নেদারল্যান্ডসের ওপেনার বিক্রমজিৎ সিংহ। —ফাইল চিত্র
বৃহস্পতিবার সিডনিতে ভারতের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের হয়ে খেলতে নামলেন তিনি। বাঁ হাতি এই ওপেনারের দায়িত্ব দলকে ভাল শুরু দেওয়া। অথচ তিনি যে দলের বিরুদ্ধে খেলতে নামছেন সেই দলকেই সমর্থন করেন তাঁর বাবা, ঠাকুর্দা। কারণ, ভারতেই জন্মেছেন তাঁরা। সেই ভারতেরই পথের কাঁটা নেদারল্যান্ডসের ওপেনার বিক্রমজিৎ সিংহ। ঘটনাচক্রে, তিনি নিজেও জন্মেছেন পঞ্জাবে।
১৯৮৪ সালে ভারতে জরুরি অবস্থার সময় পঞ্জাবের জলন্ধরের কাছের একটি গ্রাম চিমা খুর্দ থেকে সপরিবার পালিয়েছিলেন খুশি চিমা। প্রথমে ট্রেনে চেপে দিল্লি। তার পরে সেখান থেকে সোজা নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম। সেখানে গিয়ে ট্যাক্সি চালাতে শুরু করেন খুশি। তখন তাঁর ছেলে হরপ্রীতের বয়স মাত্র পাঁচ। কেন তাঁরা দেশ ছাড়ছেন সেই সময় বুঝতে পারেননি হরপ্রীৎ। পরে বুঝেছেন, পরিবারের কথা ভেবে ভিটেমাটি ছেড়ে এসেছিলেন তাঁর বাবা। কিন্তু দেশের মায়া ছাড়তে পারেননি। তাই বার বার দেশে ফিরে এসেছেন তিনি।
ধীরে ধীরে ব্যবসা শুরু করেন খুশি। ছেলে হরপ্রীৎ বড় হওয়ার পরে তাঁর হাতে ব্যবসা ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসেন তিনি। সেখানেই জন্মেছেন বিক্রমজিৎ। সাত বছর বয়সে প্রথম আমস্টারডাম যান তিনি। এক ইংরেজি সংবাদপত্রে হরপ্রীৎ বলেছেন, ‘‘ছোটতে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে আমার খুব সমস্যা হয়েছিল। আমাকে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যও শুনতে হয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি অনেক ভাল। বিক্রমজিৎকে আমার মতো কষ্ট করতে হয়নি।’’
হরপ্রীৎ নিজে ক্রিকেট ভালবাসতেন। কিন্তু পরিবার চালানোর জন্য ব্যবসায় ঢুকে পড়েন। বিক্রমজিতেরও ছোট থেকে ক্রিকেটে উৎসাহ ছিল। ভারতে থাকতেই গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেটে হাতেখড়ি। আমস্টারডামে ফিরে যাওয়ার পরে একটি অনূর্ধ্ব-১২ প্রতিযোগিতায় নেদারল্যান্ডসের তৎকালীন অধিনায়ক পিটার বোরেনের চোখে পড়েন বিক্রমজিৎ। তাঁর অ্যাকাডেমিতে বিক্রমজিৎ অনুশীলন শুরু করেন।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে নেদারল্যান্ডসের ‘এ’ দলে সুযোগ পান বিক্রমজিৎ। দু’বছর পরে জাতীয় দলে খেলেন। ১৯ বছরের বিক্রমজিতের এখনও বাবার সঙ্গে খেলার কথা মনে পড়ে। বিক্রমজিৎ বলেন, ‘‘চিমা খুর্দে আমার ক্রিকেট শুরু হয়েছিল। নেদারল্যান্ডসে বাবা স্থানীয় প্রতিযোগিতায় খেলত। ১২ বছর বয়সে আমি বাবার সঙ্গে খেলেছি। তখন বাবা আমার অধিনায়ক ছিল।’’
কিন্তু ফুটবলপ্রধান নেদারল্যান্ডসে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা এখনও ততটা হয়নি। মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেখানে ক্রিকেটের মরসুম। তাই ছেলের অনুশীলনের জন্য আবার অন্য ব্যবস্থা করেন হরপ্রীৎ। এক সময়ের সতীর্থ অমিত উনিয়ালের চণ্ডীগড়ের অ্যাকাডেমিতে ছেলেকে পাঠান। ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ছ’মাস সেই অ্যাকাডেমিতে এসে প্রশিক্ষণ নিতেন বিক্রমজিৎ।
২০২১ সালে বিক্রমজিৎ পাকাপাকি ভাবে ফিরে আসেন জলন্ধরে। সেখানে ভারতের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতা ক্রিকেটার তরুবর কোহলির অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন তিনি। এই প্রসঙ্গে বিক্রমজিৎ বলেন, ‘‘তরুবরও আমস্টারডামের একটা ক্লাবে খেলত। তাই সেখানকার ক্রিকেট সম্পর্কে ওর ধারণা রয়েছে। তা ছাড়া জলন্ধরে থাকলে পরিবারের সঙ্গেও থাকা যায়। ঠাকুর্দার সঙ্গে সময় কাটাতে পারি। খেলার সময় নেদারল্যান্ডসে চলে যাই। বাকি সময় ভারতেই থাকি।’’
ঠাকুর্দাকে নিজের জার্সি উপহার দিয়েছেন বিক্রমজিৎ। নিজের ক্রিকেট জীবনের সব থেকে বড় ম্যাচে বাবা, ঠাকুর্দার আশীর্বাদ চান বিক্রমজিৎ। তিনি বলেন, ‘‘সারা জীবন ভারতকে সমর্থন করেছে ওরা। আশা করছি আমার জীবনের সব থেকে বড় ম্যাচে ওরা নেদারল্যান্ডসকেই সমর্থন করবে।’’