আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক ধোনি। সেই দলের হয়েই খেলেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। —ফাইল চিত্র
বিজয় হজারে ট্রফিতে এক ওভারে সাতটি ছক্কা মেরেছেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। এত দিন ভারতীয়দের মধ্যে ছ’বলে ৬ ছক্কার নজির ছিল রবি শাস্ত্রী এবং যুবরাজ সিংহের। এই দু’জনকেও ছাপিয়ে গিয়েছেন রুতুরাজ। ভারতীয় ব্যাটারের এই কীর্তির পিছনে উঠে আসছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নাম। রুতুরাজ জানিয়েছেন, ধোনির জন্যই তাঁর মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। সেই কারণেই এতটা সাবলীল ভাবে ব্যাট করতে পারছেন তিনি।
সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে রুতুরাজ জানিয়েছেন, সাজঘরে কী ভাবে সবাইকে মানসিক ভাবে চাঙ্গা রাখতেন ধোনি। তিনি বলেছেন, ‘‘কোনও ম্যাচ হারলে সবাই ১৫ মিনিট চুপচাপ হয়ে যেত। কিন্তু ধোনি ভাই সাজঘরে এসে সবাইকে মনোবল দিতেন। বলতেন, খেলায় হার-জিত আছেই। মন খারাপ করার কিছু নেই। পরের ম্যাচের দিকে মন দাও। ধোনি ভাইয়ের কথার পরে সবার মানসিকতা ইতিবাচক হত। আমিও ধোনি ভাইয়ের কাছে শিখেছি। এখন অনেক বেশি সাবলীল ভাবে খেলি। সবসময় ইতিবাচক মানসিকতা রাখার চেষ্টা করি।’’
প্রতিটি ম্যাচ কোনও দল জিততে পারে না। বা এক জন ব্যাটার সব ম্যাচে ভাল রান করতে পারেন না। কিন্তু আসল বিষয় হল তার রান করার খিদে। ধোনি বার বার ক্রিকেটারদের সে কথা বলতেন। রুতুরাজ বলেছেন, ‘‘ধোনি ভাই নৈশভোজের সময় সবাইকে বুঝিয়ে দিতেন কাকে কী করতে হবে। সবাই সেটা করার চেষ্টা করত। কিন্তু কেউ ব্যর্থ হলেও তাঁর উপর ধোনি ভাই রাগ করতেন না। তাঁকে বোঝাতেন। মানসিক ভাবে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করতেন। আমি চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে শুরুর দিকে রান পাইনি। কিন্তু ধোনি ভাই ভরসা রেখেছিলেন। তার পরে সফল হয়েছি। এখনও মাঠে নামার সময় ধোনি ভাইয়ের কথাগুলো মাথায় রাখার চেষ্টা করি।’’
বিজয় হজারে ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে ১৫৯ বল খেলে অপরাজিত ২২০ রান করেছেন রুতুরাজ। ওপেন করতে নেমে প্রথম থেকেই আগ্রাসী মেজাজে ছিলেন তিনি। রুতুরাজকে থামানো যায়নি। অনবদ্য ইনিংসটি খেলার পথে মারেন ১০টি চার এবং ১৬টি ছক্কা। তার মধ্যে এক ওভারেই মারেন ৭টি ছক্কা। ম্যাচের ৪৯তম ওভারে এই কীর্তি গড়েন তিনি। বোলার ছিলেন উত্তরপ্রদেশের বাঁহাতি স্পিনার শিবা সিংহ। ছন্দে থাকা রুতুরাজ চাইছিলেন দলের রান যতটা সম্ভব বাড়িয়ে নিতে। সেই লক্ষ্যেই বড় শট খেলার চেষ্টা করেন চেন্নাই সুপার কিংসের ব্যাটার রুতুরাজ। প্রথম চারটি বল মাঠের বাইরে উড়িয়ে দেন দিন। পঞ্চম বলটি নো করেন শিবা। সেই বলও উড়ে যায় বাউন্ডারি লাইনের বাইরে। পরের বলটি ফ্রি-হিট পেয়ে রেয়াত করার কথা মাথতেই আনেননি বিধ্বংসী মেজাজে থাকা রুতুরাজ। সেই বলটিও সোজা পাঠিয়ে দেন সর্দার পটেল স্টেডিয়ামের বি গ্রাউন্ডের বাইরে। ওভারের সপ্তম বলও একই ফলাফল। পর পর সাত বলে ৭টি ছয় মেরে লিস্ট এ ক্রিকেটে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েন আইপিএলে ধোনির সতীর্থ।
বিশ্ব ক্রিকেটে এক ওভারে ৭টি ছক্কা মারার ঘটনা এই প্রথম ঘটল। এক ওভারে ৬টি ছক্কা মেরেছেন বেশ কয়েক জন ক্রিকেটার। ভারতের শাস্ত্রী ও যুবরাজের এক ওভারে ৬টি ছক্কা মারার নজির রয়েছে। বিশ্ব ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের গ্যারি সোবার্স, দক্ষিণ আফ্রিকার হার্সেল গিবস, ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের কায়রন পোলার্ড, আমেরিকার জসকরণ মালহোত্রা এক ওভারে ৬টি ছক্কা মেরেছেন। আফগানিস্তানের হজরতুল্লাহ জ়াজ়াইও ২০১৮ সালের একটি ম্যাচে এক ওভারে ৬টি ছক্কা মেরেছিলেন। যদিও একটি ওয়াইড-সহ সেই ওভারে বল ছিল সাতটি।