হার্দিক পাণ্ড্য। — ফাইল চিত্র।
এক সময় ক্রিকেট মাঠে পাকিস্তানকে দেখতে পেলে জ্বলে উঠতেন সচিন তেন্ডুলকর। পরের দিকে সেই দায়িত্ব নেন বিরাট কোহলি। এ বার কি সেই উত্তরাধিকার হার্দিক পাণ্ড্যের হাতে? শনিবার এশিয়া কাপে তাঁর ইনিংস দেখলে তেমনটা মনে হতে বাধ্য। গত বছরের এশিয়া কাপে গ্রুপের ম্যাচে পাকিস্তানকে হারাতে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন হার্দিক। এ বারও দলকে বিপদের মুখ থেকে উদ্ধার করলেন তিনি। তাঁর ৮৭ রানের ইনিংস বিশ্বকাপের আগে স্বস্তি দিল রোহিত শর্মা, রাহুল দ্রাবিড়কে।
কিছু দিন আগে এই হার্দিককে নিয়েই অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। এমনিতে টি-টোয়েন্টি দলের পরবর্তী অধিনায়ক হিসাবে ভাবা হচ্ছে তাঁকে। কিন্তু এশিয়া কাপের আগে হার্দিককে সহ-অধিনায়কত্ব দেওয়ায় অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিশেষত আয়ারল্যান্ড সিরিজ়ে চোট সারিয়ে ফেরা যশপ্রীত বুমরা এশিয়া কাপের দলেও সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও কেন হার্দিককেই সহ-অধিনায়ক করা হল সেই প্রশ্ন উঠেছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ় সিরিজ়ে ব্যর্থ হওয়া হার্দিকের কাছে হয়তো নিজেকে প্রমাণ করার খুব কমই সুযোগ ছিল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই রান করে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিলেন হার্দিক।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শুরুতেই কেঁপে যায় ভারত। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, শুভমন গিল— দলের টপ অর্ডারের ব্যাটাররা পাক বোলারদের কাছে আত্মসমর্পণ করে ফিরে গিয়েছেন। কাউকে না কাউকে রান করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতেই হত। ঈশান আগে থেকেই ক্রিজে ছিলেন। হার্দিক এলেন ১৫তম ওভারে। প্রথম বলেই হ্যারিস রউফকে থার্ডম্যান দিয়ে চার মেরে নিজের মানসিকতা বুঝিয়ে দিলেন তিনি। তার পর থেকে যত ম্যাচ এগিয়েছে, ততই নিজেকে আরও ক্ষুরধার করেছেন হার্দিক।
ঈশান ক্রিজে থাকা পর্যন্ত হার্দিক দায়িত্ব নিয়েছিলেন একটা দিক ধরে রেখে আক্রমণ করে যাওয়ার। চেষ্টা করছিলেন ক্রিজ কামড়ে পড়ে থাকার, যাতে কোনও ভাবেই আরও একটা উইকেট ভারতকে না হারাতে হয়। সেই কাজে তিনি সফল। গত বারের এশিয়া কাপে খেলার সুবাদে পাক বোলারদের চেনাই ছিল। নিজের দক্ষতা এবং পরিণত মানসিকতা কাজে লাগিয়ে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে গেলেন হার্দিক।
তাঁর ইনিংসের গুরুত্ব শুধুমাত্র রান দেখে বোঝা সম্ভব নয়। গোটা ইনিংসকে নিখুঁত ভাবে সাজিয়েছেন তিনি। প্রয়োজনমতো কোনও বোলারকে বেছে নিয়ে আক্রমণ করেছেন। কখনও ধীরস্থির ভঙ্গিতে খেলেছেন। অকারণে মারকুটে ভঙ্গিতে দেখে উইকেট খোয়াতে চাননি।
ঈশান চলে যেতে তাঁর আক্রমণের তীব্রতা বাড়ল। ৪০তম ওভারে যে ভাবে তিনটি চার মারলেন রউফকে, তাতেই বোঝা গেল এক ইঞ্চি জায়গাও ছেড়ে দেবেন না প্রতিপক্ষকে। পরের ওভারেই আবার শান্ত। নাসিম শাহকে আক্রমণ করতে দিলেন না।
কিন্তু পরাজিত হলেন শাহিনের বুদ্ধির কাছে। ৪৪তম ওভারে বল করতে এসে অফস্টাম্পের বাইরে স্লোয়ার দিয়েছিলেন। হার্দিক বলের গতি বুঝতেই পারেননি। কোনও মতো ব্যাট ঠেকান। বল চলে যায় কভারে থাকা আগা সলমনের হাতে।