ক্ষোভ: অবসরের পরে মুখ খুললেন তারকা অফস্পিনার।
সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন বিতর্ক তৈরি করে দিলেন হরভজন সিংহ। প্রাক্তন ভারতীয় অফস্পিনার জানিয়ে দিয়েছেন, ভারতীয় দল থেকে তাঁর বাদ পড়ার নেপথ্যে দায়ী কয়েকজন বোর্ডকর্তা। তাঁদের সমর্থন করেছেন তৎকালীন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবনে ৭১১ উইকেটের মালিক তিনি। খেলেছেন ৩৬৭ ম্যাচ। অথচ তাঁর ক্রিকেটজীবনের শেষে যোগ্য সম্মান পাননি হরভজন। শনিবার বছরের প্রথম দিনে নতুন বিaতর্ক তৈরি করে দিলেন ভাজ্জি। তাঁর বাদ পড়ায় ধোনি ও বোর্ডকর্তাদের দায়ী করে।
এক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে হরভজন বলেছেন, ‘‘ভাগ্য বরাবর আমাকে সঙ্গ দিয়েছে। কিন্তু কিছু বিষয় আমার বিরুদ্ধে যাওয়ায় আজ এ ভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইতি টানতে হল।’’ যোগ করেন, ‘‘আমি যে ভাবে এগোচ্ছিলাম, তাতে আরও বেশি উইকেট নিয়ে অবসর নিতে পারতাম। মাত্র ৩১ বছর বয়সে চারশো উইকেটের মালিক হয়ে গিয়েছিলাম। আরও চার-পাঁচ বছর টানা খেললে কোন জায়গায় গিয়ে শেষ করতাম ধারণা আছে? নিশ্চিত ভাবে বলে দিতে পারি আরও ১০০-১৫০ উইকেট পেতাম।’’
এখানেই না থেমে হরভজন বলে চলেন, ‘‘আমি বাদ পড়ার সময় অধিনায়ক ছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। তবে আমি মনে করি, ধোনির হাতে পুরো ব্যাপারটা ছিল না। ভারতীয় বোর্ডের কয়েক জন কর্তা আমাকে চাইতেন না। ধোনি হয়তো তাঁদের সমর্থন করেছে।’’
ভাজ্জির আরও ব্যাখ্যা, ‘‘বোর্ডকর্তাদের উপরে অধিনায়ক আবার কথা বলতে পারে না। একজন অধিনায়ক যত বড়ই হোক, বোর্ডকর্তাদের বিরুদ্ধে তাদের যাওয়া সম্ভব নয়।’’
হরভজন তার পরেই ধোনির উদ্দেশ্যে এমন একটি মন্তব্য করেছেন, যা প্রাক্তন অধিনায়ক শোনার পরে হয়তো বিমর্ষ হয়ে পড়বেন। হরভজন বলেছেন, ‘‘বোর্ড ধোনিকে যা সমর্থন করেছে তা অনেক ক্রিকেটারই পায়নি। বাকি ক্রিকেটারেরা ধোনির মতো সমর্থন পেলে অনেক কিছু করে দেখাতে পারত। বিষয়টা তো এ রকম নয় যে বাকি ক্রিকেটারেরা বড় শট নিতে পারে না, অথবা ঠিক মতো কেউ বল করতে পারে না!’’
হরভজন চেয়েছিলেন ভারতের জার্সিতে শেষ বারের মতো একটি ম্যাচ খেলে অবসর ঘোষণা করতে। কিন্তু সেই সুযোগ তিনি পাননি। হরভজন বলে চলেন, ‘‘প্রত্যেক ক্রিকেটারই চায় ভারতীয় জার্সিতে শেষ বারের মতো খেলে অবসর নিতে। কিন্তু ভাগ্য সবাইকে সঙ্গ দেয় না। ভিভিএস লক্ষ্মণ, রাহুল দ্রাবিড়, বীরেন্দ্র সহবাগের মতো ক্রিকেটারেরাও দেশের জার্সিতে শেষ ম্যাচ খেলে অবসর ঘোষণা করতে পারেনি।’’
সম্প্রতি বোর্ড বনাম বিরাট কোহলি বিতর্ক নিয়েও প্রশ্ন করা হয় হরভজনকে। কারওকে দোষারোপ না করেই তিনি বলে দিলেন, ‘‘সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও বিরাট কোহলির মধ্যে কে সত্যি, কে মিথ্যে তা বলা যাচ্ছে না। আমার সঙ্গে কী ঘটেছে তা অনায়াসে বলে দিতে পারি। তা ছাড়া এই বিষয়টা আরও অন্য রকম ভাবে দেখা যেতে পারত। যা হয়েছে তা ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য একেবারেই ভাল উদাহরণ নয়। প্রত্যেক ক্রিকেটারেরই যোগ্য সম্মান পাওয়া উচিত।’’
হরভজন মনে করেন, তাঁর ক্রিকেট জীবনে ঘটে যাওয়া একাধিক ঘঠনা সমর্থকদের উত্তেজিত করে দিতে পারে। অন্যদের মতো তাঁরও একটি বায়োপিক চান হরভজন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার জীবন নিয়ে একটি সিনেমা অথবা ওয়েব সিরিজ় অনায়াসে হতে পারে। প্রত্যেকের জানা উচিত আমার সঙ্গে কী কী ঘটেছে। কী ভাবে আমি ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছি। কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে। কারা আমার সঙ্গে খারাপ করেছে, কারাই বা ভাল। এমনকি আমি কী রকম ছেলে ছিলাম, সেটাও আশা করি প্রত্যেকে জানতে পারবেন।’’ হরভজনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তাঁর বায়োপিকে খলনায়ক হিসেবে কাকে দেখানো হবে? তিনি নির্দ্বিধায় বলে দিলেন, ‘‘আমার জীবনে খলনায়ক প্রচুর। কাকে ছেড়ে কাকে দেখাব? প্রত্যেককে দেখাতে গেলে সিনেমা শেষ হবে না।’’
হরভজনের শেষ মন্তব্যের নেপথ্যেও লুকিয়ে আছে রহস্য। কাকে ইঙ্গিত করে তিনি শেষ কথাটা বললেন, তা হয়তো তিনি ছাড়া আর কেউই জানেন না।