রোহিত শর্মা। —ফাইল চিত্র।
প্রশ্ন ছিল, ভারতের ঘূর্ণি উইকেটেও কি সফল হবে ইংল্যান্ডের ‘বাজ়বল’ (ইংল্যান্ডের টেস্ট কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ডাকনাম বাজ়। তাই ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক খেলার ধরনকে এই নামে ডাকা হয়)? উত্তর পাওয়া গেল প্রথম টেস্টেই। হায়দরাবাদে শুধু ভারতকে হারানো নয়, বাকি দলগুলিকে ভারতের ঘূর্ণি পিচে রোহিত শর্মাদের হারানোর পথ দেখিয়ে দিলেন বেন স্টোকসেরা। তবে কি ভারতের মাটিতে ভারতকে হারানোর একমাত্র অস্ত্র ‘বাজ়বল’? তেমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
কয়েকটা পরিসংখ্যান ইংল্যান্ডের এই টেস্ট জয়কে আরও মধুর করার জন্য যথেষ্ট। ২০১৩ সালের পর থেকে এই নিয়ে চতুর্থ বার দেশের মাটিতে হারল ভারত। প্রথম ইনিংসে ১০০-র বেশি রানে লিড নেওয়ার পরে দেশের মাটিতে এই প্রথম টেস্ট হারল ভারত। আগের তিনটি টেস্ট জয়ের ক্ষেত্রে পিচে এতটা ঘূর্ণি ছিল না। তাই হায়দরাবাদের মাটিতে ইংল্যান্ডের জয় আরও বেশি উল্লেখযোগ্য।
ইংল্যান্ড দলের দুই সেরা ক্রিকেটার বেন স্টোকস ও জো রুটের কিন্তু এই জয়ে কোনও কৃতিত্ব নেই। কারা দলকে জিতিয়েছেন? ব্যাট হাতে ওলি পোপ। ২০২১ সালের ভারত সফরে যাঁর সর্বোচ্চ রান ছিল ৩৪। অন্য দিকে বল হাতে টম হার্টলি। যিনি নিজের প্রথম টেস্ট খেললেন। ২০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা যে বাঁহাতি স্পিনারকে প্রধানত টি-টোয়েন্টির বোলার বলা হয়। লাল বলে সেই হার্টলিকে সামলাতে হিমশিম খেল ভারত। রোহিতদের দুই বাঁহাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাডেজা ও অক্ষর পটেলকে হার্টলি শিখিয়ে দিলেন এই ধরনের উইকেটে কোন লাইন, লেংথ ও কোন গতিতে বল করতে হবে।
স্টোকস ও রুটের অবদান ছাড়া প্রথম ইনিংসে ১৯০ রানে পিছিয়ে পড়ার পরেও ইংল্যান্ডের এই জয়ের নেপথ্যে একটাই কারণ উঠে আসছে, ‘বাজ়বল’। প্রথম ইনিংসে রান পাননি পোপ। দ্বিতীয় ইনিংসে টেকনিকেও কোনও বদল করেননি তিনি। বদল করেছিলেন মানসিকতায়। ভয় পাননি। অশ্বিন, জাডেজাদের বল ঘুরলেও উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকেননি। পালটা অস্ত্র বার করেছেন। সুইপ ও রিভার্স সুইপ মেরে বোলারদের ছন্দ নষ্ট করে দিয়েছেন। ফলে যে ভাবে প্রথম ইনিংসে ভারতীয় স্পিনারেরা ঠিক জায়গায় বল ফেলেছেন, দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁরা সেটা করতে পারেননি। পোপ বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভারতে ঘূর্ণি উইকেটে দু’ভাগে খেলা যায়। এক) ভাগ্যের হাতে নিজেকে ছেড়ে দেওয়া। দুই) ভয় না পেয়ে পালটা আক্রমণের পথে যাওয়া। পোপ দ্বিতীয় পথ নিয়েছেন। আর তাতেই ভারতের মাটিতে টেস্টে কোনও ইংরেজ ব্যাটারের সর্বাধিক রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। স্টোকস জানিয়ে দিয়েছেন, এটি ভারতের মাটিতে তাঁর দেখা কোনও বিদেশি ব্যাটারের সেরা ইনিংস।
হার্টলি ভারতের অস্ত্রেই তাদের ঘায়েল করেছেন। বল ঘুরলে যে সবারই খেলতে সমস্যা হয় সেটা তিনি জানতেন। তাই উইকেট লক্ষ্য করে বল করে গিয়েছেন। কখনও বল সোজা থেকেছে। কখনও ঘুরেছে। এমন একটি লেংখে বল করেছেন যেখানে বল ব্যাটে লাগাতে না পারলে ব্যাটার হয় বোল্ড হবেন, নইলে এলবিডব্লিউ।
‘বাজ়বল’-এর মন্ত্রেই ইংল্যান্ড ১৯০ রানে পিছিয়ে থাকার পরেও ভয় পায়নি। লড়াই করে গিয়েছে। আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেছে। বুঝিয়ে দিয়েছে, ভারতের মাটিতে ভয় পেয়ে খেললে কোনও দিন জেতা যাবে না। উল্টে আক্রমণের পথে গেলেও দল হারতে পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে জেতার সুযোগ রয়েছে। সেই সুযোগটাই নিয়েছেন স্টোকসেরা। বাকিদেরও একটা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।