বেন স্টোকস। —ফাইল চিত্র
কাঁধে চোট নিয়েই ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার ওলি পোপকে ফিল্ডিং করতে হবে। নইলে ১০ ফিল্ডারে খেলতে হবে ইংল্যান্ডকে। অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টে আম্পায়ারের এই নির্দেশে ক্ষুব্ধ ইংরেজ শিবির। তাদের দাবি, অনৈতিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্রিকেটের নিয়মে কোথাও এমনটা লেখা নেই।
লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন ফিল্ডিং করতে গিয়ে কাঁধে চোট পেয়েছিলেন পোপ। তার পরে আর ফিল্ডিং করেননি তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় দিন তিন নম্বরেই ব্যাট করতে নামেন তিনি। ৪২ রানও করেন। এই ঘটনার পরে আম্পায়ার মারাইস এরাসমাস বলেন, অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে পোপকে ফিল্ডিং করতে হবে। নইলে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামতে পারবেন না তিনি। পোপ ফিল্ডিং না করলে কোনও পরিবর্ত ফিল্ডারও পাবেন না বেন স্টোকসরা। ১০ জনকে নিয়ে ফিল্ডিং করতে হবে তাঁদের। এই নির্দেশে ক্ষুব্ধ স্টোকসরা।
ইংল্যান্ডের স্পিন বোলিং কোচ জীতেন পটেল বলেছেন, ‘‘পোপের কাঁধ এখনও ফুলে রয়েছে। ও ব্যাট করতে পারবে। কিন্তু ফিল্ডিং করা সহজ নয়। তাই আম্পায়ারের এই সিদ্ধান্ত ঠিক নয়। ওর কাঁধের চোট খতিয়ে দেখে তার পর আম্পায়ারের উচিত ছিল সিদ্ধান্ত নেওয়া। ফিল্ডিং করতে গিয়ে যদি পোপ আবার চোট পায় তা হলে হয়তো আর ব্যাট করে পারবে না ও। তখন আমরাই সমস্যায় পড়ব। কোনও ক্রিকেটার চোট পেলে পরিবর্ত ফিল্ডার নামানো যায়। তা হলে এ ক্ষেত্রে কোথায় সমস্যা হচ্ছে?’’
আম্পায়ারের এই সিদ্ধান্ত পোপের কেরিয়ারের ক্ষতি করে দিতে পারে বলেও মনে করছেন পটেল। তিনি বলেছেন, ‘‘এর আগেও দু’বার কাঁধে চোট পেয়েছে পোপ। আবার যদি ও চোট পায় তা হলে ওর কেরিয়ারের ক্ষতি হতে পারে। আর যদি পোপকে আমরা না নামাই তা হলে ১০ জনে ফিল্ডিং করতে হবে। এই নির্দেশের কোনও মানেই নেই।’’
অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৪১৬ রান করেছে অস্ট্রেলিয়া। শতরান করেছেন স্টিভ স্মিথ। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছে ৩২৫ রানে। প্রথম ইনিংসে ৯১ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস খেলছে অস্ট্রেলিয়া।
অ্যাশেজ সিরিজ়ে ১-০ এগিয়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম টেস্ট জিতেছে তারা। কিন্তু কেন এই সিরিজ়কে অ্যাশেজ বলা হয়? তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ০-১ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদ পত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।
সেই সময় কয়েকজন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাই ভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসে এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।