ঋদ্ধিমান সাহা। —ফাইল চিত্র।
গত দু’বছর বাংলার ক্রিকেটে ছিলেন না ঋদ্ধিমান সাহা। বাংলা ছেড়ে ত্রিপুরায় চলে গিয়েছিলেন তিনি। এ বার আবার রাজ্যে ফিরে এসেন জাতীয় দলে খেলা এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। ঋদ্ধি জানিয়ে দিলেন, সুযোগ পেলে বাংলার হয়ে আবার রঞ্জি খেলতে চান তিনি।
মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে বেঙ্গল প্রো টি-টোয়েন্টি লিগ। সেখানে রাশমি মেদিনীপুর উইজ়ার্ডস দলের মার্কি ক্রিকেটার করা হয়েছে ঋদ্ধিকে। আগে মার্কি ক্রিকেটার ছিলেন অভিমন্যু ঈশ্বরণ। তিনি চোট পাওয়ায় পরিবর্ত হিসাবে জায়গা পেয়েছেন ঋদ্ধি। দলের অধিনায়ক সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। এই সুদীপও ঋদ্ধির মতোই বাংলা ছেড়ে ত্রিপুরা চলে গিয়েছিলেন। তিনিও ফিরে এসেছেন।
ইডেনে প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগে একটি সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিল রাশমি মেদিনীপুর উইজ়ার্ডস। সেখানেই ঋদ্ধি বললেন, “মাঝে দু’বছর ছিলাম না। আবার ফিরে এসেছি। যদি সুযোগ পাই বাংলার হয়ে ভাল খেলার চেষ্টা করব।” ইতিমধ্যেই ইডেনে অনুশীলন করেছেন ঋদ্ধি। গিয়েছেন নিজের পুরনো সাজঘরে। সেখানে অনেক বদল হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঋদ্ধি। তিনি বললেন, “শেষ যা দেখে গিয়েছিলাম, সেখান থেকে সাজঘর অনেক বদলে গিয়েছে। সাজঘরে যে চেয়ারগুলো দেখে গিয়েছিলাম, সেগুলো এখন নেই। ইডেনে হয়তো আইপিএলে খেলেছি। কিন্তু আইপিএলে খেলা আর ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা তো আলাদা। উইকেটে অনুশীলন করতে গেলে এখানকার পিচ আরও ভাল ভাবে বুঝতে পারব। ত্রিপুরা থেকে সবে দু’তিন দিন এসেছি। এখানকার উইকেটে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগবে।”
বাংলা ছেড়ে গেলেও তিনি কখনও বাংলার ক্রিকেটকে ভুলতে পারেননি বলে জানিয়েছেন ঋদ্ধি। অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ ছিল তাঁর। ঋদ্ধি বললেন, “বাংলা ছেড়ে চলে গেলেও সব সময় চেয়েছি বাংলা ভাল খেলুক। কারণ, এখানেই আমাদের জন্ম, বড় হওয়া। আমি আর সুদীপ ত্রিপুরায় গেলেও সারা ক্ষণ বাংলার ক্রিকেটের খবর রাখতাম। বাংলার সকলের সঙ্গে যোগাযোগ খুব ভাল ছিল। ওখানে চলে যাওয়ার মানে এই নয়, সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। বাংলা-ত্রিপুরা খেলার সময়ও সকলের সঙ্গে দেখা হত, গল্প হত। শুধু আমরা অন্য সাজঘরে থাকতাম। বাংলা শেষ কয়েক বছর খুব ভাল খেলেছে। আশা করছি আগামী দিনে দলের সাফল্যে আমরা সাহায্য করতে পারব।”
তাঁর বাংলায় ফেরার নেপথ্যে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে বড় কৃতিত্ব দিয়েছেন ঋদ্ধিমান। সঙ্গে স্ত্রীর নামও নিয়েছেন। ঋদ্ধি বললেন, “ বাংলায় ফিরে সৌরভের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমার বাংলায় ফেরার পিছনে আমার স্ত্রী ও সৌরভের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।” ইডেনে অনুশীলন শুরু করলেও এখনও কোনও কর্তার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়নি বলেই জানিয়েছেন ঋদ্ধি। যদিও সাংবাদিক বৈঠকের পরে বেঙ্গল প্রো টি-টোয়েন্টি লিগের উদ্বোধনের সময় আবার ইডেনে যান ঋদ্ধি। সেখানে বাংলার ক্রিকেট সংস্থার কোনও কর্তার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে কি না তা জানা যায়নি।
দলের বাকিদের সঙ্গে লক্ষ্মীরতন শুক্ল (একেবারে ডান দিকে) ও ঋদ্ধিমান সাহা (ডান দিক থেকে দ্বিতীয়)। — নিজস্ব চিত্র।
বাংলায় ফিরে আপাতত ঋদ্ধির লক্ষ্য বেঙ্গল প্রো টি-টোয়েন্টি লিগ। সেখানে ভাল করতে চান তিনি। ঋদ্ধি বললেন, “এখন লক্ষ্য বেঙ্গল প্রো টি-টোয়েন্টি লিগে ভাল খেলা। এখানে সুদীপ অধিনায়ক। লক্ষ্মীদা আছে। আরও অনেকে আছে। সবাই মিলে ভাল খেলার চেষ্টা করব। প্রথম লক্ষ্য নক আউট পর্যায়ে ওঠা। তার পরে সেখান থেকে সামনের দিকে তাকাব।”
মেদিনীপুরের দলের মেন্টর লক্ষ্মীরতন শুক্ল। ঘটনাচক্রে তিনি বাংলার রঞ্জি দলের কোচও। তবে আপাতত বাংলা নয়, লিগ নিয়েই বেশি ভাবছেন লক্ষ্মী। তিনি চান, এই লিগ থেকে আইপিএলে সুযোগ পান ক্রিকেটারেরা। ঋদ্ধিকে পাশে বসিয়ে লক্ষ্মী বললেন, “২০০৮ সালে যখন আইপিএল শুরু হয়েছিল তখন আমি, ঋদ্ধি ছিলাম। এখন বিভিন্ন রাজ্যে লিগ শুরু হয়েছে। সেখান থেকে আইপিএলে অনেকে সুযোগ পাচ্ছে। আইপিএলের দলগুলো এই সব লিগের দিকে নজর রাখে। আমার মনে হয়, বেঙ্গল প্রো টি-টোয়েন্টি লিগ একটা বড় সুযোগ। সিএবি খুব ভাল উদ্যোগ নিয়েছে। টেলিভিশন ও ডিজিটাল মাধ্যমে খেলা দেখা যাবে। এখানে ভাল খেললে রঞ্জি না খেলেও আইপিএলের দলে সুযোগ পাওয়া যাবে।”
সাংবাদিক বৈঠকে ঋদ্ধি ও লক্ষ্মী ছাড়াও ছিলেন দলের ডিরেক্টর শোভন ভট্টাচার্য, পুরুষদের দলের অধিনায়ক সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, মহিলাদের দলের অধিনায়ক কাশিস আগরওয়াল, পুরুষদের দলের কোচ অরিন্দম ঘোষ, মহিলাদের দলের কোচ জয়ন্ত ঘোষ দস্তিদার প্রমুখ।