সুযোগের আশায় অন্য রাজ্যে সুদীপ। —ফাইল চিত্র
দু’দিন আগে জানা গিয়েছিল বাংলা ছাড়ছেন সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। সোমবার ত্রিপুরাতে গিয়ে সইও করে আসেন তিনি। বাংলার বাঁহাতি ব্যাটার মঙ্গলবার শহরে ফেরেন। বুধবার তিনি বাংলার ক্রিকেট সংস্থায় গিয়ে ছাড়পত্র নিতে পারেন বলে জানালেন। ঋদ্ধিমান সাহার পর বাংলার আরও এক ক্রিকেটার ত্রিপুরাতে। আনন্দবাজার অনলাইনকে সুদীপ জানালেন তাঁর বাংলা ছাড়ার কারণ।
সুদীপের গলায় একরাশ অভিমান। ১২ বছর ধরে বাংলার হয়ে খেলেছেন তিনি। সুদীপের ক্রিকেট জীবনে একটা যুগের অবসান হল বলাই যায়। সেই সঙ্গে তাঁর জীবনের একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। যে ত্রিপুরার বিরুদ্ধে বাংলার হয়ে অভিষেক হয়েছিল সুদীপের, এ বার সেই দলের হয়েই খেলতে চলেছেন তিনি। এই ১২ বছরে বাংলার হয়ে একাধিক ম্যাচ জিতিয়েছেন, বাংলাকে বেশ কিছু ম্যাচে নেতৃত্বও দিয়েছেন সুদীপ। দীর্ঘ দিনের সেই সম্পর্ক হঠাৎ কেন ছিন্ন করলেন তিনি? সুদীপ বললেন, “আমি আরও বেশি ম্যাচ খেলতে চাই। বাংলায় সেই সুযোগটা পাচ্ছিলাম না। যেখানে সুযোগ পাব সেখানেই খেলব।”
শুধুই বেশি ম্যাচ খেলতে চাইছেন বলে অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছেন? সুদীপ বললেন, “কিছু তো ঘটেছে অবশ্যই। না হলে আর রাজ্য ছাড়ব কেন? কিছু কিছু জিনিস খারাপ লেগেছে। সেই কারণেই অন্য রাজ্যে যাচ্ছি।” ২০২০ সালে রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ৮১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন সুদীপ। তার পরেও এ বারের রঞ্জিতে তিনি মাত্র একটি ম্যাচে খেলার সুযোগ পান। সেই ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে ২৯ রান করেন সুদীপ। তার পর গোটা রঞ্জিতে আর একটি ম্যাচেও সুযোগ পাননি বাংলার অভিজ্ঞ বাঁহাতি ব্যাটার। সুদীপ বললেন, “রঞ্জি ফাইনালে রান করেছিলাম। পরের মরসুমে রঞ্জিতে সুযোগ পেলাম মাত্র একটি ম্যাচে। রান করেছি, দলে সুযোগ পেয়েছি। তার পরেও বসে থাকতে হয়েছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাকে নেতৃত্ব দিয়েছি। সেই মরসুমে দুটো অর্ধশতরান করেছি। তার পরেও দল থেকে বাদ পড়েছি।”
সুদীপ এবং ঋদ্ধি এ বার খেলবেন ত্রিপুরার জার্সিতে। —ফাইল চিত্র
সুযোগ না পাওয়ার অভিমান থেকেই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত? সুদীপ বললেন, “হ্যাঁ, একটা অভিমান তো রয়েছে। খেলার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। এমন একটা সময় ত্রিপুরা থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তখন ভাবনাচিন্তা শুরু করি। ঋদ্ধিদার সঙ্গে কথা বলি। তার পর সিদ্ধান্ত নিই ত্রিপুরার হয়ে খেলার।”
সুদীপ যে সময় বাংলার হয়ে খেলার সুযোগ না পাওয়ার কথা বললেন, সে সময় বাংলার কোচ অরুণ লাল। এই মরসুমে বাংলা দলের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে লক্ষ্মীরতন শুক্লর হাতে। সুদীপের অভিষেক ম্যাচে যিনি ছিলেন বাংলার অধিনায়ক। সেই লক্ষ্মীর সংসারেও থাকতে রাজি হলেন না? বাংলার বাঁহাতি ব্যাটার বললেন, “ছোটবেলা থেকে লক্ষ্মীদার খেলা দেখছি। খেলার সময় তার থেকে অনেক কিছু শিখেছি। কিন্তু কেউ দলের দায়িত্বে এল বলেই আমি খেলার সুযোগ পাব, এটা ভাবতে রাজি নই। আমি খেলেছি, রান করেছি। দলে সুযোগ পাওয়ার জন্য সেটাই এক মাত্র কারণ হওয়া উচিত।”
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৬৩টি ম্যাচ খেলে সুদীপের সংগ্রহ ৩৯৮৮ রান। রয়েছে ১০টি শতরান। লিস্ট এ ক্রিকেটে খেলেছেন ৫৬টি ম্যাচ। করেছেন ১৩২০ রান। ২০১৭ সালে ভারত এ দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও গিয়েছিলেন সুদীপ। ভারত গ্রিন দলের হয়ে খেলেছিলেন দলিপ ট্রফিতেও। ৩০ বছর বয়সের সুদীপ এ বার ভিন রাজ্যের হয়ে ব্যাট করতে নামবেন। সঙ্গী হবেন ঋদ্ধি।