রাহুল দ্রাবিড়। —ফাইল চিত্র।
আইপিএলের মাঝেই ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে লড়াই চলছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে ঢোকার। একে অপরের সঙ্গে লড়াই করছেন জায়গা ছিনিয়ে নিতে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করার শেষ দিন ১ মে। অর্থাৎ আর কয়েক দিনের মধ্যেই দল ঘোষণা করে দেবে অজিত আগরকরের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিটি। দেখে নেওয়া যাক কোন কোন ক্রিকেটার সুযোগ পেতে পারেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে।
টপ অর্ডার
প্রথমেই লড়াই ওপেনারদের। রোহিত শর্মা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের অধিনায়ক। তিনি অবশ্যই ওপেন করবেন। তাঁর জায়গা পাকা। কিন্তু রোহিতের সঙ্গী কে হবেন? যদি আইপিএল দেখে দল বাছতে হয়, তাহলে অবশ্যই এই জায়গার দাবিদার বিরাট কোহলি। কিন্তু ভারতের হয়ে তিনি সাধারণত তিন নম্বরে ব্যাট করেন। ধরে নেওয়া যাক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সেটাই করবেন বিরাট। সেক্ষেত্রে রোহিতের সঙ্গী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন দু’জন, যশস্বী জয়সওয়াল এবং শুভমন গিল। প্রথম জন সদ্য মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে শতরান করেছেন। ৮ ম্যাচে ২২৫ রান করেছেন যশস্বী। অন্য দিকে, শুভমন ৮ ম্যাচে ২৯৮ রান করেছেন। স্ট্রাইক রেটের বিচারে এগিয়ে যশস্বী। সেই সঙ্গে তিনি বাঁহাতি। ফলে রোহিতের সঙ্গে যশস্বীকে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে শুভমন দলে থাকবেন। তিন জন ওপেনার নিয়েই আমেরিকা যাবে ভারত।
বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মা। —ফাইল চিত্র।
উইকেটরক্ষক
ভারতের মূল চিন্তা অবশ্যই উইকেটরক্ষক কে হবেন তা নিয়ে। সেই লড়াইয়ে রয়েছেন মোট ছ’জন। গাড়ি দুর্ঘটনার পর ক্রিকেটে ফিরেছেন ঋষভ পন্থ। আইপিএলে রানও করেছেন তিনি। ৮ ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ২৫৪ রান। দু’টি অর্ধশতরান রয়েছে। উইকেটরক্ষক হিসাবে ১১টি উইকেটের নেপথ্যে রয়েছে পন্থের হাত। তিনি যে ফর্মে রয়েছেন সেটা স্পষ্ট। বিশ্বকাপের দলে তাঁর জায়গা পাওয়া উচিত বলে মনে করছেন অনেকেই। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় মনে করেন পন্থকে অবশ্যই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে রাখা উচিত। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক বলেন, “পন্থ অবশ্যই নির্বাচকদের নজরে রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি ও বিশ্বকাপ খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ় যাবে।”
সৌরভের সঙ্গে যদিও একমত নন হরভজন সিংহ। ভারতের প্রাক্তন স্পিনারের মতে সঞ্জু স্যামসনকে বিশ্বকাপে নিয়ে যাওয়া উচিত। আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে খেলেন সঞ্জু। সেই দলের অধিনায়ক তিনি। হরভজন বলেন, “সঞ্জুকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে নেওয়া উচিত।” এক ধাপ এগিয়ে হরভজন বলেন, “রোহিতের পর ভারতের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসাবে তৈরি করা উচিত সঞ্জুকে।” রাজস্থানের হয়ে এ বারের আইপিএলে ৮ ম্যাচে ৩১৪ রান করেছেন তিনি। রয়েছে তিনটি অর্ধশতরান। স্ট্রাইক রেট ১৫২.৪৩। তবে আইপিএলে সঞ্জু ব্যাট করেন তিন নম্বরে ভারতের হয়ে সেটা সম্ভব নয়। তাই সঞ্জুকে দলে নিলে হয়তো দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসাবে রাখা হবে। প্রথম জন হয়তো পন্থ।
ঋষভ পন্থ। —ফাইল চিত্র।
এই দুই উইকেটরক্ষকের সঙ্গে লড়াইয়ে থাকবেন ঈশান কিশন, জীতেশ শর্মা, দীনেশ কার্তিক এবং লোকেশ রাহুল। এই চার জনের মধ্যে ঈশান এবং রাহুল ওপেন করেন। ফলে তাঁদের দলে নেওয়া কঠিন। আইপিএলে ঈশান ৮ ম্যাচে ১৯২ রান করেছেন। স্ট্রাইক রেট ১৬৮.৪২। একটি ম্যাচে অর্ধশতরান করেছেন তিনি। ওপেনার হিসাবে সে ভাবে রান পাচ্ছেন না। ফলে তাঁর জায়গা পাওয়া কঠিন হবে। সেই সঙ্গে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, ঈশানকে বার্ষিক চুক্তি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেট না খেলে আইপিএলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। সেটা ভাল ভাবে নেয়নি বোর্ড। তাঁকে দলে না নেওয়ার ক্ষেত্রে সেটাও একটা কারণ হতে পারে। বাদ পড়তে পারেন রাহুলও। কারণ তিনিও টি-টোয়েন্টিতে ওপেনার। আইপিএলে ৮ ম্যাচে ৩০২ রান করেছেন। স্ট্রাইক রেট ১৪১.১২। তবে রাহুলের সুবিধা তিনি একাধিক জায়গায় ব্যাট করার ক্ষমতা রাখেন। সেই সঙ্গে উইকেটরক্ষকের কাজও করতে পারেন। এমন এক জন ক্রিকেটারের ব্যাটে রান থাকায় দলে জায়গা হতেও পারে। দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসাবে হয়তো তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল পন্থের সঙ্গে। রাহুলকে নেওয়ার বড় সুবিধা, তিনি যেমন চার নম্বরে ব্যাট করতে পারবেন, তেমনই প্রয়োজনে ওপেন করতে পারবেন। সঞ্জু নীচের দিকে ব্যাট করতে খুব একটা স্বচ্ছন্দ নন। সেই যুক্তিতে জায়গা হতে পারে রাহুলের। তবে ৮ ম্যাচে ১২৮ রান করা জীতেশের জায়গা পাওয়া কঠিন। বাকিদের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছেন তিনি।
মিডল অর্ডার
ভারতের মিডল অর্ডারে জায়গা পাকা সূর্যকুমার যাদবের। চোট সারিয়ে আইপিএলে ফিরেই ঝড় তুলেছেন টি-টোয়েন্টির এক নম্বর ব্যাটার। পাঁচ ম্যাচে দু’টি অর্ধশতরান। ১৪০ রান করেছেন। স্ট্রাইক রেট ১৬৬.৬৭। তবে ধারাবাহিকতা দেখা যায়নি তাঁর ব্যাটে। একটি ম্যাচে শূন্য করেন, পরের ম্যাচে অর্ধশতরান। আবার পরের ম্যাচে শূন্য করেন। আইপিএলে এই ভাবেই এগোচ্ছে সূর্যকুমারের ইনিংস। তবে তিনি সুস্থ থাকলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে জায়গা পেতে সমস্যা হবে না। যদি রাহুলকে দলে নেওয়া হয়, তাহলে মিডল অর্ডারে আর কোনও ব্যাটারের জায়গা হয়তো হবে না। কারণ মিডল অর্ডারে জায়গা পাবেন অলরাউন্ডারেরা।
অলরাউন্ডার
এই জায়গায় সব থেকে বড় প্রশ্ন হার্দিক পাণ্ড্যকে নিয়ে। চোট সারিয়ে আইপিএলে ফিরে তাঁর ব্যাটে রান নেই, বল হাতে উইকেট নেই। বরং ব্যাট করার সময় প্রশ্ন উঠছে স্ট্রাইক রেট নিয়ে, বল করলে রান দেওয়া নিয়ে। আইপিএলের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে হার্দিককে দলে নেওয়া কঠিন। ৮ ম্যাচে হার্দিক করেছেন ১৫১ রান। স্ট্রাইক রেট ১৪২.৪৫, গড় ২১.৫৭। বল হাতে নিয়েছেন মাত্র ৪ উইকেট। ওভার প্রতি প্রায় ১১ রান করে দিচ্ছেন হার্দিক। এমন এক জন অলরাউন্ডারকে দলে নেওয়া উচিত? বাংলার কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল বলছেন, “ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নিয়মের কারণে অলরাউন্ডার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শিবম দুবে বল করছে না। রবীন্দ্র জাডেজা ছাড়া অলরাউন্ডার কোথায়? হার্দিকও বল হাতে তেমন প্রভাব ফেলতে পারছে না।”
হার্দিক পাণ্ড্য। —ফাইল চিত্র।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাই অলরাউন্ডার হিসাবে জাডেজার জায়গা পাকা হলেও হার্দিককে নিয়ে যাওয়া উচিত কি না সেই নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে হার্দিককে দলে না নিলে কাকে নেওয়া হবে সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সুযোগ পেতে পারেন দুবে। কিন্তু চেন্নাইয়ের হয়ে তাঁকে বল করতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে অলরাউন্ডার হিসাবে তিনি জায়গা পাবেন কি? ইরফান পাঠান বলেন, “হার্দিককে তখনই দলে নেওয়া উচিত, যখন ও নিয়মিত ভাল বল করবে। ব্যাটিংয়ের সঙ্গে ওর বোলিংটাও খুব জরুরি। চোটের পর ফিরে এসে বল হাতে সে ভাবে নজর কাড়তে পারছে না ও।” তাঁর মতে দুবে আইপিএলে বল না করলেও টি-টোয়েন্টি দলে ওকে রাখা উচিত। কারণ বিশ্বকাপে ওকে দিয়ে বল করানো সম্ভব বলে মনে করছেন পাঠান।
ফিনিশার
মহেন্দ্র সিংহ ধোনির পর ভারতীয় দলে ফিনিশারের অভাব ছিল। সেই অভাব টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ঢেকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন রিঙ্কু সিংহ। তিনি একের পর এক ম্যাচে ফিনিশারের দায়িত্ব পালন করেছেন। কেকেআরের হয়ে এ বারের আইপিএলেও ফর্মে রয়েছেন। তবে খুব বেশি বল খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে ৭ ম্যাচে ১০৭ রান করেছেন। স্ট্রাইক রেট ১৫৯.৭০। যে ক’টা বল খেলার সুযোগ পাচ্ছেন তাতেই বাউন্ডারি হাঁকানোর চেষ্টা করছেন। বিশ্বকাপে তাঁকে দলে রাখতেই হবে।
রিঙ্কু সিংহের সঙ্গে রোহিত শর্মা। —ফাইল চিত্র।
স্পিনার
জাডেজার সঙ্গী হিসাবে জায়গা পাকা কুলদীপ যাদবের। নির্বাচকদের প্রথম পছন্দ হবেন তিনিই। চোট সারিয়ে ফিরে এসেছেন কুলদীপ। ফলে তাঁর জায়গা পাওয়া নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন উঠতে পারে দ্বিতীয় জন কে হবেন? আইপিএলের ফর্ম দেখলে অবশ্যই জায়গা পাওয়া উচিত যুজবেন্দ্র চহালের। তাঁকে বার্ষিক চুক্তিতেই রাখেনি বোর্ড। এমন এক জন ক্রিকেটারকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে ফিরিয়ে আনা হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু এ বারের আইপিএলে ৮ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে বেগনি টুপির লড়াইয়ে রয়েছেন চহাল। এমন এক জন স্পিনারকে বিশ্বকাপের দলে না রাখা ভুল হতে পারে। তবে নির্বাচকদের পছন্দ হতে পারে রবি বিষ্ণোইকে। কিন্তু আইপিএলে উইকেট পাচ্ছেন না তিনি। আইপিএলের ফর্ম দেখে টি-টোয়েন্টির দল গড়লে অবশ্যই সুযোগ পাওয়া উচিত চহালের।
পেসার
ভারতীয় দলে পেসার হিসাবে প্রথম নাম অবশ্যই যশপ্রীত বুমরা। ৮ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়েছেন। ম্যাচের যে কোনও সময় বল করার ক্ষমতা রাখেন। তিনিই দেশের এই মুহূর্তে সেরা পেসার। বুমরাকে দল থেকে বাদ দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। তাঁর সঙ্গী হতে পারেন আরশদীপ সিংহ। ৮ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছেন। ফর্মে রয়েছেন বাঁহাতি পেসার। তবে প্রতি ওভারে ৯.৪ রান করে দিচ্ছেন তিনি। এই রান দেওয়াটা আটকাতে হবে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল বাছতে গিয়ে অবশ্যই আলোচনা হবে মহম্মদ সিরাজের নাম নিয়ে। কিন্তু ৭ ম্যাচে মাত্র ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ওভার প্রতি প্রায় ১১ রান করে দিচ্ছেন। চোট পেয়ে মহম্মদ শামি বাদ হয়ে গিয়েছেন। সেখানে বুমরার সঙ্গী হিসাবে সিরাজের সুযোগ পাওয়ার জায়গা রয়েছে। কিন্তু আইপিএলে যে ফর্মে রয়েছেন তিনি, তাতে সিরাজকে নিয়ে গেলে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে নির্বাচক কমিটিকে। বরং তৃতীয় পেসার হিসাবে দলে জায়গা পেতে পারেন সন্দীপ শর্মা। এখনও পর্যন্ত মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলেছেন। নিয়েছেন ৬ উইকেট। ডেথ ওভারে রান আটকানোর ক্ষমতা আছে তাঁর। ওভার প্রতি ৭ রানও দেন না সন্দীপ। তাই বুমরা এবং আরশদীপের সঙ্গে ১৫ জনের দলে জায়গা করে নিতে পারেন তিনি।
যশপ্রীত বুমরা। —ফাইল চিত্র।
ভারতের ১৫ জনের দল: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), যশস্বী জয়সওয়াল, বিরাট কোহলি, ঋষভ পন্থ (উইকেটরক্ষক), লোকেশ রাহুল (উইকেটরক্ষক), সূর্যকুমার যাদব, শিবম দুবে, রবীন্দ্র জাডেজা, রিঙ্কু সিংহ, যুজবেন্দ্র চহাল, কুলদীপ যাদব, যশপ্রীত বুমরা, আরশদীপ সিংহ এবং সন্দীপ শর্মা।
প্রথম একাদশ: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), যশস্বী জয়সওয়াল, বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব, ঋষভ পন্থ (উইকেটরক্ষক), রবীন্দ্র জাডেজা, রিঙ্কু সিংহ, যুজবেন্দ্র চহাল, যশপ্রীত বুমরা, কুলদীপ যাদব এবং আরশদীপ সিংহ।