ক্যামেরন গ্রিন। ছবি: সংগৃহীত।
আইপিএলের নিলামে তিনি ঝড় তুলেছিলেন। এর পরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বক্সিং ডে টেস্টে বল হাতে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। ব্যাট হাতেও করেছিলেন হাফসেঞ্চুরি। কিন্তু তার পরেই দুঃসংবাদ। হাতের আঙুলের চোট তাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শেষ টেস্ট থেকে ছিটকে দিল। কিন্তু ক্যামেরন গ্রিন তাঁর পরবর্তী লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছেন। যে করে হোক ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়ের আগে সুস্থ হয়ে ওঠা।
নতুন বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতেই ভারতের মাটিতে চার টেস্টের সিরিজ় খেলবে অস্ট্রেলিয়া। যা নিয়ে গ্রিন বলেছেন, ‘‘অনেকেই আমাকে ভারত সফরের কথা বলে। ভারত সফর মানসিক ভাবে কতটা কঠিন, শারীরিক ভাবে কতটা কঠিন চ্যালেঞ্জ— এ সব কথা খুব শুনেছি। আমাদের কাছে ভারত সফরটা দারুণ গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। এই সফরের চ্যালেঞ্জ সামলানোর জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত।’’ অতীতে ভারতের মাটিতে সাদা বলের সিরিজ় খেলতে এসে সফল হয়েছেন এই তরুণ।
২৩ বছরের গ্রিনকে নিয়ে সদ্য সমাপ্ত আইপিএল নিলামে লড়াই হয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স আর দিল্লি ক্যাপিটালসের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত সাড়ে ১৭ কোটি টাকার বিনিময়ে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স কিনে নেয় এই অস্ট্রেলীয় অলরাউন্ডারকে। আইপিএল খেলার আগে গ্রিন অবশ্য টেস্ট সিরিজ়ে নিজেকে মেলে ধরতে চান। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ওয়েবসাইটে বুধবার গ্রিন বলেছেন, ‘‘ভারত সফরের আগে আমি নিজেকে সুস্থ করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করব। ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ় খেলার জন্য আমিমুখিয়ে আছি।’’
মঙ্গলবার অনরিখ নখিয়ার একটি ডেলিভারিতে আঙুলে চোট পান গ্রিন। তাঁর তর্জনী ভেঙে যায়। সেই অবস্থায় বুধবার ব্যাট করে হাফসেঞ্চুরি করেন এই তরুণ। কিন্তু চোট পরীক্ষা করার পরে গ্রিনকে আপাতত বিশ্রামে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলীয় দল পরিচালন সমিতি। গ্রিন বলেছেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়া খেলছে আর আমি বাইরে বসে, এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। আমার অভিষেকের পরে এই প্রথম কোনও টেস্টে আমি বাইরে থাকব। ঘরে বসে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দেখতে কেমন যেন অদ্ভুত লাগবে।’’ যোগ করেন, ‘‘অস্ট্রেলীয় ড্রেসিংরুমের অংশ হতে পারাটা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা। যে কারণে সিডনি টেস্ট খেলতে না পারায় আমি রীতিমতো হতাশ।’’
কবে মাঠে ফিরবেন, সে ব্যাপারে অবশ্য কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না গ্রিন। তবে আশা করছেন, ৪ জানুয়ারি থেকে হওয়া সিডনি টেস্টেই শুধু তাঁকে বাইরে থাকতে হবে। ভাঙা আঙুল নিয়েই নখিয়া-কাগিসো রাবাডা-লুনগি এনগিডিদের বিরুদ্ধে ব্যাট করে গিয়েছেন গ্রিন, যাতে তাঁর সতীর্থ অ্যালেক্স ক্যারি সেঞ্চুরি করতে পারেন। সেই লক্ষ্য শেষমেশ সফল হয় গ্রিনের। ভাঙা আঙুল নিয়ে ব্যাট করা প্রসঙ্গে এই অলরাউন্ডার বলেছেন, ‘‘আমি যন্ত্রণাটা দেখাতে চাইনি। নতুন করে গার্ড নিই। কয়েক পা হেঁটে ক্রিজ়টাও দেখি। কিন্তু তখন বুঝতে পারছিলাম, আঙুলের হাড়টা সরে গিয়েছে।’’ পাশাপাশি মেলবোর্ন টেস্টে অব্যাহত অস্ট্রেলিয়ার দাপট। যদিও বুধবার দ্বিতীয় বার ব্যাট করতে নেমেই ওয়ার্নার বোল্ড হয়ে যান আগের দিনের রানে। অসাধারণ একটা ইয়র্কারে ওয়ার্নারের উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের সুযোগ পেয়ে যান অনরিখ নখিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকা পেসার তার ঠিক আগের বলে বোল্ড করেন গতকালের অপরাজিত ব্যাটসম্যান ট্র্যাভিস হেডকে (৫১)। কিন্তু হ্যাটট্রিক হয়নি।
তৃতীয় দিন সেরা ইনিংস খেলেন অস্ট্রেলীয় উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি। ১৪৯ বলে টেস্ট জীবনের প্রথম সেঞ্চুরি (১১১) করে মার্কো জ্যানসেনের বোলিংয়ে কট অ্যান্ড বোল্ড হন। মারেন ১৩টি চার। অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে ৫৭৫ রানে ডিক্লেয়ার করে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে ১৮৯-এর জবাবে। সফরকারী দলের দ্বিতীয় ইনিংসে রান ১৫-১। এখনও দক্ষিণ আফ্রিকা পিছিয়ে ৩৭১ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: দক্ষিণ আফ্রিকা ১৮৯ ও ১৫-১। অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস ৫৭৫-৮ ডি. (ওয়ার্নার ২০০, ক্যারি ১১১)।