য জেতেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যামি জোনস। তিনি প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন। ইংল্যান্ডের বোলারদের দাপটে বড় রানের ইনিংস গড়তে পারল না ভারত। তাতেও অবশ্য জয় আটকাল না।
প্রথম দু’টি ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করে নেন হরমনরা। সে দিক থেকে শনিবারের ম্যাচ ছিল নিয়মরক্ষার। ম্যাচের ফল নয়, আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিলেন ঝুলনই। ভারতীয় মহিলা দলের প্রাক্তন অধিনায়ক কী করেন, সে দিকেই ছিল সকলের নজর। তিনি ব্যাট করতে নামার সময় ‘গার্ড অফ অনার’ দিলেন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা। আবার ভারত ফিল্ডিং করতে নামার সময় তাঁকে একই ভাবে ‘গার্ড অফ অনার’ দিলেন সতীর্থরা। শনিবারের লর্ডসে ভারত-ইংল্যান্ড এক দিনের ম্যাচের থেকে বেশিই চর্চায় ছিল ঝুলনের ক্রিকেট-জীবন। যা বারে বারে উঠে এসেছে ধারাভাষ্যকারদের কথায়। ইডেন থেকে লর্ডস— ঝুলনের দু’দশকের যাত্রা পথের নানা অলিগলিতে বিচরণ করেছেন তাঁরা। ঝুলন ব্যাট করতে যাওয়ার সময় বা নতুন বল হাতে আক্রমণ শুরুর সময় হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন উপস্থিত দর্শকরা। ঝুলন স্লিপে অনবদ্য ক্যাচ ধরে সোফি একলেস্টোনকে সাজঘরে ফেরাতেই উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে লর্ডসের গ্যালারিতে।
আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে তান্ডব চালানো অধিনায়ক হরমনপ্রীত রান পেলেন না ঝুলনের বিদায়ী ম্যাচে। ঝকঝকে অর্ধশতরান এল সহ-অধিনায়ক স্মৃতি মন্ধানার ব্যাট থেকে। মন্ধানার ৫০ রান ছাড়াও ভাল খেললেন দীপ্তি শর্মা। তিনি অপরাজিত থাকলেন ৬৮ রানে। এ ছাড়া পূজা বস্ত্রকারের ব্যাট থেকে এল ২২ রান। ভারতের ইনিংসে উল্লেখযোগ্য এ টুকুই। ইংল্যান্ডের কেট ক্রশ ২৬ রানে ৪ উইকেট নিলেন। দু’টি করে উইকেট নেন ফ্রে কেম্প এবং একলেস্টোন। প্রথমে ব্যাট করে ভারতের ইনিংস ৪৫.৪ ওভারে ১৬৯ রানেই শেষ হয়ে যায়।
গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ
জবাবে শুরু থেকেই ব্যাটিং বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ল ইংল্যান্ড। কিছুটা লড়াই করার চেষ্টা করলেন চার্লি ডিন। তাঁর ব্যাট থেকে এল ৪৭ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন তিনি। এ ছাড়া ওপেনার এমা ল্যাম্ব (২১), জোন্স (২৮) ছাড়া আয়োজকদের আর কোনও ব্যাটার বলার মতো রান করতে পারলেন না। নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারিয়ে কখনই জেতার আশা তৈরি করতে পারেননি জোন্সরা। ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ হল ১৫৩ রানে।
ইংরেজদের ইনিংস ভাঙতে মুখ্য ভূমিকা নিলেন রেনুকা ঠাকুর। আগের ম্যাচের মতোই তাঁকে খেলতে পারলেন না ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা। ২৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিলেন তিনি। রাজেশ্বরী গায়কোয়াড় ২ উইকেট নিলেন ৩৮ রানের বিনিময়ে। শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে উইকেট পেলেন ঝুলনও। ৩০ রান দিয়ে তাঁর সংগ্রহ ২ উইকেট। ১০ ওভার বল করে ৩ টি মেডেনও পেলেন চাকদহ এক্সপ্রেস। তাঁর করা ৬০টি বলের ৪৫টিতেই রান করতে পারলেন না ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা। ১০ ওভার শেষ হওয়ার পরও সতীর্থরা ছুটে এসে জড়িয়ে ধরেন ঝুলনকে। শেষ পর্যন্ত
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঝুলনের মোট উইকেট সংখ্যা হল ৩৫৫। দেশের হয়ে ১২টি টেস্ট, ২০৪টি এক দিনের ম্যাচ এবং ৬৮টি টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক খেলার পর থামলেন বাংলার জোরে বোলার।